আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
204 views
in পবিত্রতা (Purity) by (48 points)
১৷ আমাদের বাড়িতে দোতলা এবং তিনতলার কাজ শুরু হবে৷ যেখানে দুইটি তলাতে আমার আপাতত কমপক্ষে একটি করে দুইটি রুম থাকবে৷ রুমের সাথে এস্টাসড বাথরুম৷ বাথরুম+টয়লেট বলতে যা বোঝায়৷ আমার পরিবার থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমি কি ধরণের টয়লেট চাই! হাই কমোড না নরমাল! আমি মূলত নাপাকির বিষয় মাথায় নিয়ে এ ব্যাপারে চিন্তিত৷
সত্যি বলতে, আমি হাই কমোডে টয়লেট করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি৷ তবে আমি নাপাকির ব্যাপারে অতিরিক্ত চিন্তিত থাকি, ওয়াসওয়াসা বলতে যা বোঝায়৷ আমি প্রসাব করলে টিস্যু ব্যবহার করে এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে দি৷ আমার সমস্যা হলো, নরমাল টয়লেটে খুব সমস্যা না হলেও, হাই কমোডে দেখা যায় ফ্ল্যাশ করবার পরে কিংবা পশ্চাৎপদ বা গোপনাংগ ধোবার সময় পানি  নিচে পড়ে ছিটে শরীরে লাগে৷ এ পানি কি নাপাক?

শুধু এই নাপাকি ছিটে না লাগার ভয়ে আমি নরমাল টয়লেট চাচ্ছি, কিন্তু বাসা থেকে এবং আত্মীয় সবাই বলছে, নিজের ভবিষ্যত ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে হাই কমোড নিতে৷ আবার আব্বু আম্মু যেহেতু নরমাল বাথরুমে অভ্যস্ত, তাই তাদের রুমে নরমাল হবে৷ তবে তাদের বয়স বেশি হলে তাদের হাটুর ব্যাথা বা অন্য কারণে যেহেতু হাইকমোড লাগবে৷ তাই আমার রুমেই সেটা করতে চাচ্ছে৷ আবার এটাই এখন আধুনিকতা৷ আমার কি করা উচিত দয়া করে জানাবেন৷
আর হাই কমোডে ফ্লাশ করবার পরেও ওখান থেকে ছিটে আসা পানি যদি শরীরে লাগে, তবে কি তা নাপাক? পানি তো সব একসাথেই থাকে, তাহলে সবটাই নাপাক হবার কথা৷
২৷ টয়লেট করে টিস্যু ব্যবহার করে আবার পানি দিয়ে গোপানাংগ ধুয়ে দেয়া কি জরুরি? একদিকে টিস্যু ব্যবহার করলে তো টিস্যু ভিজে আবার সেটাই গোপনাংগে লাগে, তাই পরিস্কার করতে পানি ব্যবহার করা৷ অন্যদিকে বাসার বাইরে যেখানে পানির ব্যবস্থা নেই৷ সেখানে তো পানি ব্যবহার করা যায় না৷ সেক্ষেতে শুধু টিস্যু ব্যবহার করলেই হবে?

1 Answer

0 votes
by (62,920 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

কাপড়ে অপবিত্র জিনিষ লেগে উক্ত কাপড়কে অপবিত্র করে ফেলে। যাকে আরবীতে নাজাসত বলে।

 

নাজাসত দুই প্রকার

 

নাজাসাতে গালিজাহ

নাজাসাতে খাফিফাহ

 

প্রথম প্রকারঃ নাজাসতে গালিজাহ

যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে,

 

وَهِيَ نَوْعَانِ (الْأَوَّلُ) الْمُغَلَّظَةُ وَعُفِيَ مِنْهَا قَدْرُ الدِّرْهَمِ

 

নাজসতে গালিজাহ যা এক দিরহাম পরিমাণ হলে ক্ষমাযোগ্য।

 

(নাজাসতে গালিজাহ কি কি?)

 

সে সম্পর্কে বলা হয়,

 

كل ما يخرج من بدن الإنسان مما يوجب خروجه الوضوء أو الغسل فهو مغلظ كالغائط والبول والمني والمذي والودي والقيح والصديد والقيء إذا ملأ الفم. كذا في البحر الرائق.وكذا دم الحيض والنفاس والاستحاضة هكذا في السراج الوهاج وكذلك بول الصغير والصغيرة أكلا أو لا. كذا في الاختيار شرح المختار وكذلك الخمر والدم المسفوح ولحم الميتة وبول ما لا يؤكل والروث وأخثاء البقر والعذرة ونجو الكلب وخرء الدجاج والبط والإوز نجس نجاسة غليظة هكذا في فتاوى قاضي خان وكذا خرء السباع والسنور والفأرة. هكذا في السراج الوهاج بول الهرة والفأرة إذا أصاب الثوب قال بعضهم: يفسد إذا زاد على قدر الدرهم وهو الظاهر. هكذا في فتاوى قاضي خان والخلاصة خرء الحية وبولها نجس نجاسة غليظة وكذا خرء العلق. كذا في التتارخانية ودم الحلمة والوزغة نجس إذا كان سائلا. كذا في الظهيرية فإذا أصاب الثوب أكثر من قدر الدرهم يمنع جواز الصلاة. كذا في المحيط.

 

ভাবার্থঃ-ঐ সমস্ত জিনিষ যা মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে ওজু গোসলকে ওয়াজিব করে দেয়। তা হল নাজাসতে গালিজাহ,যেমনঃ- পায়খানা,পেশাব,বীর্য, মযি(বীর্যের পূর্বে যা বাহির হয়),ওদি(প্রস্রাবের সময় যা বাহির হয়)ফুঁজ,বমি যখন তা মুখ ভরে হয়,(বাহরুর রায়েক)এবং আরো ও নাজাসতে গালিজাহ হল যথাক্রমে-হায়েয ও নেফাসের রক্ত,ছোট্ট বালক/বালিকার প্রস্রাব তারা আহার করুক বা না করুক। মদ,প্রবাহিত রক্ত,মৃত জানোয়ারের গোসত,ঐ সমস্ত প্রাণীর প্রস্রাব ও গোবর যাদের গোস্ত ভক্ষণ হারাম।গরুর গোবর,কুকুরের বিষ্টা, মোরগ এবং হাস ও পানী হাসের বিষ্ঠা। হিংস প্রাণীর বিষ্টা,বিড়ালের বিষ্টা,ইদুরের বিষ্টা। বিড়াল এবং ইদুরের প্রস্রাব যদি কাপড়ে লাগে তবে কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরামগণ মনে করেন যে,যদি তা এক দিরহামের বেশী হয় তবে পবিত্র। আর কিছুসংখ্যক না করেন। সাপের বিষ্টা,ও প্রস্রাব। জোকের বিষ্টা। আঠালো ও টিকটিকির রক্ত যদি তা প্রবাহিত হয়। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৬)

 

নাজাসতে গালিজাহ কাপড় বা শরীরে লাগলে, এক দিরহাম (তথা বর্তমান সময়ের পাঁচ টাকার সিকি)পরিমাণ বা তার চেয়ে কম হলে, উক্ত কাপড়ের সাথে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম যদি সময়-সুযোগ থাকে।

 

দ্বিতীয় প্রকারঃ নাজাসতে খাফিফাহ

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে

 

(والثاني المخففة) وعفي منها ما دون ربع الثوب. كذا في أكثر المتون اختلفوا في كيفية اعتبار الربع قيل المعتبر ربع طرف أصابته النجاسة كالذيل والكم والدخريص إن كان المصاب ثوبا وربع العضو المصاب كاليد والرجل إن كان بدنا وصححه صاحب التحفة والمحيط والبدائع والمجتبى والسراج الوهاج.وفي الحقائق وعليه الفتوى. كذا في البحر الرائق وبول ما يؤكل لحمه والفرس وخرء طير لا يؤكل مخفف هكذا في الكنز.

 

ভাবার্থঃ নাজাসতে খাফিফাহ, যা এক চতুর্থাংশের কম হলে ক্ষমাযোগ্য। চতুর্থাংশ কিসের? সেটা নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন,কাপড় বা শরীরের যে অংশে নাজাসত লাগবে তার চতুর্থাংশ উদ্দেশ্য যেমন,আস্তিন,হাতা,এবং হাত পাঁ ইত্যাদি। এটাই বিশুদ্ধ মত।ঐ সমস্ত প্রাণীর প্রস্রাব যেগুলোর গোস্ত ভক্ষণ করা হালাল,এবং ঐ সমস্ত পাখীর বিষ্টা যেগুলোর গোসত ভক্ষণ করা হারাম। এগুলা হল নাজাসতে খাফিফাহ। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৬)

 

নাজাসতে খাফিফাহ কাপড় বা শরীরে লাগলে এক চতু্র্থাংশ পর্যন্ত মাফ। তথা ঐ কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়লে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম যদি হাতে সময়-সুযোগ থাকে।

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

 

يَا عَمَّارُ إِنَّمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ مِنْ خَمْسٍ: مِنَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَالْقَيْءِ وَالدَّمِ وَالْمَنِيِّ

 

আম্মার বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয় ৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথা-১-পায়খানা, ২-প্রশ্রাব, ৩-বমি, ৪-রক্ত, ৫-বীর্য। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪৫৮}

 

 

পবিত্রকরণ এর দিক দিয়ে নাজাসত দুই প্রকারঃ যথা-

দৃশ্যমান নাজাসত

অদৃশ্যমান নাজাসত

 

দৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে প্রথম প্রকার তথা দৃশ্যমান নাজাসত লাগলে সেই নাজাসতকে  দূর করে দিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে।এক্ষেত্রে নাজাসত দূর করতে ধৌত করার কোনো পরিমাণ নেই। যতবার ধৌত করলে নাজাসত দূর হবে ততবারই ধৌত করতে হবে।যদি একবার ধৌত করলে তা চলে যায় তবে একবারই ধৌত করতে হবে।

 

অদৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে দ্বিতীয় প্রকার তথা অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলেকাপড়কে তিনবার ধৌত করে তিনবারই নিংড়াতে হতে।এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বাহির না হয়। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪জা'মেউল ফাতাওয়া;৫/১৬৭)

 

নাজাসতকে ১০টি পদ্ধতিতে পবিত্র করা যায় যথা-

১. ধৌত করা,যেমন কাপড় ইত্যাদি।

২. মোছাযেমন আয়না,তলোয়ার ইত্যাদি।

৩. টুকা দিয়ে নাজাসত দূর করা,যেমন গাড় বীর্য কে টুকা দিয়ে কাপড় থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা,ইত্যাদি।

৪. ঘর্ষণমর্দনযেমন শরীর বিশিষ্ট নাজাসত যাকে ঘর্ষণ-মর্দন করে দূর করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।

৫. শুকিয়ে নাজাসতের আসর দূর হয়ে যাওয়া,যেমন জমিন,গাছ ইত্যাদি শুকিয়ে পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।

৬. জ্বালানোযেমন গোবর ইত্যাদি জ্বলে ভস্ম হয়ে ছাই হয়যা পবিত্র।ইত্যাদি।

৭. এক অবস্থা থেকে ভিন্নরূপ ধারণ করে পবিত্র হওয়া।যেমনঃ মদ থেকে সিরকায় পরিণত হওয়া যা কিনা পবিত্র। ইত্যাদি।

৮. দেবাগত,যেমন মানুষ এবং খিনযির ব্যতীত সকল প্রকার প্রাণীর চামড়া কে লবন মাখিয়ে রৌদ্রে রাখলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।

৯. যবেহপ্রাণীকে যবেহ করার মাধ্যমে উক্ত প্রাণীর চামড়া পবিত্র হয়ে যায়যদি এমন প্রাণীও হয় যার গোস্ত ভক্ষণ করা হারাম,তবে তার চামড়াকে পবিত্র করে দেয়,ইত্যাদি।

১০. নরখ,তথা যদি কোনো কোঁপে নাজসত পড়ে যায় তাহলে উক্ত কোঁপের মুনাসিব পরিমাণ পানি বাহিরে নিক্ষেপ করলেই উক্ত কোপ পবিত্র হয়ে যায় ইত্যাদি।

এই মোট দশ ভাবে কোনো অপবিত্র জিনিষকে পবিত্র করা যায়।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. ক. হাই কমোডে ফ্লাশ করবার পরেও অনেক সময় দেখা যায় যে, কিছু হলেও নাপাকি লেগে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে তখন ছিটে আসা পানিও নাপাক হবে।

খ. হাই কমোডে ভালোভাবে  ফ্লাশ করবার পরে যদি সেখানে  কোনো নাপাকির চিহ্ন না লেগে থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে তখন ছিটে আসা পানি পাক হবে।

গ. পশ্চাৎপদ বা গোপনাংগে যেহেতু নাপাকি লেগে থাকে । সুতরাং তা  ধোবার সময় যেহেতু নাপাকি ধৌত পানিই  নিচে পড়ে ছিটে শরীর বা কাপড়ে  লাগলে শরীর বা কাপড় নাপাক হয়ে যাবে।

ঘ. দুই ধরণের টয়লেটই ব্যবহার করা জায়েজ আছে। তবে হাই কমোড অপেক্ষা নরমাল টয়লেট থেকে পবিত্রতা অর্জন করা সহজ। 

২. ক. টয়লেট করে টিস্যু ব্যবহার করেই যদি নাপাকি দূর হয়ে যায় তাহলে তার পরে আবার পানি ব্যবহার করা জরুরী নয়। তবে উত্তম।

খ. শুধু টিস্যু ব্যবহারের পর হালকা কিছু নাপাকি লেগে থাকে যা পরিমাণে খুবই কম। যা এক দিরহাম (তথা বর্তমান সময়ের পাঁচ টাকার সিকি) পরিমাণ বা তার চেয়ে কম তাই তা ক্ষমাযোগ্য, ফলে তা সাথে  নিয়ে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম যদি সময়-সুযোগ থাকে। সুতরাং বাসার বাইরে যেখানে পানির ব্যবস্থা নেই৷ সে ক্ষেত্রে শুধু টিস্যু ব্যবহার করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করলেই হবে


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 159 views
...