ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(ক) নফল রোযা হায়েয বা অন্য কোনো ওযরে ভাঙ্গলেও কাযা করতে হবে।
(খ)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি বলছেন যে, দেশের কিছু জায়গায় লাশকে এক পাশে রেখে বাঁশ দেয় আড়াআড়ি ভাবে। বাঁশে উপরের দিক মই য়ের মত হেলান দেওয়া থাকে কবরের কিনারার সাথে। আর নিচের দিক থাকে মাটিতে। মানে মইয়ের মত থাকে বাঁশগুলো। এমন পদ্ধতির আলোচনা সিন্দুকী কবরের ব্যখ্যা কোথাও আমরা পাইনি। সুতরাং এটা অনুত্তম হবে বলে কোনো সন্দেহ নাই।
(গ) সম্পূর্ণ রমজান মাস যদি কেউ অসুস্থ থাকে, এবং রমজান মাস পরবর্তী সে সুস্থ হয়, তাহলে তাকে সম্পূর্ণ রমজান মাসের কাযা করতে হবে। যেভাবে রমজান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সুস্থ হলে কাযা করতে হয়। কাযা শুধূমাত্র তখনই ওয়াজিব হয় না। যখন অসুস্থতার পর আর কেউ সুস্থ হয়ে কাযা আদায় করার মত সুযোগ পায়।
(ঘ) وإذا مات المريض أو المسافر وهما على حالهما لم يلزمهما القضاء؛ لأنهما لم يدركا عدة من أيام أخر
অসুস্থ ব্যক্তি বা মুসাফির যদি সুস্থ বা মুকিম হওয়ার পূর্বে মারা যায়,তাহলে তাদের জন্য উক্ত নামায-রোযার কাযা ওয়াজিব হবে না। কেননা তারা আদায় করার সময় সুযোগ পাননি।(হেদায়া-৪/৭৯)
তবে শর্ত হল অসুস্থতা এমন হতে হবে যে, নামায পড়তে উনি অক্ষম থাকবেন। নুতবা স্বাভাবিক অসুস্থতার অবস্থা যাতে নামায পড়া উনার জন্য সম্ভবরপর থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় সুস্থ হওয়ার পূর্বে কোনো কারণে মারা গেলে, উক্ত নামায রোযার ফিদয়া দিতে হবে। আর মুসাফিরের বেলায় কোনো শর্ত নাই।আরো জানুন-
1411
(ঙ) ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি (মুখ ভর্তি) বমি যদি গিলে ফেলে রোযা ভাঙবে। এইভাবে বমি করলে এবং না গিললেও (অর্থাৎ শুধুমাত্র মুখ দিয়ে বের হলে) রোযা ভাঙবে।
(চ)অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলে রোযা ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত বমি করলে মুখ ভরে হলে ভেঙ্গে যাবে। মুখ ভরে না হলে ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত হল মুখে আঙ্গুল দিয়ে এভাবে কোন পদ্ধতিতে ইচ্ছেকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অনিচ্ছায় হলে বা ইচ্ছেকৃতি মুখ ভরে না হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
إذَا قَاءَ وْ اسْتِقَاءَ مِلْءَ الْفَمِ أَوْ دُونَهُ عَادَ بِنَفْسِهِ أَوْ أَعَادَ أَوْ خَرَجَ فَلَا فِطْرَ عَلَى الْأَصَحِّ إلَّا فِي الْإِعَادَةِ وَالِاسْتِقَاءِ بِشَرْطِ مِلْءِ الْفَمِ هَكَذَا فِي النَّهْرِ الْفَائِقِ (الفتاوى الهندية-1/204)
(ছ)
রোযা কয়েক প্রকার, এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে,
«وَأَنْوَاعُهُ فَرْضٌ وَوَاجِبٌ وَنَفْلٌ. وَالْفَرْضُ نَوْعَانِ: مُعَيَّنٌ كَرَمَضَانَ، وَغَيْرُ مُعَيَّنٍ كَالْكَفَّارَاتِ وَقَضَاءِ رَمَضَانَ، وَالْوَاجِبُ نَوْعَانِ: مُعَيَّنٌ كَالنَّذْرِ الْمُعَيَّنِ، وَغَيْرُ مُعَيَّنٍ كَالنَّذْرِ الْمُطْلَقِ، وَالنَّفَلُ كُلُّهُ نَوْعٌ وَاحِدٌ كَذَا فِي التَّبْيِينِ.
وَسَبَبُهُ مُخْتَلِفٌ فَفِي الْمَنْذُورِ النَّذْرُ، وَفِي صَوْمِ الْكَفَّارَةِ أَسْبَابُهَا مِنْ الْحِنْثِ وَالْقَتْلِ وَسَبَبُ الْقَضَاءِ هُوَ سَبَبُ وُجُوبِ الْأَدَاءِ هَكَذَا فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ. وَأَمَّا سَبَبُ صَوْمِ رَمَضَانَ فَذَهَبَ الْقَاضِي الْإِمَامُ أَبُو زَيْدٍ فَخْرُ الْإِسْلَامِ وَصَدْرُ الْإِسْلَامِ أَبُو الْيُسْرِ إلَى أَنَّهُ الْجُزْءُ الْأَوَّلُ الَّذِي لَا يَتَجَزَّأُ مِنْ كُلِّ يَوْمٍ كَذَا فِي الْكَشْفِ الْكَبِيرِ قَالَ فِي غَايَةِ الْبَيَانِ، وَهُوَ الْحَقُّ عِنْدِي وَصَحَّحَهُ الْإِمَامُ الْهِنْدِيُّ كَذَا فِي النَّهْرِ الْفَائِقِ.» - «الفتاوى الهندية» (1/ 194)
রোযা কয়েক প্রকার যথা- (১) ফরয (২) ওয়াজিব (৩) নফল।
ফরয দুই প্রকার, যথা,(ক) নির্দিষ্ট ফরয যেমন রমজানের রোজা (খ) অনির্দিষ্ট ফরয যেমন কাফফারার রোযা,রমজানের কাযা রোযা।
ওয়াজিব দুই প্রকার (ক) নির্দিষ্ট ওয়াজিব, যেমন নির্দিষ্ট নযর (খ) অনির্দিষ্ট ওয়জিব যেমন অনির্দিষ্ট স্বাভাবিক নযর।
নফল এক প্রকার ই। নযরের রোযার কারণ হল, রোযা রাখার নযর করা। আর কাফফারার রোযার কারণ হল, শপথ ভঙ্গ করা। কাউকে হত্যা করা। কাযা রোযার কারণ তাই যা আদা রোযার কারণ হয়ে থাকে। রমজান মাসের রোযার সবব বা কারণ হল, রমজান মাসের প্রত্যেক দিনের প্রথম অংশ। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া।-১/১৯৪)
রোযার নিয়ত করার ব্যাপারে রোযাগুলি দুই প্রকার,
(১)
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হল রোযা রাখার সময়সীমা। ফরয রোযার নিয়ত করার সময়সীমা হল, দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। অর্থাৎ দিনের মধ্যভাগের আগ পর্যন্ত নিয়ত করলে তা শুদ্ধ হবে।
স্মর্তব্য যে, আরবী দিনের সূচনা হয় সুবহে সাদিক থেকে। তাই সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতটুকু সময় হয়, এর মাঝামাঝি সময়ের আগে রোযার নিয়ত করলেই রোযা রাখা শুদ্ধ হবে।যেমন যদি সেহরীর সময় তথা সুবহে সাদিক শুরু হয় ৫টায়। আর সূর্যাস্ত হয়ে থাকে সন্ধ্যা ৭টায়। তাহলে একদিন হচ্ছে কত ঘন্টায়? ১৪ঘন্টায়।
সুতরাং সুবহে সাদিক থেকে ৭ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রোযার নিয়ত করলেই রোযা রাখা শুদ্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ উক্ত হিসাব মতে দুপুর ১২টার আগে রোযার নিয়ত করলে সেদিনের রোযা রাখা শুদ্ধ হবে। যদি এর পর নিয়ত করে তাহলে শুদ্ধ হবে না।
এই রোযা হল,
- (১) রমজানের রোযা,
- (২)নির্দিষ্ট নযরের রোযা
- (৩) এবং সাধারণ নফল রোযা।
(২) রাত থেকে নিয়ত করতে হবে। এ রোযাগুলি হল,
- (১) রমজানের কাযা রোযা
- (২)অনির্দিষ্ট নযরের রোযা
- (৩)নির্দিষ্ট নযরের রোযার কাযা রোযা
- (৪) নফল রোযাকে ভঙ্গ করার পর কাযা করা
- (৫) কাফফারার রোযা সমূহ যেমন,(ক) জিহারের কাফফারা,(খ) হত্যার কাফফারা,(গ) কসমের কাফফারা,(ঘ) এবং ফরয রোযা ভঙ্গ করার কাফফারা সহ হজ্বের কোনো ওয়াজিব তরক হওয়ার কাফফারা ইত্যাদি।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- 1055
(জ)
কেউ যদি ফজর থেকেই জাগ্রত অবস্থায় থাকে এবং রমজানের রোযার নিয়ত দুপুরের একটু আগে করে, তাহলে তার রোযা হবে। যদি সে ইতিপূর্বে রোযা ভঙ্গকারী কোনো কাজ যেমন, খানা-পিান,স্ত্রী সহাবাস ইত্যাদিতে লিপ্ত না হয়। কিন্তু কেউ যদি কেউ সুবহে সাদিকের পর তথা সেহরীর সময় শেষ হওয়া পর রোযা ভঙ্গকারী কোনো জিনিষ যেমন খানা-পিনায় লিপ্ত হয়ে যায়,এবং দিনের মধ্যভাগের পূর্বে রোযার নিয়ত করে তাহলে তার রোযা হবে না। কেননা যদিও সে দিনের মধ্যভাগে নিয়ত করেছে,কিন্তু সে সহরীর টাইম শেষ হওয়ার পর রোযা ভঙ্গকারী জিনিষে লিপ্ত হয়েছে। অথচ রোযা হল, সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা পিনা থেকে বিরত থাকা।
এসো ফিকহ শিখি বইয়ের ১৩৯ পৃষ্ঠার 3নং পয়েন্ট এ কথা বলা হয়েছে য়ে, নিয়ত করার পূর্বে রোযার মুনাফি তথা রোযাকে ভঙ্গকারী কোনো জিনিষে লিপ্ত হওয়া যাবে না।