আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
105 views
in সালাত(Prayer) by (28 points)
আসসালামু'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ উস্তায

একজন এর জীবনে প্রায় ৭ বছরের স্বলাত কাযা হয়েছে।কিন্তু এরমধ্যে সে অনেকদিন অনেক ওয়াক্ত স্বলাত পড়েছে,আবার ছেড়ে দিয়েছে এমন। এখন সে ৭ বছরেরই স্বলাত কাযা আদায় করতে চাচ্ছে।
১ নাম্বার প্রশ্নঃ এটা কি করতে পারবে ?
যদি পারে,তাহলে ১ বছরে ৩৬৫ দিন। ৭ বছরে ২৫৫৫ দিন। একেক দিনে ৫ ওয়াক্ত করে স্বলাত। ২৫৫৫×৫=১২,৭৭৫ ওয়াক্ত স্বলাত তার কাযা আদায় করতে হবে।

২ঃ নিয়্যাত টা কিভাবে করতে হবে?
৩ঃ স্বলাত গুলো কখন কখন আদায় করতে পারবে?
৪ঃ একদিনে কি সে ৫০-১০০ ওয়াক্ত স্বলাত কাযা আদায় করতে পারবে হিসেব খাতায় লিখে লিখে?
৫ঃ নাকি আরও ৭ বছর ধরে প্রতিদিন আসল ফজরের পর আবার কাযা ফজর পড়তে হবে? আসল যুহরের পর আবার  কাযা যুহর পড়তে হবে? এভাবে ৫ ওয়াক্ত এর সাথে ৫ ওয়াক্ত কাযা প্রতিদিন করতে করতে ৭ বছর লাগাতার কাযা আদায় করতে হবে?
৬ঃ বিতরের স্বলাত গুলোও কাযা আদায় করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (678,360 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
শরীয়তে ঈমানের পরই নামাযের স্থান এবং তা ইসলামের স্তম্ভ ও বড় নিদর্শনের একটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরয। কখনো কোনো ওয়াক্তের ফরয নামায ছুটে গেলে কিংবা দীর্ঘকাল অবহেলাবশত নামায না পড়লে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস, আছারে সাহাবা ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা প্রমাণিত।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى

অনুবাদ-যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়, তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২)

উমরি কাজা আদায়ের ক্ষেত্রে সহজের লক্ষ্যে উলামায়ে কেরামগন এর পদ্ধতি বলেছেনঃ   
হিসেব কষতে হবে যে জীবনে বালেগ/বালেগাহ হওয়ার পর নিশ্চিত ভাবে সর্বমোট কত ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়েছে।
,
যদি স্পষ্ট মনে না আসে,তাহলে প্রবল ধারনার ভিত্তিতে একটি হিসেব কষতে হবে।
দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ এবং বিতর মোট ৬ ওয়াক্ত নামাজের হিসেব বের করতে হবে।
প্রতি নামাজের  হিসেব লিখে প্রতিদিন সময় বের করে তার কাজা আদায় করবে।(নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতিত) 
,
এই ভাবে মনে মনে নিয়ত করবে যে আমার জীবনের ১ম ফজরের নামাজ যেটার কাজা আমি আদায় করিনি,সেটা আদায়ের নিয়ত করছি।
আমার জীবনের ১ম জোহরের নামাজ যেটার কাজা আমি আদায় করিনি,সেটা আদায়ের নিয়ত করছি,,,,,।
,
এবং সাথে সাথে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে নামাজ আদায় না করার কারনে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে।  

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি যেহেতু নিশ্চিত নন যে কত বছরের সালাত কাজা গিয়েছে,তাই প্রবল ধারনারর ভিত্তিতে প্রবল ধারনার ভিত্তিতে একটি হিসেব কষতে হবে।
দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ এবং বিতর মোট ৬ ওয়াক্ত নামাজের হিসেব বের করতে হবে।
প্রতি নামাজের  হিসেব লিখে প্রতিদিন সময় বের করে তার কাজা আদায় করবে।(নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতিত) 

উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে নিয়ত করে কাজা আদায় করবেন।

(০২)
ইবনে আবেদীন শামী রাহ কাযা নামায পড়ার নিয়ম এভাবে দিয়েছেন যে,

ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ - ﻛَﺜُﺮَﺕْ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺋِﺖُ ﻧَﻮَﻯ ﺃَﻭَّﻝَ ﻇُﻬْﺮٍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻭْ ﺁﺧِﺮَﻩُ،

ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺎﺑﺪﻳﻦ ﺍﻟﺸﺎﻣﻰ – ( ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻛَﺜُﺮَﺕْ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺋِﺖُ ﺇﻟَﺦْ ) ﻣِﺜَﺎﻟُﻪُ : ﻟَﻮْ ﻓَﺎﺗَﻪُ ﺻَﻠَﺎﺓُ ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ ﻭَﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺍﻟﺴَّﺒْﺖِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﻀَﺎﻫَﺎ ﻟَﺎ ﺑُﺪَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺘَّﻌْﻴِﻴﻦِ ﻟِﺄَﻥَّ ﻓَﺠْﺮَ ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ ﻣَﺜَﻠًﺎ ﻏَﻴْﺮُ ﻓَﺠْﺮِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺗَﺴْﻬِﻴﻞَ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ، ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺃَﻭَّﻝَ ﻓَﺠْﺮٍ ﻣَﺜَﻠًﺎ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺇﺫَﺍ ﺻَﻠَّﺎﻩُ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﻣَﺎ ﻳَﻠِﻴﻪِ ﺃَﻭَّﻟًﺎ ﺃَﻭْ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺁﺧِﺮَ ﻓَﺠْﺮٍ، ﻓَﺈِﻥَّ ﻣَﺎ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﺁﺧِﺮًﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻩُ ﻋَﻜْﺲُ ﺍﻟﺘَّﺮْﺗِﻴﺐِ ﻟِﺴُﻘُﻮﻃِﻪِ ﺑِﻜَﺜْﺮَﺓِ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺋِﺖِ . ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻗﻀﺎﺀ ﺍﻟﻔﻮﺍﺋﺖ - 2/538

ভাবানুবাদঃ-উমরী কাযা নামায আদায় করতে হলে প্রথমে কোন ওয়াক্তের কতটা নামায কাযা হয়েছে তা নির্ণয় করবে।যদি সেটা নির্ণয় করা সম্ভব না হয়। তাহলে অনুমান করে নিবে। অনুমান করে কোন ওয়াক্তের কতটি নামায কাযা হয়েছে সেটা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর ধারাবাহিকভাবে একে একে সবগুলোকে  আদায় করে নিবে।

যেমন, ফজরের নামায সর্বমোট ১০০ ওয়াক্তের কাযা হয়েছে। তখন কাযা নামায আদায় করার সময় এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা রয়েছে, সে অনাদায়কৃত নামায সমূহের মধ্য থেকে প্রথম ফজরের নামাযকে এখন কাযা আদায় করছি” এমন নিয়তে নামায আদায় করবে।এভাবে হিসেবে করে পড়তে থাকবে। প্রতিবার অনাদায়কৃত প্রথম ফজরের নামায বলার দ্বারা তার যিম্মায় যতগুলো নামায বাকি ছিলো, সেগুলোর প্রথম নামাযের নিয়ত হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে নিয়তটি নির্দিষ্ট নামাযেরই হচ্ছে।ঠিক উল্টোভাবেও করা যায়। অর্থাৎ যত নামায কাযা আছে তার সর্বশেষ অনাদায়কৃত কাযার নিয়ত করছি। এভাবেও পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে বাকি নামাযের কাযা আদায় করা যাবে।(রদ্দুল মুহতার-২/৫৩৮)

এ ধারাবাহিকতায় বাকি নামায সমূহের ক্বাযা আদায় করবে। যোহর, আছর, মাগরিব, ইশা এবং সাথে বিতিরের নামাযকে ও এভাবেই আদায় করে নিবে।বিতিরের নামাযের ক্বাযা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/629

★সুতরাং এই ভাবে মনে মনে নিয়ত করবেন যে
আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা রয়েছে, সে অনাদায়কৃত নামায সমূহের মধ্য থেকে প্রথম বা শেষ ফজরের নামাযকে এখন কাযা আদায় করছি” 

(০৩)
নিষিদ্ধ তিন ওয়াক্ত ব্যাতিত সব সময় আদায় করা যাবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
উকবা বিন আমের জুহানী রাযি. বলেন,

ثَلاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ

তিনটি সময়ে রাসুল ﷺ আমাদেরকে নামাজ পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। আর যখন সূর্য অস্ত যায়। (সহীহ মুসলিম ১৩৭৩)

(০৪)
হ্যাঁ  পারবে।

(০৫)
না,এমনটি নয়।
এক সময়েই অনেক গুলো ওয়াক্তের নামাজে কাজা আদায় করা যাবে।

(০৬)
হ্যাঁ বিতরের সালাত গুলিরও কাজা আদায় করতে হবে।
জনসম্মুখে কাজা আদায় করলে দোয়ায়ে কুনুতের সময় তাকবির বলে হাত উঠাতে হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (28 points)
যাজাকাল্লাহু খইরন উস্তায প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দরভাবে বুঝে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 41 views
0 votes
1 answer 46 views
...