আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
395 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (26 points)
আসসালামু আলাইকুম,

আপনাদের ফতোয়া থেকে জানতে পেরেছি প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করতে হবে,হাদিয়া আদান-প্রদান করতে হবে,ইসলাম বলে যে তরকারির ঝোল বাড়িয়ে দাওপ্রতিবেশীকে শরীক কর।এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়ার বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, সামান্য জিনিস হাদিয়া দিতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এক  হাদীসে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু যর রা.- কে বলেন, হে আবু যর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো। (সহীহ মুসলিম,হাদীস ২৬২৫)

হাদীসে আরও আছে-কোনো ভালো খাবার রান্না করলে তাকে এর ঘ্রাণ ছড়িয়ে কষ্ট দেবে না, তবে যদি তার ঘরেও সে খাবার থেকে কিছু পৌঁছে দাও। যখন কোনো ফল কিনে তোমার বাড়িতে নেবে তখন হাদিয়াস্বরূপ তাকে সেখান থেকে কিছু দেবে। [খারায়েতী, তবারানী, আবুশ শায়খ- ফাতহুল বারী, খ. ১০, পৃ. ৫১৯,  কিতাবুল আদব, বাব-৩১]

★এখন উপরের এই কাজগুলো করতে যদী বাবা মা নারাজ হোন,বুঝালে না বুঝেন,এগুলো করতে বাধা দেন।তবে আমার কি করনীয়? আমি কি গুনাহগার হবো? আমি তো প্রতিবেশীকে যথাসম্ভব কষ্ট না দিয়ে, হক আদায় করে চলার চেষ্টা করি।

★সুন্নাহে বর্ণিত রোজা গুলো রাখলে মা অসন্তুষ্ট হলে ও তার খিদমতে ব্যাঘাত ঘটলে আমি কি সেই রোজাগুলো রাখবো? আমার পরিবারের দ্বীনের বুঝ কম,দুয়া চাই যেন উত্তম ইসলাহ করতে পারি আর তারা যেন ইসলাহ গ্রহন করেন।

জাযাকুমুল্লাহ খইর।

1 Answer

+1 vote
by (559,140 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 



প্রথমে একটি ঘটনা জেনে নেই। হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة، أنه قال: كان جريج يتعبد في صومعة، فجاءت أمه. قال حميد: فوصف لنا أبو رافع صفة أبي هريرة لصفة رسول الله صلى الله عليه وسلم أمه حين دعته، كيف جعلت كفها فوق حاجبها، ثم رفعت رأسها إليه تدعوه، فقالت: يا جريج أنا أمك كلمني فصادفته يصلي، فقال: اللهم أمي وصلاتي، فاختار صلاته، فرجعت، ثم عادت في الثانية، فقالت: يا جريج أنا أمك فكلمني، قال: اللهم أمي وصلاتي، فاختار صلاته، فقالت: اللهم إن هذا جريج وهو ابني وإني كلمته، فأبى أن يكلمني، اللهم فلا تمته حتى تريه المومسات. قال: ولو دعت عليه أن يفتن لفتن. قال: وكان راعي ضأن يأوي إلى ديره، قال: فخرجت امرأة من القرية فوقع عليها الراعي، فحملت فولدت غلاما، فقيل لها: ما هذا؟ قالت: من صاحب هذا الدير، قال فجاءوا بفئوسهم ومساحيهم، فنادوه فصادفوه يصلي، فلم يكلمهم، قال: فأخذوا يهدمون ديره، فلما رأى ذلك نزل إليهم، فقالوا له: سل هذه، قال فتبسم، ثم مسح رأس الصبي فقال: من أبوك؟ قال: أبي راعي الضأن، فلما سمعوا ذلك منه قالوا: نبني ما هدمنا من ديرك بالذهب والفضة، قال: لا، ولكن أعيدوه ترابا كما كان، ثم علاه
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, ‘জুরাইজ (বনি ইসরাঈলের একজন ওলি) তার ইবাদতখানায় ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন। (একবার) তার মা তার কাছে এলেন। হুমাইদ (রহ.) বলেন, ‘আমাদের কাছে আবু রাফি এমনভাবে বিষয়টি ব্যক্ত করেন, যেমনভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার মায়ের ডাকের আকার আবু হুরায়রা (রা.)-এর কাছে ব্যক্ত করেছেন। কিভাবে তিনি তার হাত তার ভ্রুর ওপর রাখছিলেন। এরপর তার দিকে মাথা উঁচু করে তাকে ডাকছিলেন। বলেন, হে জুরাইজ! আমি তোমার মা, আমার সঙ্গে কথা বলো। এই কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরাইজ নামাজে মশগুল ছিলেন।তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা, আর (অন্যদিকে) আমার নামাজ, (আমি কী করি?)। বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে তিনি তার নামাজকে অগ্রাধিকার দিলেন। এবং তার মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার এলেন এবং বলেন, হে জুরাইজ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমার মা, আমার নামাজ। তখন তিনি তার নামাজে মশগুল রইলেন। তখন তার মা বলেন, হে আল্লাহ! এই জুরাইজ আমারই ছেলে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যু দিয়ো না, যে পর্যন্ত না তাকে ব্যভিচারিণীর অপবাদ দেখাও।তখন মহানবী (সা.) বলেন, যদি তার মা তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো বিপদের জন্য বদদোয়া করতেন, তাহলে অবশ্যই সেই বিপদে পতিত হতো। নবী করিম (সা.) বলেন, এক মেষ রাখাল জুরাইজের ইবাদতখানায় (মাঝেমধ্যে) আশ্রয় নিত। তিনি বলেন, এরপর গ্রাম থেকে এক নারী বের হয়েছিল। ওই রাখাল তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এতে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, এই (সন্তান) কোথা থেকে? সে উত্তর দিল, এই ইবাদতখানায় যে বাস করে, তার থেকে।তিনি বলেন, এরপর তারা শাবল-কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এলো এবং চিৎকার করে ডাক দিল। তখন জুরাইজ নামাজে মশগুল ছিলেন। কাজেই তিনি তাদের সঙ্গে কথা বললেন না। তিনি বলেন, এরপর তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করতে লাগল। তিনি এ অবস্থা দেখে নিচে নেমে এলেন। এরপর তারা বলল, এই নারীকে জিজ্ঞাসা করো (সে কী বলছে)। তিনি বলেন, তখন জুরাইজ মুচকি হেসে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তোমার পিতা কে? তখন শিশুটি বলল, আমার পিতা সেই মেষ রাখাল।যখন তারা ওই শিশুর মুখে এ কথা শুনতে পেল, তখন বলল, আমরা তোমার ইবাদতখানার যেটুকু ভেঙে ফেলেছি তা সোনা-রুপা দিয়ে পুনর্নির্মাণ করে দেব। তিনি বলেন—না, বরং তোমরা মাটি দ্বারাই আগের মতো নির্মাণ করে দাও। এরপর তিনি তার ইবাদতকক্ষে উঠে গেলেন।(সহীহ মুসলিম-২৫৫০)

ইমাম নববী রাহ বলেন,
" قَالَ الْعُلَمَاء : كَانَ الصَّوَاب فِي حَقّه إِجَابَتهَا لِأَنَّهُ كَانَ فِي صَلَاة نَفْل , وَالِاسْتِمْرَار فِيهَا تَطَوُّع لَا وَاجِب , وَإِجَابَة الْأُمّ وَبِرّهَا وَاجِب , وَعُقُوقهَا حَرَام , وَكَانَ يُمْكِنهُ أَنْ يُخَفِّف الصَّلَاة وَيُجِيبهَا ثُمَّ يَعُود لِصَلَاتِهِ ... " انتهى
উলামায়ে কেরাম বলেন,জুরাইজের উচিৎ ছিলো,মায়ের ডাকের জবাব দেয়া।কেননা উনিতো নফল সালাতে ছিলেন।নফল নামাযকে সম্পন্ন করা মুস্তাহাব।ওয়াজিব নয়।অন্যদিকে মায়ের ডাকে জবাব দেয়া এবং মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব।এবং মায়ের নাফরমানি করা হারাম।উনার জন্য সম্ভব ছিলো যে,নামাযকে সংক্ষেপণ করে মায়ের ডাকে জবাব দেয়া উনার জন্য সম্ভব ছিলো।অতঃপর ফিরে গিয়ে আবার নামাযকে সমাপ্ত করবেন।(আল মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ-২০/৩৪২)
,
আরো জানুনঃ  
,
(০১)
আপনার মা বাবা যদি তরকারী ইত্যাদি পাঠাতে নিষেধ করে,আপনি তাদের আদেশ মানবেন। 
তবে হিকমতের সাথে প্রতিবেশীর হক তাদের বুঝাতে চেষ্টা করবেন।
,
(০২)
ইসলামি স্কলারগন বলেছেন যে নফল রোযা ভেঙ্গে ফেলতে  মা বাবা আদেশ করলে সেই আদেশ মানা যাবেনা।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার পক্ষ থেকে নফল রোযা রাখতে কোনো সমস্যা না হলে সেটি রাখতে পারেন।
রোযা রাখতে মা বাবার নিষেধাজ্ঞার কারনে সেটা মেনে চলা জরুরি নয়।       

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سِمْعَانَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ»

নাও্ওয়াস ইবনু সিম্‘আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই।
(শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৫২০।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...