আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
238 views
in দাফন ও জানাজা (Burial & Janazah) by (1 point)
শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব,                                                   
প্রায় দুই বছর পূর্বে আমার ছোট চাচা আমাদের গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন যার মুতাওাল্লি এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতি তিনি নিজে এবং সাধারন সম্পাদক মেঝো চাচা। প্রথমেই ছোট চাচা নিজ প্লটের ৪৩ হতে ৩৮ শতাংশ এবং লাগোয়া এজমালি জমির ৩৫ শতাংশে প্রাপ্য ৭ হতে ২ শতাংশ মোট ৪০ শতাংশ জমি উক্ত মাদ্রাসা, মসজিদ এবং এতিমখানার জন্য ওয়াকফ করেন। পরবর্তীতে আমরা দুই ভাই,আম্মা এবং সকল চাচাগণ মিলে ৩৮ শতাংশ জমি উক্ত মাদ্রাসা এবং এতিমখানার জন্য ওয়াকফ করি।                                             
গত কয়েক মাস পূর্বে ক্যান্সার আক্রান্ত একজন আত্মীয় নিজ অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণ এবং মসজিদ সংলগ্ন স্থানে উনার দাফনের জন্য জমি খোঁজ করেন। উনার ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য মাদ্রাসার পাশে জমি কেনার জন্য ছোট চাচা অসুস্থ আত্মীয়কে অনুপ্রানিত করেন। আশেপাশে জমি পাওয়া না গেলে মাদ্রাসার জমি থেকে অল্প জমি বিক্রয় করতে ছোট চাচা রাজি ছিলেন কিন্তু ওয়াকফ জমি বিক্রয় করা শরীয়ত সম্মত নয় বিধায় অসুস্থ আত্মীয় তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে এই ওসিয়ত করে মারা গিয়েছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মসজিদের জমির পাশে দাফনের ব্যাবস্থা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত উনাকে দাফন করা না হয়। প্রয়োজনে লাশ হিমাগারে রাখা হবে! ওছিয়তকারী সম্পর্কে আমার বাবার চাচাতো ভাই।  
আমার জানা মতে, ছোট চাচা উনার মাদ্রাসার জমিতে দাফন করে ওসিয়ত বাস্তবায়নকে জরুরী মনে করেন। তাই মরহুমের ইন্তেকালের পর উনার বাসায় গিয়ে মাদ্রাসার জমিতে দাফনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন এবং নগদ ৭০ হাজার টাকা গ্রহন করেন। উল্লেখ্য, ওয়াকফকৃত জামিতে দাফনের বিষয়ে ছোট চাচাকে দুই জন বিজ্ঞ মুফতি সাহেব অসম্মতি জানিয়েছিলেন অপরদিকে অন্য দুই জন মুফতি সাহেব সম্মতি জানিয়েছিলেন।এক্ষেত্রে লেনদেনের পদ্ধতি হচ্ছে ছোট চাচা মুতাওাল্লি হিসেবে মাদ্রাসার বৃহত্তর স্বার্থে নিজ ওয়াকফকৃত জমির ২ শতাংশ থেকে আধা শতাংশ  কবরস্থানের জন্য মরহুমের পরিবারের কাছে মৌখিকভাবে বিক্রয় করেন।এ ব্যাপারে ছোট চাচা উনার মেয়ের মাধ্যমে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে এই তথ্য প্রদান করেন- “যে জায়গায় কবর হয়েছে তা আব্বুর ছিল এবং তা ১০/১২/১৪ তারিখে আব্বু রেজিস্ট্রিকৃত ওয়াকফনামামূলে দান করেছেন।” যদিও মাদ্রাসা থেকে কোন মানি রিসিট/প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করা হয়নি। পরবর্তীতে মরহুমের ওয়ারিশগণের নামে কবরস্থানের জমি রেজিষ্ট্রেশন এবং সেখানে ওয়ারিশগণের দাফনের পরিকল্পনা আছে। মাদ্রাসা কমিটি খুব দ্রুত কবরস্থানের পাশের (ওয়াকফকৃত) জমিতে মসজিদ নির্মাণ করবেন। তাই উক্ত জামি মাদ্রাসা থেকে কিনে তা পুনঃওয়াকফ করতে এবং মসজিদ নির্মাণ খরচ প্রদান করার জন্য মরহুমের ওয়ারিশগণের প্রতি ছোট চাচা আহবান করেন।

প্রথম প্রশ্নঃ  কবরস্থানের জমি বিক্রয় এবং দাফন প্রক্রিয়া কি শরিয়তসম্মত ভাবে হয়েছে? নাজায়িজ হলে শরঈ সমাধান কি কি হতে পারে?
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ  মৃত্যুর আগে কোন ব্যক্তি তার ওয়ারিশগণ এবং আত্মীয় স্বজনের প্রতি ওসিয়ত করার পরিধি এবং বাস্তবায়নের উপর শরিয়তের কি বিধান? (যেমন- দাফন, সম্পত্তি দান)

তৃতীয় প্রশ্নঃ ওয়াকফ জমি যথাযথ খাতে ব্যবহার হচ্ছে কিনা-একজন ওয়াকফকারী হিসেবে এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য ফতোয়া বিভাগে আবেদন করা এবং প্রকাশ করা কি নিন্দনীয় ?

1 Answer

0 votes
by (709,920 points)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/4254 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
ওয়াকফ করার পর সেই ওয়াকফকৃত জায়গার মালিক কে হবে?
এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামগণের কিছুটা মতবিরোধ মূলক আলোচনা থাকলেও পরবর্তী সময়ের ফকিহগণ নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন-
وَعِنْدَهُمَا حَبْسُ الْعَيْنِ عَلَى حُكْمِ مِلْكِ اللَّهِ تَعَالَى عَلَى وَجْهٍ تَعُودُ مَنْفَعَتُهُ إلَى الْعِبَادِ فَيَلْزَمُ وَلَا يُبَاعُ وَلَا يُوهَبُ وَلَا يُورَثُ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ وَفِي الْعُيُونِ وَالْيَتِيمَةِ إنَّ الْفَتْوَى عَلَى قَوْلِهِمَا كَذَا فِي شَرْحِ أَبِي الْمَكَارِمِ لِلنُّقَايَةِ 
ইমাম আবু ইউসুফ রাহ ও ইমাম মুহাম্মদ রাহ এর মতে ওয়াকফকৃত জিনিষ মালিকের মালিকানা থেকে বের হয়ে আল্লাহর মালিকানায় এমন পদ্ধতিতে চলে যাবে যে, ওয়াকফকৃত জিনিষ থেকে মাখলুকাত ফায়দা অর্জন করবে।
উক্ত ওয়াকফকৃত জিনিষকে বিক্রি করা যাবে না,কাউকে হাদিয়্যা ও দেয়া যাবে না,এবং তার ওয়ারিছও কেউ হবে না।
উক্ত মতামতের উপরই পরবর্তী হানাফি ফকিহগণ ফাতাওয়া দিয়েছেন।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া-২/৩৫)

ওয়াকফ করার পর উক্ত ওয়াকফ সম্পর্কে ওয়াকফকারী যদি শরীয়ত সমর্থিত কোনো শর্ত করে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য।
এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেন-
ﻓَﺈِﻥَّ ﺷَﺮَاﺋِﻂَ اﻟْﻮَاﻗِﻒِ ﻣُﻌْﺘَﺒَﺮَﺓٌ ﺇﺫَا ﻟَﻢْ ﺗُﺨَﺎﻟِﻒْ اﻟﺸَّﺮْﻉَ ﻭَﻫُﻮَ ﻣَﺎﻟِﻚٌ، ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﻥْ ﻳَﺠْﻌَﻞَ ﻣَﺎﻟَﻪُ ﺣَﻴْﺚُ ﺷَﺎءَ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔ
শরীয়ত বিরোধী না হলে ওয়াকফ কারীর শর্তসমূহ গ্রহণযোগ্য,কেননা সে তো উক্ত মালেক মালিক ছিলো,তাই গোনাহের সম্ভাবনা না থাকলে সে তার মালকে যেখানে ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা সেখানেই রাখতে পারবে।(রদ্দুল মুহতার-শামেলা৪/৩৪৩)(শেষ)

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিত ওয়াকফের স্থানকে ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না এবং রদবদল করা যায় না।
যদি ওয়াকফকারীগণ জীবিত থাকেন, এবং তাদের সম্মতিতে ঐ ২শতক কবরের জন্য বিক্রয় হয়, তাহলে যদিও কাজটি অনুচিৎ হয়েছে, তথাপি দাফন প্রক্রিয়া বিশুদ্ধ হয়েছে।এখন লাশ হস্তান্তরের আর কোনো প্রয়োজনিয়তা নাই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...