আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
326 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (10 points)
closed by

শায়খ আসসালামুআলাইকুম,

আমি কেন জানি কোন কাজে সফলতা পাইনা। আমার মনের ইচ্ছা বা চাওয়া গুলো কেন জানি পূরণ হয় না। আমার মস্তিষ্ক আমাকে যতটুকু মনে করিয়ে দেয় আমি আল্লাহর কাছে আজ অব্দি যত দুআ করেছি একটাও কবুল হয়নি। কোনদিন কোন কাজে সফলতা পাইনি। কোন কাজ শুরু করে তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আমার সবকিছুর মধ্যে বাধা আসে। হ্যাঁ আমি আল্লাহর গুনাহগার বান্দা। তারপরও আল্লাহর কাছে দুআ করি। 

ফলাফল:

  • নামাযে কোন মজা পাইনা। নামাযে অনিয়মিত।
  • দুআর প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসছে।
  • ইসলামিক জীবনযাপন করতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা।
  • শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে পারছিনা।
  • জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।
  • দুনিয়া ভাল লাগেনা। আশেপাশের কিছুই ভাল লাগেনা।
  • মাঝে মাঝে খারাপ আচরণ করি।

 বিষণ্ণতা নামক কঠিন ব্যাধি আমাকে গিলে খাচ্ছে। 

  মুহতারাম, আল্লাহ কি আমার উপর কোনো কারণে অসন্তুষ্ট? আমার দোআ কেন কবুল করেন না আল্লাহ? আমার জীবনে এতো সমস্যা কেন? আমিতো আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু পারছিনা। আমাকে কিছু সমাধান দিন। আমি যেন এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি তাই আপনার নিকট দুআ চাইছি।  

closed with the note: I've got my answer.

1 Answer

0 votes
by (707,840 points)

বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-

দু'আ করা পৃথক একটি ইবাদত।এমনকি দু'আ কে সমস্ত ইবাদতের মগজ হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে- হযরত নু'মান ইবনে বশির রাযি থেকে বর্ণিত,
عن النعمان بن بشير قال: قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - " «الدعاء هو العبادة " ثم قرأ: {وقال ربكم ادعوني أستجب لكم} [غافر: ٦٠] » ) رواه أحمد والترمذي، وأبو داود، والنسائي، وابن ماجه

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,দু'আ পৃথক একটি ইবাদত।অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃ নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন,' এবং তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো,আমি তোমাদের ডাকের জবাব দেবো'। (সূরা গাফির-৬০)মিশকাতুল মাসাবিহ-২২৩০।

এবং হযরত আনাস রাযি থেকে বর্ণিত,
وعن أنس، قال: قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - " «الدعاء مخ العبادة» " (رواه الترمذي)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, দু'আ সমস্ত ইবাদতের মগজ।মিশকাতুল মাসাবিহ-২২৩১

দু'আ কবুল হয়নি মনে করে দু'আকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।বরং ধারাবাহিক লাগাতার দু'আ করতে হবে, তবেই কবুলের সম্ভাবনা থাকবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: «لا يزال يستجاب للعبد، ما لم يدع بإثم أو قطيعة رحم، ما لم يستعجل» قيل: يا رسول الله ما الاستعجال؟ قال: يقول: «قد دعوت وقد دعوت، فلم أر يستجيب لي، فيستحسر عند ذلك ويدع الدعاء»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, প্রত্যেক বান্দার দু'আ ইস্তে'যাল না করার শর্তে ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয়ে থাকে,যতক্ষণ না সে কোনো গোনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক-কে বিচ্ছিন্ন করার দু'আ করে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম রাযি জিজ্ঞাসা করলেন।ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইস্তে'যাল অর্থ কি?রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, ইস্তে'যাল অর্থ হল, বান্দা কর্তৃক এমন কথা উচ্ছারিত হওয়া বা বলা যে, আমি তো দু'আ করতেই থাকলাম,করতেই থাকলাম, অথচ আমার দু'আ কবুল হয়েছে,তা তো কখনো দেখিনি। সুতরাং তখনই সে আফসোস করতে থাকে এবং দু'আ কে ছেড়ে দেয়।(ফালাফল হিসেবে তার দু'আ আর কবুল হয় না)সহীহ মুসলিম-২৭৩৫,মিশকাতুল মাসাবিহ২২২৭

দু'আ কবুল হওয়ার জন্য দু'আ কারীর ইতিবাচক মনোভাব এবং কবুল হওয়ার পূর্ণ বিশ্বাস তার অন্তরে থাকতে হবে।যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
وعنه، قال: قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - " «ادعوا الله وأنتم موقنون بالإجابة واعلموا أن الله لا يستجيب دعاء من قلب غافل لاه» " (رواه الترمذي، وقال: هذا حديث غريب) .
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,তোমরা আল্লাহকে এমন অবস্থায় ডাকো যে,দু'আ কবুলের সম্পর্কে তোমাদের অন্তরে পূর্ণ ইয়াকিন-বিশ্বাস রয়েছে। জেনে রাখো,আল্লাহ তা'আলা গাফিল এবং খেল-তামাশকারী বান্দার পক্ষ্য থেকে কখনো দু'আ কবুল করেন না। মিশকাতুল মাসাবিহ-২২৪১

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি থেকে বর্ণিত,
(وعن أبي سعيد الخدري - رضي الله عنه - أن النبي - صلى الله عليه وسلم - قال: " «ما من مسلم يدعو بدعوة ليس فيها إثم ولا قطيعة رحم إلا أعطاه الله بها إحدى ثلاث: إما أن يعجل له دعوته، وإما أن يدخرها له في الآخرة، وإما أن يصرف عنه من السوء مثلها " قالوا: إذا نكثر، قال: " الله أكثر» " (رواه أحمد) .
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,কোনো মুসলমান যদি এমন প্রকারের দু'আ করে, যাতে গোনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতার প্রসঙ্গ উল্লেখ না থাকে, তাহলে তিনটি প্রকারের যেকোনো এক প্রকার প্রতিদান আল্লাহ তাকে দান করবেন।(১)হয়তো আল্লাহ তা'আলা অতিসত্বর তার দু'আ-কে কবুল করে ফেলবেন।
(২)নতুবা আখেরাতের জন্য সেই দু'আকে সংরক্ষিত করে রাখবেন।(দুনিয়াতে সেই দু'আ কবুল করা তার জন্য মঙ্গলজনক নয়,সেইজন্য আখেরাতে দিবেন)(৩)কিংবা সেই পরিমাণ কোনো মন্দ জিনিষ তার থেকে ফিরিয়ে রাখবেন।সাহাবায়ে কেরাম বললেন,তাহলে আমরা অবশ্যই বেশী বেশী করে দু'আ করবো। রাসূলুল্লাহ সাঃ  বললেন, অাল্লাহও অধিক অধিক দু'আ কবুল কারী এবং দানকারী।(সুতরাং তোমরা বেশী বেশী দু'আ করলে আল্লাহও বেশী বেশী দিবেন)মিশকাতুল মাসাবিহ-২২৫৯

সকল বিষয়ে-ই অাল্লাহর নিকট দু'আ করতে হবে।আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করতে হবে।
হযরত আনাস রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أنس - رضي الله عنه - قال: قال رسول الله: " «ليسأل أحدكم ربه حاجته كلها، حتى يسأله شسع نعله إذا انقطع» "
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, মানুষ যেন সকল বিষয়ে তার রবের নিকট দু'আ করে,এমনকি যদি তার জুতার ফিতা ছিড়ে যায়, তখনও যেন সে এ সম্পর্কে (প্রথমে) আল্লাহর নিকট সাহায্য চায়(অতঃপর ফিতা লাগানোর চেষ্টা করে)।মিশকাতুল মাসাবিহ-২২৫১।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে এটাই সাব্যস্ত যে, দু'আ করা পৃথক একটি ইবাদত।বান্দা দু'আ করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।এবং দু'আ কারী ব্যক্তিকেই আল্লাহ পছন্দ করেন।বান্দা দু'আ না করলে অাল্লাহ পাক অসন্তুষ্ট হন।আল্লাহ পাক অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছুই জানেন।তাই কোন জিনিষটি কার জন্য কখন উপকারী হবে,অাল্লাহ পাক সেটা ভালো করেই জানেন।কোনো জিনিষ বান্দার জন্য যখন উপকারী হবে,সেই জিনিষ অাল্লাহ পাক তখন উক্ত বান্দাকে দান করেন।নতুবা তার উপকারী কিছু তাকে দান করেন।সেজন্য আমাদের উচিৎ বেশী বেশী করো দু'আ করা।কেননা মু'মিনের কোনো দু'আ-ই বৃথা যায় না,বরং সকল দু'আই কবুল হয়।কবুলের ধরণ হয়তো ভিন্ন হবে বা একটু দেড়িতে কবুল হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...