আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আস্সালামু আলাইকুম উস্তাদ। অনেকদিন থেকে প্রশ্ন করবো করবো করে করা হয় নাই। এখন ভীষণ মন খারাপ তাই প্রশ্ন করতে এসেছি।

উস্তাদ বর্তমানে অধিকাংশ মেয়েই অবিবাহিত অথবা বলা চলে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি।  বাজার, মার্কেট, হাসপাতালে এমনি জনসংখ্যার জরীপের মধ্যেও মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশী। ম্যাট্রিমনি গুলোতেও দেখা যায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বায়োডাটা অনেক বেশী।  এর অন্যতম কারণ কি হতে পারে?
একটা হাদীস আছে শেষ যামানার ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। বর্তমানে বিশ্বের দিকে তাকালেও বুঝা যায় আমরা শেষ যানানায় অবস্থান করছি।
যদি তাই হয় তাহলে আমরা যারা অবিবাহিত, সর্বোচ্চ চেষ্টা করি দ্বীন প্রেকটিস করার তাদের করণীয় কি হতে পারে?

ফেতনার যানানায় কিভাবে নিজের ঈমান, চরিত্র ধরে রাখবো?

শেষ যামানায় তো দাজ্জালের অনুসারী হবে বেশিরভাগ মেয়েরা, এক্ষেত্রে আমরা মেয়েরা কিভাবে নিজেকে হেফাজাত করবো?

অনেক বাবা মা আছেন তারা ছেলে মেয়েদের বিবাহের ব্যাপারে বড্ড উদাসীন, এক্ষেত্রে আমাদের কি করণীয়?

যদি আমাদের বিয়ে না হয়, তাহলে বাকি জীবন আমরা কিভাবে থাকবো? বয়স যতো বাড়বে, একাকিত্ব ততো দীর্ঘ হবে, জীবনসঙ্গী আর সন্তান-সন্ততির জন্য বুক হাহাকার করবে।  এক্ষেত্রে আমরা অবিবাহিত রা কি করতে পারি?

1 Answer

0 votes
by (680,550 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ঘরে থাকলে তাদের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার বিধান ইসলাম দিয়েছে। মা-বাবার কর্তব্য হচ্ছে মেয়েকে দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করা। কিন্তু মা-বাবা যদি বিয়ের ব্যবস্থা না করেন তাহলে গুনাহগার হবেন। বিয়ের জন্য চেষ্টা করছেন কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না সময় যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তার মা-বাবা গুনাহগার হবেন না। মা-বাবা যদি বিয়ের ব্যাপারে অবহেলা করেন, তাহলে তাদের গুনাহ হবে, কোনো সন্দেহ নেই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه

তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোনো পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)

عن محمد بن عمر بن علي بن أبي طالب، عن أبيه، عن علي بن أبي طالب، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له: " يا علي، ثلاث لاتؤخرها: الصلاة إذا آنت، والجنازة إذا حضرت، والأيم إذا وجدت لها كفئًا".

 (1 / 320، باب ما جاء في الوقت الأول من الفضل، ابواب الصلوٰۃ، ط:شركة مكتبة ومطبعة مصطفى البابي الحلبي - مصر)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে আলী, তিন কাজে দেরি করবে না। সময় হয়ে গেলে নামাজ আদায়ে, জানাজা এসে গেলে জানাজার নামাজ পড়তে এবং কুফু মিলে গেলে বিবাহে বিলম্ব করবে না।’ 
(তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস : ৬০৫)

যখন ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং কুফু বা সমমানের পাত্র-পাত্রী পাওয়া যায়, অভিভাবকের দায়িত্ব তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা। ছেলে-মেয়েদের যত দ্রুত বিবাহের ব্যবস্থা করা যাবে ততই তারা ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে।

مصنف عبد الرزاق :

"عن يحيى بن أبي كثير قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا جاءكم من ترضون أمانته وخلقه فأنكحوه كائنًا من كان، فإن لاتفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد كبير»، أو قال: «عريض»".

 (6/ 152، کتاب النکاح، باب الاکفاء، رقم الحدیث:10325، ط:المجلس العلمی ، الھند) 

কার সাথে কার বিয়ে হবে সেটা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন,

وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا [٧٨:٨

আমি তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি, {সূরা নাবা-৮}

সুতরাং বুঝা গেল জীবনসঙ্গী কে হবে? তা আল্লাহ তাআলা জানেন।নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু বান্দা জানে না। তাই বান্দা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ভাল পাত্রি/পাত্র দেখে বিবাহ করতে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- 

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ اﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ: ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ اﻟﻠَّﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ -( «ﻛَﺘَﺐَ اﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻘَﺎﺩِﻳﺮَ اﻟْﺨَﻼَﺋِﻖِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﻠُﻖَ اﻟﺴَّﻤَﺎﻭَاﺕِ ﻭَاﻷَْﺭْﺽَ ﺑِﺨَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ)ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ.

আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন আসমান-যমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে এবং তিনি যার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই ঘটবে।(ছহীহ মুসলিম, মিশকাত হাদীস নং/৭৯)। 

https://ifatwa.info/25636/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে, 
জন্ম মৃত্যুর মত বিয়ে শাদী ইত্যাদি সবকিছুই নির্ধারিত রয়েছে।তাকদীরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।তাকদীরে যার সাথে বিয়ের কথা লিখিত রয়েছে,তার সাথেই বিয়ে হবে।

★বিশ্বজুড়ে অনেক জায়গায় সত্যিই নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে কিছুটা বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। এর কয়েকটি বাস্তব কারণ আছে:

1. যুদ্ধ ও সহিংসতা:
ইতিহাসে যুদ্ধ, দুর্ঘটনা, সহিংসতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্মে পুরুষদের মৃত্যুহার বেশি।

2. স্বাস্থ্য ও আয়ু:
জীববিজ্ঞানের কারণে মেয়েদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় বেশি।

3. অভিবাসন ও কর্মসংস্থান:
অনেক পুরুষ কাজের জন্য বিদেশে চলে যায় বা গ্রামে থাকে, ফলে শহরের জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা বেড়ে দেখা যায়।

4. বিবাহের ধ্যানধারণা:
শিক্ষিত ও শহুরে নারীরা এখন দেরিতে বিয়ে করতে চান বা ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেন। তাই ‘অবিবাহিত নারীর সংখ্যা বেশি’ বলে মনে হয়।



“শেষ যামানায় নারীর সংখ্যা বেশি হবে” হাদিস
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“কিয়ামতের আগমুহূর্তে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

অবিবাহিতদের করণীয়

যারা বিয়ে করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য ইসলামের নির্দেশ হলো:

হালাল উপায়ে বিয়ে করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া:

অভিভাবকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা।

মসজিদ, কমিউনিটি বা বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে প্রস্তাব খোঁজা।

প্রয়োজন হলে বয়স, পেশা বা সামাজিক অবস্থার শর্ত কিছুটা নমনীয় করা।

অভিভাবকদের দায়িত্ব স্মরণ করানো:
ইসলামে অভিভাবককে সময়মতো ছেলে-মেয়ের বিয়ে করানো সুন্নত। বিনয়ের সঙ্গে তাদের বোঝানো যেতে পারে।

সবর ও তাকওয়া বজায় রাখা:
রাসূল ﷺ বলেছেন:

“যে ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে; কারণ রোজা তার কামনা-বাসনা কমিয়ে দেয়।”
(সহীহ বুখারী, মুসলিম)

আত্মসম্মান ও ঈমান রক্ষা:

দৃষ্টি সংযত রাখা (সূরা নূর:30-31)।
অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকা।
পর্দা ও শালীনতা বজায় রাখা।
একাকিত্বের সময়ে ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত ও উপকারী কাজে সময় দেওয়া।

★ ফেতনার যুগে ঈমান ও চরিত্র রক্ষা।

নামাজকে আঁকড়ে ধরুন—এটাই ঈমানের ঢাল।

নিয়মিত কুরআন ও যিকির পড়া, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যার আমল।

দ্বীনি শিক্ষার পরিবেশ ও নেক সঙ্গ গড়ে তুলুন।

সোশ্যাল মিডিয়া ও অশ্লীল কনটেন্ট থেকে দূরে থাকুন।

দাজ্জাল সম্পর্কে রাসূল ﷺ যে দোয়া শিখিয়েছেন তা পড়ুন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ
(সহীহ মুসলিম)

যদি বিয়ে না হয়
একাকিত্ব কমানোর জন্য:

পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

দরিদ্রদের সেবা, দাওয়াত ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া

শখ, শিক্ষা ও দক্ষতার কাজে সময় বিনিয়োগ

আল্লাহর কাছে দোয়া চালিয়ে যাওয়া; অনেকের বিয়ে দেরিতে হলেও হয়, কখনো অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো সঙ্গ দেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শেষ যামানার ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে,তাই বর্তমান যামানায় 
মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। 

যদি বাবা মেয়েদের বিবাহের ব্যাপারে বড্ড উদাসীন হয়, সেক্ষেত্রে মেয়েদের করণীয় হলো নিজের বিবাহের বিষয়ে দাদী,নানী, বড় বোন, খালা,ফুফুদের মাধ্যে বাবা মাকে বিবাহের বিষয়ে তাগিদ দেয়া।

আল্লাহর কাছে নিয়মিত তাহাজ্জুদ ও সালাতুল হাজত এর নামাজ আদায় করে দোয়া করা।

দ্রুত বিবাহের আমল গুলি করা,ইনশাআল্লাহ কালবিলম্ব না করে সঠিক সময় থেকে বিবাহের চেষ্টা করলে বিবাহ হয়ে যাবে।

দ্রুত বিবাহের আমল সম্পর্কে জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...