আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+4 votes
7,069 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (72 points)
সমাজে আমরা নানা ধরনের বিয়ের নিয়ম নীতি দেখতে পাই যেগুলো আসলে অনেক নিয়ম-নীতি ইসলামে নেই এমন জিনিসও পালন করা হচ্ছে। এই নিয়ে আমি অনেক কনফিউশনে আছি আসলে  সঠিক নিয়ম কি।তাই, বিয়ের সঠিক নিয়ম / সুন্নত তরিকা সম্পর্কে সব বিস্তারিত জানতে চাই।

1 Answer

+2 votes
by (671,200 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


★প্রথমে শরয়ী নীতিমালা মেনে পাত্রি দেখবেঃ
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لَا تَعْلَمُ.

‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة، قال: كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فأتاه رجل فأخبره أنه تزوج امرأة من الأنصار، فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أنظرت إليها؟»، قال: لا، قال: «فاذهب فانظر إليها، فإن في أعين الأنصارشيئا»

তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পাশে বসা ছিলাম।একব্যক্তি এসে বলল, আমি আনসারি এক মহিলাকে বিয়ে করতে চাই।রাসূলুল্লাহ বললেন,তুমি কি পাত্রী দেখেছো?তিনি বললেন,না।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,যাও গিয়ে পাত্রী দেখে আসো।কেননা আনসারীদের চোখে নীল বা এ জাতীয় কিছু থাকে।
(সহীহ মুসলিম-১৪২৪)

পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।

আরো জানুনঃ 

পাত্রী দেখার মূলনীতির মধ্যে অন্যতম কিছু মূলনীতি হলোঃ

★মুবাহ বিষয় ব্যতীত অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না।
★মহিলা নরম ভাষায় কথা বলবে না।

,
★মোহরানা ঠিক করে বিবাহ করবে।
বিবাহের খুতবা দেওয়া হবে। 
মেয়ের পক্ষ থেকে তার পিতা বা অন্য কেউ শুধু বিবাহের  অনুমতি নিয়ে এসে ওকিল হয়ে সে (অথবা সে অন্য কাউকে এই দায়িত্ব দিলে সে) ২ জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে  সাক্ষীদের সামনে পাত্রকে মেয়ের পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবে,পাত্র সাক্ষীদের সামনে একবার কবুল বলবে।
,
তাহলেই বিবাহ হয়ে যাবে।
,
ছেলের বাসায় ওলিমা করা সুন্নাত। 

মেয়ের বাসায় এসবের আয়োজন করার নজির নেই।
,
তবে কাহারো চাপে নয়,বরং নিজ সন্তুষ্টি চিত্তে যদি তারা দাওয়াতের আয়োজন করে,তাহলে তা জায়েজ আছে।

হাদীস শরীফে এসেছে   

عن أنس بن مالک رضي اللّٰہ عنہ أن النبي صلی اللّٰہ علیہ وسلم رأی علی عبد الرحمٰن بن عوف أثر صفرۃ، فقال: ما ہذا؟ قال: إني تزوجت امرأۃ علی وزن نواۃ من ذہب، قال بارک اللّٰہ لک أولم ولو بشاۃ۔ (مشکاۃ المصابیح ۲۷۷)

রাসুল সাঃ বলেন ,,,, তুমি বকরি দিয়ে হলেও ওলিমা করো।

অন্যত্রে এসেছে 
عن أبي ہریرۃ رضي اللّٰہ عنہ قال: الولیمۃ حق وسنۃ، فمن دُعِيَ فلم یجب فقد عصی اللّٰہ ورسولہ۔ (مجمع الزوائد ۴؍۵۲)

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত,  ওলিমা সুন্নাত। 

,
বিস্তারিত জানুনঃ 
,
★কোনো গান বাজনা বাজাবেনা,অনৈসলামীক কোনো কাজ করা যাবেনা।
নারী পুরুষ দের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবে,সকলেই যেনো পর্দার বিধান মেনেই বিবাহ আসতে পারে,সেই জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে।    
,
উলামায়ে কেরামগন   
 বিবাহ শাদীতে কিছু কুপ্রথা ও কতিপয় কুসংস্কার হিসেবে যেগুলো উল্লেখ করেছেন,সেগুলো অবশ্যই বর্জনীয়।
১) মেয়ের ইযিন (অনুমত)  আনার জন্য ছেলেপক্ষ সাক্ষী পাঠিয়ে থাকে, শরীয়াতের দৃষ্টিতে এর কোন প্রয়োজন নেই।
এতে পর্দা বিধান খেলাফ হলে তাহা হারাম।
,
২) বিবাহের সময় অনেকে বর-কনের দ্বারা তিনবার করে ইজাব কবূল পাঠ করিয়ে থাকে (একবার বললেই হবে) এবং পরে তাদের দ্বারা আমীন বলানো হয়, শরীয়াতে এর কোন ভিত্তি নেই।

৩) ইজাব কবূলের মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর মজলিসে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে বর যে সালাম করে থাকে তারও কোন ভিত্তি নেই।

৪) ঝগড়া-ফাসাদের আশংকা থাকা সত্ত্বেও খেজুর ছিটানোকে জরুরী মনে করা হয়। অথচ এ সম্পর্কিত হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যঈফ বলেছেন। (বিশৃঙ্খলা না হলে সমস্যা নেই)।

★বরের নিকট কনে পক্ষের লোকেরা হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রের পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর যবরদস্তী করে আদায় করে থাকে এটা না জায়েয।

★ অনেক জায়গায় গেইট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে দেয়া হয় এবং টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এটাও একটা গর্হিত কাজ।

★খাওয়া দাওয়া শেষে কনে পক্ষের লোকেরা বরের হাত ধোয়ায়। পরে হাত ধোয়ানো বাবদ টাকা দাবী করে। অনেক জায়গায় এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এটা একেবারেই অনুচিত। মূলতঃ এসব হিন্দুয়ানী প্রথা। দীর্ঘদিন যাবত হিন্দুদের সাথে বসবাস করার কারণে আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারগুলি অনুপ্রবেশ করেছে।

★বিবাহ পড়ানোর আগে বা পরে যৌতুকের বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রকাশ্য মজলিসে সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটাও অন্যায় ও নির্লজ্জতার কাজ।


★বিবাহ করে আনার পর শ্বশুর বাড়ীতে নববধূকে বিভিন্ন কায়দায় বরণ করা হয়। কোথাও ধান, দুবলা ঘাস, দুধের স্বর ইত্যাদি দিয়ে বরণ করা হয় এবং নববধূর চেহারা সকলকে দেখানো হয়; এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। কোন মুসলমানের জন্য এসব করা জায়েয নেই।

 অনেক জায়গায় মেয়ের বিয়ের আগের দিন আর কোথাও মেয়ে শ্বশুর বাড়ী যাওয়ার পরের দিন মেয়ের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ-মিষ্টি ইত্যাদি পাঠানো হয়ে থাকে। কোথাও এটাকে চৌথি বলা হয়। এটাও বিজাতীয় নাজায়েয প্রথা।
,
তবে চাপে নয়,বরং সন্তুষ্টি চিত্তে পাঠাইলে সেটি জায়েজ।
,
  
★ ঈদের সময় বা অন্য কোন মৌসুমে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে চাল, আটা, ময়দা, পিঠা ইত্যাদি পাঠানো এবং এ প্রচলনকে জরুরী মনে করার প্রথা অনেক জায়গায় চালু আছে। আবার অনেক জায়গায় আনুষ্ঠানিকভাবে জামাইকে এবং তার ভাই-বোনদেরকে কাপড়-চোপড় দেয়ার প্রথা আছে। এমনকি এটাকে এতটাই জরুরী মনে করা হয় যে, ঋণ করে হলেও তা দিতে হয়। এটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়, তাই এসব বর্জনীয়।
,
তবে চাপে নয়,বরং সন্তুষ্টি চিত্তে পাঠাইলে সেটি জায়েজ।
,
★ আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠানে বেগানা মহিলাদের সাজ-সজ্জা করে নিজেকে বিকশিত করে একত্রিত হতে দেখা যায় এবং যুবক যুবতীদের অবাধ মেলা-মেশা করতেও দেখা যায়। এধরনের বেপর্দা আর বেহায়াপনার কারণে উক্ত মজলিসে উপস্থিত নারী পুরুষ সকলেই গুনাহগার হবে।

★বিবাহ উপলক্ষে গান-বাজনা, ভিডিও, ভিসিআর ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করেছে। আর কোন কোন এলাকায় তো যুবতী তরুণী মেয়েরা একত্রিত হয়ে নাচ গানও করে থাকে। শরীয়াতের দৃষ্টিতে এসব হারাম ও নাজায়েয।

★আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠান মানেই গুনাহের ছড়াছড়ি। এমন এমন গুনাহ্ সেখানে সংঘটিত হয় যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছবি তোলা ও ভিডিও করা। শরীয়াতের দৃষ্টিতে কোন প্রাণীর ছবি তোলা চাই ক্যামেরার মাধ্যমে হোক কিংবা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক বা অংকন করা হোক সবই হারাম।

★ বিবাহের পরে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তে মেয়ের বাড়ীতে পাড়া-প্রতিবেশী মেয়েরা একত্রিত হয়, আর বরকে অন্দর মহলে এনে সকলে মিলে হৈ হুল্লা করে তার মুখ দর্শন করে। মেয়েরা হাসি মজাক করে বিভিন্ন উপায়ে নতুন দুলাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আর নির্লজ্জ হাসি তামাশায় মেতে উঠে। এধরনের বেপর্দেগী শরীয়াতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

★ অনেক জায়গায় প্রথা চালু আছে যে, নববধূকে বর নিজে বা তার ভগ্নীপতি অথবা তার ছোট ভাই পালকী বা গাড়ী থেকে নামিয়ে কোলে করে ঘরে নেয়। তারপর উপস্থিত মহল্লাবাসীর সামনে নববধূর মুখ খুলে দেখানো হয়। এ সকল কাজ হারাম এবং নাজায়েয।

★আমাদের সমাজে এংগেজমেন্টের যে রীতিনীতি ইসলাম তা সমর্থন করেনা, যা এক ধরনের বিধর্মীদের প্রথা। (বিবাহের পূর্বে কথাবার্তার দিন কনের হাতে আংটি পরানো)।

★ইসলামে কুলক্ষন বলতে কিছু নেই আর কুলক্ষন ভাবা শিরক।
তাই কোনো কুলক্ষন আছে বলে মানা যাবেনা।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...