আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
167 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (41 points)
আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্নটা একজন বোন করেছেন।সেটাই হুবহু এখানে তুলে ধরছি। উত্তর জানাবেন প্লিজ।


১)আমি খুবই বিপদে আছি আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ।আমি রোজা রাখি,নামায পড়ি,তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করি,নিজে সামান্য যা কি জানি,সেসব অন্যদের জানাতে চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমি হারাম দিকে দৃষ্টিপাত করা বন্ধ করতে পারছি না।আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না।আমার প্রায়ই মনে হয় আমি ঈমান নিয়ে মরতে পারব না।জাহান্নামে যাব।আল্লাহ আমাকে মাফ করুক।


আমি মুভি, সিরিয়াল,এডাল্ট ভিডিও  এসব দেখা অনেক দিন বাদ দেই।তারপর শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা আমার নিজের দুর্বলতার জন্যই আমি আবার সেসবের কাছে ফেরত যাই।


এ নিয়ে কিছু বিস্তারিত বলি।মাফ করবেন, এ ধরনের বিষয় জানানোর জন্য। আমার সাহায্যের প্রয়োজন,এজন্য জানাতে বাধ্য হচ্ছি।আমি স্বপ্নে দেখি,উলঙ্গ নারী/সেটা মনে হয় আমিই ছিলাম।এমন কিছু স্বপ্নে দেখার পরদিনই আমি পর্ন ভিডিও টানা দু দিন ধরে দেখেছি।বন্ধ করেও করতে পারি নি।বারবার নিজের নাফসের কাছে হেরে গিয়েছি।


তারপর গত পরশু দিন আবার স্বপ্নে দেখলাম।একজন পুরুষ তাকে আমি চিনি না, যার সাথে আমার খুবই হাসিখুশি সম্পর্ক।এক পর্যায়ে আমি আর সে বিছানায় গেলাম। সে আমার স্তনে হাত দিয়েছে।তখনই আমি তার হাত টা ছাড়িয়ে সেখান থেকে উঠে যাই।তার সাথে আমার কোন কিছু অর্থাৎ কোন শারীরিক সম্পর্ক হয় নি।সেখানেই আমার স্বপ্ন শেষ।


পরদিন থেকে পর্ন ভিডিও দেখেছি।নিজের চাহিদাকে যেন দমিয়ে রাখতেই পারছিনা।এসবের কারন কি?স্বপ্নের সাথে কোন সম্পর্ক আছে?এসবের  মানেই বা কি?


২)আমি উপরে যে স্বপ্নের কথা বললাম সেসব ছাড়াও আমি পর্ন ভিডিও দেখি।সেসব এমন।মাস খানেক আমি টোটালি এসব থেকে দূরে।কিন্তু হঠাৎ করে লাগামছাড়া অনুভূতি আসে, মাথায় অনবরত ঘুরতে থাকে।
আমি মোবাইল, নেট কানেকশন সব বন্ধ করেও রাখার চেষ্টা করেছি। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।এত কষ্ট লাগে।পরে মোবাইল অন করি,নেট কানেকশন দেই।তারপর পর্ন ভিডিও দেখি। কখনো এমন হয়েছে মাস্টারবেট করেছি।তারপর ও নিজেকে এত নোংরা মনে হয়েছে যে মরে যেতেও ইচ্ছে হয়েছে।


আমি বারবার চিন্তা করি,আর কোন দিনও দেখব না। তাহাজ্জুদ এ দুআ করি, এমনিতে দুআ করি আল্লাহ যেন আমার অন্তর থেকে এসব মুছে দেন।আমি যাতে জীবনে কোনদিন এসব না দেখি।দুআ করি।তারপর ঘুরে ফিরে আবার পর্ন দেখতে যাই।আল্লাহ আমাকে মাফ করুক। আমি পর্ন দেখতে দেখতে ও ভাবি এ মুহূর্তে যদি আমি মারা যাই কি হবে?


আমি পর্ন সেটিং বন্ধ করে রেখেছি যার কারনে দেখা যায় না।দেখার সময় সেসব সেটিংস খুলে আবার দেখি।আমার সমস্যার তীব্রতা এত বেশি।


আমি অবিবাহিত। বিয়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে সে সম্পর্কে অবগত।বাসায় সেসব চেষ্টা করা হচ্ছে। যখন বিয়ে হবে,তো হবেই।কিন্তু আমার এ অভ্যাস থেকে মুক্তি কিভাবে পাব।আমার একেক সময় দম বন্ধ হয়ে আসে।খুব কষ্ট লাগে।


সবাই শুধু হারাম, কবিরা গুনাহ বলে ফতোয়া দিয়েছেন।সে বিষয়েও অবগত। কিন্তু আমার সমস্যার গভীরতা কাউকে বুঝাতে পারছি না।এই নোংরা কাজটাই তো বারবার হচ্ছে। আমি কি করব?

1 Answer

+1 vote
by (682,440 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

“আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছে এবং হারাম করেছেন পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।” [সূরা আরাফ: ৩৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا

“নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা ইসরা: ৩৬)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

https://ifatwa.info/9968/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ
নিয়মিত নামায আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে, তাঁকে স্মরণ করে, তাঁর কিতাব তেলাওয়াত করে স্বাদ অনুভব করতে হবে। 

আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। (সূরা আনকাবুত ৪৫)

একবার সাহাবারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলল, অমুক সাহাবী বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সে কি এখনো নামাজ পড়ে? সবাই বলল, হ্যাঁ, পড়ে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। (মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৭)
,
★বেশি বেশি যিকির করতে হবে।
★মাস্তুরাত জামাতে যেতে পারেন।
★নিজের ভিতর থেকে হতাশা সম্পূর্ন ভাবে দূর করে দিন। আলোর পথে আসুন।
   
★অসৎ সাথীদের সাথে উঠাবসা, ঘুরাফেরা বন্ধ করুন।
,
★যেই জায়গা,যেই কাজ করলেই ঐ বিষয় গুলো মাথায় আসে,সেই জায়গায় যাওয়া সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
,   
★হক্কানী শায়েখদের জান্নাত জাহান্নামের বয়ান শুনবেন।

★কোনোভাবেই একাকী থাকা যাবেনা।
কিভাবে কাহারো সাথে থাকা যায়,সেই ব্যবস্থা করুন।
 
বিশেষ করে একাকী রাত কোনোভাবেই কাটানো যাবেনা। 
আপনার রুমে অন্য কোনো মহিলার থাকা নিশ্চিত করুন।

হাদিসে এসেছে নবী ﷺ কোন পুরুষকে একাকী রাত কাটাতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ ২/৯১)
নারী হিসেবেও এই হাদীসের উপর আমল করুন।

ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলতে হবে। যেমন ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না-ঘুমানো; যেহেতু এ সম্পর্কে নবী ﷺ-এর নিষেধ আছে।

★কাছে মোবাইল বা কম্পিউটার  রাখা যাবেনা,সেটি অন্য ঘরে রেখে আসতে হবে।

যথাসম্ভব মাগরিবের পর থেকেই মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে।
,
★অনৈসলামিক কোনো কিছুই মোবাইল,কম্পিউটারে রাখা যাবেনা।
,
★নেটে এজাতীয় সাইটে কোনোভাবেই যাওয়া যাবেনা।
 পর্ন সেটিং বন্ধ করে দিন।
   
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত সেই বোনকে বলবোঃ
উপরে উল্লেখিত পরামর্শ গুলো মেনে চলবেন।
বিবাহের চেষ্টা চালিয়ে যান,বিবাহের আগ পর্যন্ত নিজেকে সংবরন করতে না পারলে প্রয়োজনে লাগাতার রোযা রাখতে পারেন।

বিবাহের পরেও যদি পর্ণ দেখা হতে বিরত না থাকতে পারেন,সেক্ষেত্রে প্রতিরাতে স্বামীর সাথেই থাকবেন। নিয়মিত স্বামীর সাথে সহবাস করবেন।
স্বামী ছাড়া একাকী রাত কাটাবেননা।
একাকিত্ব পরিহার করে চলবেন।
প্রয়োজনে স্মার্ট ফোন ব্যবহার ছেড়ে দিয়ে সাধারণ সেট ব্যবহার করবেন।
কম্পিউটার ব্যবহার পরিহার করুন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 99 views
0 votes
1 answer 34 views
...