আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
333 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
আসসালামু 'আলাইকুম। ৯ বছর আগে আমি যখন ৮ম শ্রেণীতে ছিলাম তখন একা ঘরে ঘুমানোর সময় সকালে আমাকে বোবা জ্বীন ধরে। এভাবে হয় যে, স্বপ্ন আমি দেখতাম ঘরে পরিচিত কেউ হাঁটছে কথা বলছে আর এরপর আমি নড়তে  পারতাম না। অনেক কষ্ট আর সময় লাগতো পুরোপুরি জেগে উঠতে। ঘরে আমি মানুষ দেখতাম। অনেক লম্বা সাদা জুব্বা পড়া ফর্সা মাথায় চুল নেই ( একদিনই দেখি) । এরপর পরিচিত মানুষ এর বেশ ধরে আশে পাশে আসত। (পাশের ফ্ল্যাটে এর ছোট মেয়ে , বাবা) এরপর একজন রাকি কে আনা হয় সে বলে, এটা একটা বাচ্চা জ্বীন আর জ্বীন বলেছে সে শুধুই খেলা করতে আসে, এরপর উনি তাকে তাড়িয়ে দেয়। সেই বছর পর আমি আর দেখিনি। কিন্তু এরপর থেকে আমি একা ঘুমুতে ভয় পাই। আর রুমে একা ঘুমালেই বোবা ধরে। এই পর্যন্ত এমন তাই চলছে। লাস্ট কয়েক বছর যাবত একটু কমেছে। এ বছরের রোজায় আল্লাহর এর অশেষ রহমতে দ্বীনের পথে চলতে শুরু করি আলহামদুলিল্লাহ।
আর এরপর থেকেই আমাকে বোবায় ধরলে আমি আমার কানের কাছে ঝর বাতাসের শব্দ পাই, নারীর চিৎকার শুনি, একটি হাত ও দেখেছি একবার।
আর এগুলো তখনি বেশি হয় যখন আমি ইবাদতে বেশি সময় দেই, তাহাজ্জুত, ডেইলি কুরআন, ডেইলি আমল ভালো ভাবে করি।
কোনো কারণে দুনিয়াতে ব্যাস্ত হয়ে গেলে বোবায় ধরা, দুঃস্বপ্ন, অতিরিক্ত ভয় পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা অনেক কম হয়।  আমি সর্বদা উজু অবস্থায় ঘুমাই। জিকির-আধকার, ৩ কুল, আয়তুল কুরসী এগুলো মেইনটেইন করি আলহামদুলিল্লাহ্।

আমি জানতে চাই আমার সাথে এসব কেনো হচ্ছে ?

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

হজরত জাবির রা. হতে বর্ণিত,

عَنْ جَابِرٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا كَانَ جِنْحُ اللَّيْلِ أَوْ أَمْسَيْتُمْ فَكُفُّوا صِبْيَانَكُمْ ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْتَشِرُ حِينَئِذٍ ، فَإِذَا ذَهَبَ سَاعَةً مِنَ اللَّيْلِ فَخَلَّوهُمْ وَأَغْلِقُوا الْأَبْوَابَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَفْتَحُ بَابًا مُغْلَقًا ، وَأَوْكُوا قِرَبَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ ، وَخَمِّرُوا آنِيَتَكُمْ ، وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ ، وَلَوْ أَنْ تَعْرِضُوا عَلَيْهِ شَيْئًا ، وَأَطْفِئُوا مَصَابِيحَكُمْ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন রাতের আঁধার নেমে আসে অথবা বলেছেন:যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের শিশুদেরকে (বাইরে যাওয়া থেকে) আটকে রাখো। কেননা সে সময় শয়তান ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তাদেরকে ছেড়ে দাও এবং বিসমিল্লাহ বলে ঘরের দরজাসমূহ বন্ধ করো। কারণ শয়তান বদ্ধদ্বার খুলতে পারে না। আর বিসমিল্লাহ পড়ে তোমাদের মশকগুলো (চামড়ার তৈরি পানির পাত্র বিশেষ) এর মুখ বন্ধ করো এবং বিসমিল্লাহ বলে তোমাদের পাত্রগুলোও ঢেকে রাখো। (ঢাকার কিছু না পেলে) কোন কিছু আড়াআড়িভাবে হলেও পাত্রের উপর রেখে দাও। (আর ঘুমানোর সময়) বাতিগুলো নিভিয়ে দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

উক্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নিম্নক্ত আমলগওলো করা যেতে:

কুরআন সুন্নাহের আলোকে শরীর বা ঘর বন্ধ করার নিয়ম হল, চার কুল ও সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ে শরীর বা ঘরের দরজাসমূহে ফু দেওয়া। বিশেষ করে সূলা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে ফু দেওয়া।

তাছাড়া আপনাকে ঘরোয়া ভাবে কিছু রুকইয়ার পরমার্শ দিচ্ছি,

(১)সকল প্রকার ফরয ওয়াজিব ইবাদত যত্নসহকারে পালন করা।এবং সকল প্রকার হারাম ও নাজায়ে কাজ হতে বেঁচে থাকা।

(২) অধিক পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াত করা।

(৩)দু', জায়েয তাবীয ও যিকিরের মাধ্যমে নিজেকে হেফাজতের চেষ্টা করা।

নিম্নোক্ত দু'আকে সকাল সন্ধ্যা তিনবার করে পড়া।

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ،

দেখুন-১০৯৩

প্রত্যক নামাযের পর ঘুমাইবার সময় এবং সকাল সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসী পড়া।এবং ঘুমাইবার সময় ও সকাল সন্ধ্যা তিনবার করে সূরা নাস,সূরা ফালাক্ব ও সূরা ইখলাস তিনবার করে পড়া।এবং প্রতিদিন নিম্নোক্ত দু'আটি একশতবার করে পড়া।

لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير،

প্রতিদিন সকাল সাতটা করে খেজুর খাওয়া।মদিনার খেজুর হলে ভালো।

এহেন পরিস্থিতিতে নিম্নোক্ত লিংকের প্রদত্ত আমল গুলো করতে পারেন।

https://ifatwa.info/13921/

https://www.ifatwa.info/3469

তাছাড়া মেডিকেল সায়েন্স থেকে  স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার পেছনে কিছু কারণকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে:

১. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হওয়া। অসময়ে ঘুমানো। অনেক সময় কাজের সময় নির্দিষ্ট না হলে, অথবা দূরে কোথাও ভ্রমনে গেলে এমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

২. মাদকাসক্ত হলে অথবা নিয়মিত ধূমপান ও মদপান করলে।

৩. পরিবারে কারও স্লিপ প্যারালাইসিস হয়ে থাকলে।

৪. সোশ্যাল অ্যাঙ্কজাইটি বা প্যানিক ডিসঅর্ডার বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে।

স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসকগণের পরামর্শ:

স্লিপ প্যারালাইসিস আসলে গুরুতর কোনও রোগ নয়। মাঝে মাঝে নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। মনকে চাপমুক্ত রাখার পাশাপাশি ঘুমানোর অভ্যাসে ও পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সাধারণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:

১. রাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা। এবং সেই ঘুম যেন গভীর হয়।

২. প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস করা। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও।

৩. ঘুমের জন্য শোবার ঘরটিতে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। যেন সেই ঘরে কোলাহল না থাকে, ঘরটি অন্ধকার থাকে এবং তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকে, খুব বেশি না আবার কমও না। সম্ভব হলে ঘরে ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে।

৪. ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ভারী খাবার সেইসঙ্গে ধূমপান, মদ পান এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করার চেষ্টা করা।

৬. ঘুমের সময় হাতের কাছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অর্থাৎ ঘুমের বাঁধা হতে পারে এমন কোন বস্তু রাখা যাবেনা।

৭. দিনের বেলা দীর্ঘসময় ঘুম থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮. স্লিপ প্যারালাইসিস হলে নিজের মনকে প্রবোধ দিতে হবে যে ভয়ের কিছু নেই, এই পরিস্থিতি সাময়িক, কিছুক্ষণ পর এমনই সব ঠিক হয়ে যাবে। এই সময়ে শরীর নাড়াচাড়া করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 76 views
0 votes
1 answer 83 views
...