১)কেউ নামাজের সময় খারাপ পোশাক পরে কিন্তু মানুষের সামনে গেলে খুব সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পড়ে।
সে যে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর সময় ভালো পোশাক না পড়ে মানুষের সামনে যাওয়ার সময় ভালো পোশাক পরছে এতে কি আল্লাহর চেয়ে মানুষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?? এটা কি শিরক??
২)একজন লোক নামাজ পড়ার সময় খুবই অবহেলা করে। একদম ভালোমতো নামাজ পড়ে না।
কিন্তু যখন সামনে ইমামতি করতে বলা হয় তখন সে খুব সুন্দর করে নামাজ পরে,যাতে তাকে অপমানিত না হতে হয়। তার এই কাজ কি বড় শির্ক নাকি ছোট শির্ক??
৩)সেদিন পরীক্ষায় নকল করলাম। নকল করার সময় মনে হইল, "নকল করলে আল্লাহ রাগ করবেন। "
কিন্তু তারপর মনে হলো, "এখন পড়াশোনায় ভালো করা খুব দরকার"।
তারপর নকল করলাম। এরপর থেকে আমার মনে হচ্ছে আমি মনে হয় পড়ালেখাকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভালবাসি। এখন এটা কি শিরক?? পড়াশোনা কি ছেড়ে দিব?
৪)আর কি কি লক্ষন দেখলে বুঝতে পারব যে আমি কোন কিছুকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভালবাসি??
মানে ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক বুঝব কিভাবে??
৫)আমি বুয়েটে চান্স পেতে চাই। আল্লাহর কাছে দুয়া করলাম। এরপর থেকে পরতে গেলেই মনে হয় যে আমি কি মনে করছি পরাশুনা না করলে বুয়েটে চান্স পাব না??
মানে আল্লাহর চাওয়ার পাশাপাশি আমার চেষ্টাও লাগবে??
এটা কি শিরক হবে না??"
৬)ধরুন কেউ বিশ্বাস করে যে রিজিকদাতা আল্লাহ।
চাকরি রিজিকের সন্ধান করার জন্য উসিলা হিসেবে করে।
তারপরেও তার মনে হচ্ছে যে।,"আমি হয়তো চাকরিকে রিযিকদাতা মনে করতেছি, কেননা আমার তাওয়াক্কুল এতটা শক্তিশালী না যে আমি আল্লার উপর ভরসা করে চাকরি না করে থাকতে পারব।তার মানে তো আমি মনে হয় চাকরি রিযিকদাতা মনে করে নিলাম। এখন কি শিরক?"
মানে সে চায় আল্লাহ কে রিযিকদাতা হিসেবে বিশ্বাস করতে আর উসিলা হিসেবে চাকরি করতে। কিন্তু মাঝে মধ্যে তার সন্দেহ হয় যে সে কি চাকরি কেই রিযিকদাতা হিসেবে বিশ্বাস করছে কি না।
এটা কি শিরক??
চাকরি ছেড়ে দিতে হবে??
৭)অন্য কোন ব্যাপারে যদি সামান্য একবারও মনে হয় যে শির্ক টাইপের বিশ্বাস হচ্ছে,তবে সাথে সাথে সেই কাজ বাদ দিয়ে দেয়।কিন্তু চাকরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ার ছাড়তে চাচ্ছে না।এতে কি শিরক হবে??
৮)আল্লাহর মর্যাদা আর আল্লাহর নামের মর্যাদা কি সমান??
আমরা আল্লাহর ইবাদাত করি নাকি আল্লাহর নামের??
৯)ধরুন,কারো কলেজের পাশে একটা 100 বছরের পুরনো বটগাছ ছিল। সে ক্লাস শেষে ওই বট গাছের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করতো গাছের কাছে। মানে শিরক করত।
এরপর সে তওবা করে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে আর কোনদিন ওই গাছের কাছে দোয়া করবে না
কিন্তু কিছুদিন পর আবারও সে ওই গাছের সামনে গাছের কাছে দোয়া করে ফেলেন
এরপর আবার আল্লাহর কাছে তওবা করে আর ওয়াদা করে যে আর যদি কোনদিন ওই গাছের সামনে গিয়ে গাছের কাছে দোয়া করবে না
এবং আল্লাহর কাছে এটাও ওয়াদা করে যে আর যদি কোনদিন ওই গাছের কাছে দোয়া করে ফেলে তবে সারা জীবনের জন্য কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিবে
এরপর একদিন সে সিলেটে বেড়াতে গেল এবং একটা মাজারে সিজদা করল
এখন তার একটা কথা মনে হল যে যেহেতু এখানে শিরক করল,তাই এখন শুধু তওবা করলেই চলবে কিন্তু যদি ঐ গাছের সামনে গিয়ে গাছের কাছে দুয়া করার মাধ্যমে শির্ক করত তাহলে তাকে তওবা করার সাথে সাথে কলেজ যাওয়াও বাদ দেওয়া লাগতো। এই ভেবে তার কাছে মনে হইল যে আল্লাহ বাচাইছে।
ওই গাছের সামনে গিয়ে গাছের কাছে দুয়া করার মাধ্যমে শিরক করার চেয়ে এখানে শিরক করা ভালো, কেননা এতে শুধু তওবা করলেই চলবে, কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে না।
এবং সে সিলেটের মাজারে সিজদা করার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইল।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই ছেলে কোনোভাবেই শিরক করা পছন্দ করেনা।
এবং শিরক করতে চায়ও না।
কিন্তু যখনই কোন শির্ক করে ফেলে তখন সে মনে করে যে গাছের কাছে দুয়া করার চেয়ে এই ভাবে শিরক তুলনামুলক ভাবে ভালো কেননা এতে তওবা করলেই চলে কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগেনা
এই যে সে অন্যান্য শিরক কে গাছের সামনে গিয়ে শিরক করা থেকে তুলনামূলক ভাবে ভালো হিসেবে নিচ্ছে এতে কি শিরক হবে??
(সে কোন শিরকই করতে চায় না,আর হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করে)
মানে মাজারে সিজদা দেওয়া শিরক সেটা জানি।সে এটার জন্য তাওবা করেছে।
আবার গাছের কাছে দুয়া করাও শিরক।সে এটার জন্যও তাওবা করেছে।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, ওই লোক কলেজ এর পাশের গাছের কাছে দুয়া করার মাধ্যমে শিরক করার চেয়ে অন্য শিরক কে একটু কম অপছন্দ করে, কেননা ওইসব শিরকে শুধু তওবা করলেই চলে,কিন্তু গাছের সামনে গিয়ে শিরক করলে তাকে কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে, যেহেতু সে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছে যে যদি কলেজ এর পাশের ওই গাছের সামনে গিয়ে শিরক করে, তবে কলেজ যাওয়া বাদ দিবে।
তার এই মনভাব কি শিরক হবে??
যদি এই মনভাব শিরক হয়েই থাকে তবে করনিও কি??
কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে?
সংক্ষিপ্ত ভাবে বললে,
ধরুন,একভাবে শিরক করলে তাওবা করার সাথে দুনিয়াবি কল্যাণকর কিছু জিনিস বাদ দেওয়া লাগবে
আর আরেক ভাবে শিরক করলে শুধু তওবা করলেই চলবে
আমি দুই প্রকার থেকেই বিরত থাকি,কিন্তু প্রথমটাতে যেহেতু তাওবা করার পরও জীবন থেকে দুনিয়াবি কল্যাণের কিছু জিনিস বাদ দেওয়া লাগবে, তাই এটার প্রতি ভয় একটু বেশি
আর দ্বিতীয় প্রকারের প্রতি একটু কম
এই মনোভাব কি শিরক???
১০)ওই বট গাছের সামনে শির্ক না করে অন্য কোনভাবে শিরক করলে মনের মধ্যে একটা খুশি চলে আসে যে যাক ওই গাছের সামনে গিয়ে শিরক করি নাই,তাই স্কুলে যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে না।এই মনভাব কি শিরক??(যদিও যেকোনোভাবে শির্কের পরে সে তওবা করে)
১১)আল্লাহ কে নিয়ে জানার চেয়ে দুনিয়াবি কোন কাজ কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া কি শিরক???
১২)ধরুন কোনো এক ভালো ছাত্র পড়াশোনা করতে খুব ভালবাসে।
সে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। বুয়েটে চান্স পেতে চায়। তার আব্বু আম্মু তাকে পরাশুনার জন্য খুব চাপ দেয়।
সে একদিন পরীক্ষা দিচ্ছিল।
পরীক্ষা দেওয়ার সময় সে একবার পিছনে ফিরে তাকায় বন্ধুর খাতা দেখার জন্য।
তখন পরীক্ষার হলে পাহারারত টিচার তার খাতা কেড়ে নেয়।
সে খুব হাতজোড় করে টিচারকে খাতা ফেরত দেওয়ার জন্য।
এরপর সে টিচারের পা ধরে বলে খাতাটা ফেরত দেওয়ার জন্য।
তাও শিক্ষক দেয়নি।
এরপর সে শিক্ষককে সিজদা করে
বলে খাতা ফেরত দেওয়ার জন্য। সে ইবাদতের উদ্দেশ্য নিয়েই শিক্ষক কে সিজদা দিছিল।
সে বুঝতে পারলো যে এটা শিরক হচ্ছে।
কিন্তু সে মনে মনে ভাবল শিরক থেকে বাঁচার চেয়ে পরীক্ষা দেওয়াটা,পড়ালেখায় ভালো করাটা তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এরপরে শিক্ষক তার খাতা ফেরত দিল।
এরপর সে পরীক্ষা শেষ করল।
এখন সে তোওবা করতে চায়।
সে কিভাবে তওবা করবে?
সে কালেমা শাহাদত পড়ে আল্লাহর কাছে এর জন্য মাফ চাইলে এবং যদি প্রতিজ্ঞা করে যে আর কোনদিন এভাবে কাউকে সেজদা দেবে না তাহলেই চলবে??
নাকি পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেওয়া লাগবে, যেহেতু সে পড়াশোনা কে শিরক থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছিলে এক সময়।
সে যদি তাওবা করে এবং পরাশুনা চালিয়ে যায়,তবে কি কোন সমস্যা আছে??(যেহেতু শিরক করে পরিক্ষা দিয়ে পাশ করছে,সে কি পরবর্তী শ্রেণীতে পরতে পারবে নাকি এই ফলাফল গ্রহণ না করে আবার একই ক্লাসে পরবে??)