আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
503 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (62 points)
edited by
একজনের প্রশ্ন:
আমার হাসবেন্ডের সাথে অনেকদিন ধরে বিভিন্নরকম সমস্যা লেগে আছে। হুটহাট কোনো একটা বিষয়ে হুট করেই কথাবার্তা অফ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো ঝগড়াঝাঁটি, তর্কাতর্কি হয় না। কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ দুজনই এরকম  চুপচাপ থাকার পর আস্তেধীরে সম্পর্কটা একসময় ঠিক হয়। কিন্তু আবার এরকম হুটহাট এসব সমস্যা লেগেই থাকে। তো যখন এরকম সমস্যা হয় দেখা যায় আমাদের মধ্যে কোনোপ্রকার ইন্টিমেসিও ঘটে না। একদমই বলতে গেলে আলাদাই থাকি তখন।
এরকম চলতে চলতে একপর্যায়ে এখন এমন একটা অবস্থা যে দুজনের মধ্যে এই সমস্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে। আর দুজনই বিরক্ত, অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি।
এখন,  আমারো ইচ্ছে হচ্ছে না আবার সম্পর্কটা ঠিক হোক, আবার কথাবার্তা, অন্তরঙ্গতা ফিরে আসুক। কারণ, দুদিন পর সেটা আবার চলে যায় আবারো সমস্যা হয়, আবারো নিজেকে, নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে বেগ পেতে হয়। দিনরাত কান্নাকাটি করতে আর ভালো লাগে না।
কিন্তু এদিকে তার ফিজিক্যাল নিডস পূরণ না করলে তো আমার রব আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হচ্ছেন, ফেরেশতারা বদদোয়া করবেন এটা আমার খুব ভয় হয়।
তাই আমি চাচ্ছিলাম, আমি তার হক্ব আদায় করি, তার ফিজিক্যাল নিডস পূরণ করি, তার সাথে নূন্যতম কথা যেটা প্রয়োজনে বলতেই হবে সেটাই বলি, তার দায়িত্বগুলো যেমন:তার খাওয়াদাওয়া, ঘরের কাজ এসবকিছু আমি পূরণ করি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর ভয়েই আমি এই কাজগুলো করতে চাই। নয়তো মন থেকে আমার আর ইচ্ছে হয় না আমি তার কাছে যাই।
কারণ, বারবার আমি আর আঘাত নিতে পারছি না। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। দিনরাত কান্নাকাটি,  মনের কষ্ট এসব আমার অন্যান্য কাজে,  পড়াশোনায়, আমলে অনেক ব্যাঘাত ঘটায়। আর অতিরিক্ত কথা,  অতিরিক্ত ক্লোজ হলে দেখা যায় আবারও এমন কিছু না কিছু ঘটছে যেটা আমাদের সম্পর্কে আবারো ভাটা ফেলছে। তাই আর আগের মতো হতে চাচ্ছি না। শুধু আল্লাহর ভয়ে আমার উপর তার হক্বটুকু আদায় করতে চাই। যদিও আমার কষ্ট হচ্ছে যে, মানুষটার সাথে সম্পর্কটা কোনোভাবেই ইজি হচ্ছে না, আগের মতো মধুর হচ্ছে না। রোবটের মতো একটা সংসার করার কষ্ট দেড় বছর ধরে পেয়ে আসছি।
এখন আমাকে কি বলবেন আমি যেটা চাচ্ছি সেটাই কি ইনাফ হবে? নাকি আল্লাহ নারাজ হবেন? আমি তো সেসব আল্লাহর ভয়েই করে যেতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (582,600 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
যে নারী স্বামীর একান্ত অনুগতা ও পতিব্রতা সে নারীর বড় মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.
‘‘রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।

خَيْرُ النِّساءِ الَّتِي تَسُرُّهُ إذا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إذا أمَرَ ولا تُخالِفُهُ في نَفْسِها ولا مالِها بِما يَكْرَهُ.
‘‘শ্রেষ্ঠ রমণী সেই, যার প্রতি তার স্বামী দৃকপাত করলে সে তাকে খোশ করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং তার জীবন ও সম্পদে স্বামীর অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না।’’

স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’’

لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا.
‘‘যদি আমি কাউকে কারো জন্য সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।’’

مِن حَقِّ الزَّوجِ عَلَى زَوجَتِهِ إن سَالَ دَماً وَقَيحاً وَصَديداً فَلَحَسَتهُ بِلِسَانِهَا مَا أَدَّتْ حَقَّهُ.

‘‘স্ত্রীর কাছে স্বামীর এমন অধিকার আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেঁটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না।’’

...فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَوْ تَعْلَمُ مَا حَقُّ زَوْجِهَا ، لَمْ تَزَلْ قَائِمَةً مَا حَضَرَ غَدَاؤُهُ وَعَشَاؤُهُ.
‘‘মহিলা যদি নিজ স্বামীর হক (যথার্থরূপে) জানতো, তাহলে তার দুপুর অথবা রাতের খাবার খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত সে (তার পাশে) দাঁড়িয়ে থাকতো।’’

...فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا كُلِّهِ حَتَّى إِنْ لَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ أَعْطَتْهُ أَوْ قَالَ لَمْ تَمْنَعْهُ.
‘‘তাঁর শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও যদি স্বামী তার মিলন চায় তবে সে বাধা দিতে পারবে না।’’

اثْنَانِ لا تُجَاوِزُ صَلاتُهُمَا رُءُوسَهُمَا : عَبْدٌ آبِقٌ مِنْ مَوَالِيهِ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِمْ ، وَامْرَأَةٌ عَصَتْ زَوْجَهَا حَتَّى تَرْجِعَ.
‘‘দুই ব্যক্তির নামায তাদের মাথা অতিক্রম করে না (কবুল হয় না) ; সেই ক্রীতদাস যে তার প্রভুর নিকট থেকে পলায়ন করেছে, সে তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত (নামায কবুল হয় না।)’’

ثَلاَثَةٌ لاَ يُقبَلُ منهُم صَلاَةٌ وَلاَ تَصعُدُ إلَى السَّمَاءِ وَلاَ تَجَاوزُ رُءُوسُهُم : رَجُلٌ أَمَّ قَوماً وَهُم لَه كَارِهُونَ ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤمَر ، وَامرَأَةُ دَعَاهَا زَوجُهَا من اللَّيلِ فَأَبَتْ عَلَيه.
‘‘তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়।

إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.
‘‘ স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’

স্বামীর আনুগত্য স্ত্রীর জন্য আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য। সুতরাং স্বামীকে সন্তুষ্ট করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। বলাই বাহুল্য যে, অধিকাংশ তালাক ও দ্বিতীয় বিবাহের কারণ হল স্বামীর আহ্বানে স্ত্রীর যথাসময়ে সাড়া না দেওয়া। উক্ত অধিকার পালনেই স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন মজবুত ও মধুর হয়ে গড়ে উঠে, নচেৎ না।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
বেশ ঘনিষ্ট হয়ে গেলে যেহেতু আপনাদের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়,তাই আপনি তার শারিরিক চাহিদা পূরণ ও তার খাবারদাবারে ব্যবস্থা সহ ঘরের যাবতীয় দায়দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যেভাবে চলছেন,সেভাবেই চলতে থাকুন।এক্ষেত্রে আপনার কোনো গোনাহ হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...