আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
95 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (28 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

১. কেউ চার রাকাত সালাতের ২য় রাকাতের বৈঠকে তাশাহুদের পর ভুলে দরূদ পড়া শুরু করল। এমনকি আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ এর পরের অংশে চলে গেল। এরপর হঠাৎ তার মনে পড়ল এটা তো ২য় রাকাতের বৈঠক। এবার সে কি দরূদ পুরোটা পড়ে শেষ করবে নাকি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাবে?

২. কেউ মারা গেলে আমাদের এলাকায় লোক খাওয়ানোর প্রচলন আছে। ব্যাপারটা এতটাই প্রচলিত যে মৃত ব্যক্তির  আত্মীয়দের খাওয়ানোর আয়োজন না করে উপায় নেই। অন্যরা কথা শোনাবে। তাই অনেকে সামর্থ্য না থাকলেও বাধ্য হয়ে ধার-কর্জ করে খাওয়ানোর আয়োজন করেন। চাপে পড়ে আয়োজন করার পর তারা যদি খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেন, না গেলে রাগ করেন তবে তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে কি? না গেলে আত্মীয়তার সম্পর্কে আঘাত পড়বে।

অপরদিকে যদি খুশি মনে খাওয়ান এবং দাওয়াত দেন তবে এ ধরণের খাবার খাওয়া যাবে কি? উল্লেখ্য, এখানে মূলত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শীদের খাওয়ানো হয়।

৩. সুদদাতা ও সুদগ্রহীতার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

৪. নামাজের রূকুতে হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফীহ নামে একটা দুয়া পড়ার কথা আছে। এই দুয়া পড়ার ফজিলত কী? এই দুয়াটা রব্বানা লাকাল হামদ বলার আগে পড়তে হয়? নাকি পরে?

1 Answer

0 votes
by (676,960 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
সে দরুদ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখে সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে যাবে।
এবং শেষে সেজদায়ে সাহু দিবে।

(০২)
চাপে পড়ে আয়োজন করার পর তারা যদি খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেন, না গেলে রাগ করেন,বা যদি খুশি মনে খাওয়ান এবং দাওয়াত দেন,উভয় ছুরতেই এটি যদি তিন দিনা বা চল্লিশা বা মৃত্যুবার্ষিকি হয়,সেক্ষেত্রে সেই দাওয়াত খাওয়া যাবেনা।

আর যদি এমনটি না হয়,এমনিতেই অন্য কোনো দিনে দাওয়াত হয়,সেক্ষেত্রে যেহেতু এটি ধনীদের জন্যেও রান্না হয়েছে,তাই সেই দাওয়াত খাওয়া যাবে।
তবে যারা নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক, তারা উক্ত দাওয়াত খেলে মাইয়্যিতের ঈসালে ছওয়াব হবেনা।

তাই ধনীদের জন্য এই ছুরতে না যাওয়াই উত্তম হবে।

(০৩)
সুদ দাতার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর লা'নতের কথা পাওয়া যায়।
তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শাস্তির বিবরন হাদীস শরীফে পাইনি।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ.

যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে সুদ খাওয়ায় উভয়কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৫১০৪

★সুদ গ্রহীতার শাস্তির বিবরণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُہُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَہٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّہٖ فَانۡتَہٰی فَلَہٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُہٗۤ اِلَی اللّٰہِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۷۵﴾

যারা সুদ(১) খায়(২) তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে(৩)। এটা এ জন্য যে তারা বলে(৪), ‘ক্রয়-বিক্রয় তো সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন।(৫) অতএব যার নিকট তার রব-এর পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
(সুরা বাকারা ২৭৫)

★সুদ গ্রহীতার শাস্তির বিবরণ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ-

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى صَلاَةً أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ مَنْ رَأَى مِنْكُمْ اللَّيْلَةَ رُؤْيَا قَالَ فَإِنْ رَأَى أَحَدٌ قَصَّهَا فَيَقُولُ مَا شَاءَ اللهُ فَسَأَلَنَا يَوْمًا فَقَالَ هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ رُؤْيَا قُلْنَا لاَ قَالَ لَكِنِّي رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتَيَانِي فَأَخَذَا بِيَدِي فَأَخْرَجَانِي إِلَى الأَرْضِ الْمُقَدَّسَةِ فَإِذَا رَجُلٌ جَالِسٌ وَرَجُلٌ قَائِمٌ بِيَدِهِ كَلُّوبٌ مِنْ حَدِيدٍ قَالَ بَعْضُ أَصْحَابِنَا عَنْ مُوسَى إِنَّهُ يُدْخِلُ ذَلِكَ الْكَلُّوبَ فِي شِدْقِهِ حَتَّى يَبْلُغَ قَفَاهُ ثُمَّ يَفْعَلُ بِشِدْقِهِ الآخَرِ مِثْلَ ذَلِكَ وَيَلْتَئِمُ شِدْقُهُ هَذَا فَيَعُودُ فَيَصْنَعُ مِثْلَهُ قُلْتُ مَا هَذَا قَالاَ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ عَلَى قَفَاهُ وَرَجُلٌ قَائِمٌ عَلَى رَأْسِهِ بِفِهْرٍ أَوْ صَخْرَةٍ فَيَشْدَخُ بِهِ رَأْسَهُ فَإِذَا ضَرَبَهُ تَدَهْدَهَ الْحَجَرُ فَانْطَلَقَ إِلَيْهِ لِيَأْخُذَهُ فَلاَ يَرْجِعُ إِلَى هَذَا حَتَّى يَلْتَئِمَ رَأْسُهُ وَعَادَ رَأْسُهُ كَمَا هُوَ فَعَادَ إِلَيْهِ فَضَرَبَهُ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالاَ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا إِلَى ثَقْبٍ مِثْلِ التَّنُّورِ أَعْلاَهُ ضَيِّقٌ وَأَسْفَلُهُ وَاسِعٌ يَتَوَقَّدُ تَحْتَهُ نَارًا فَإِذَا اقْتَرَبَ ارْتَفَعُوا حَتَّى كَادَ أَنْ يَخْرُجُوا فَإِذَا خَمَدَتْ رَجَعُوا فِيهَا وَفِيهَا رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالاَ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ مِنْ دَمٍ فِيهِ رَجُلٌ قَائِمٌ عَلَى وَسَطِ النَّهَرِ قَالَ يَزِيدُ وَوَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ عَنْ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ وَعَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ بَيْنَ يَدَيْهِ حِجَارَةٌ فَأَقْبَلَ الرَّجُلُ الَّذِي فِي النَّهَرِ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ رَمَى الرَّجُلُ بِحَجَرٍ فِي فِيهِ فَرَدَّهُ حَيْثُ كَانَ فَجَعَلَ كُلَّمَا جَاءَ لِيَخْرُجَ رَمَى فِي فِيهِ بِحَجَرٍ فَيَرْجِعُ كَمَا كَانَ فَقُلْتُ مَا هَذَا قَالاَ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ خَضْرَاءَ فِيهَا شَجَرَةٌ عَظِيمَةٌ وَفِي أَصْلِهَا شَيْخٌ وَصِبْيَانٌ وَإِذَا رَجُلٌ قَرِيبٌ مِنْ الشَّجَرَةِ بَيْنَ يَدَيْهِ نَارٌ يُوقِدُهَا فَصَعِدَا بِي فِي الشَّجَرَةِ وَأَدْخَلاَنِي دَارًا لَمْ أَرَ قَطُّ أَحْسَنَ مِنْهَا فِيهَا رِجَالٌ شُيُوخٌ وَشَبَابٌ وَنِسَاءٌ وَصِبْيَانٌ ثُمَّ أَخْرَجَانِي مِنْهَا فَصَعِدَا بِي الشَّجَرَةَ فَأَدْخَلاَنِي دَارًا هِيَ أَحْسَنُ وَأَفْضَلُ فِيهَا شُيُوخٌ وَشَبَابٌ قُلْتُ طَوَّفْتُمَانِي اللَّيْلَةَ فَأَخْبِرَانِي عَمَّا رَأَيْتُ قَالاَ نَعَمْ أَمَّا الَّذِي رَأَيْتَهُ يُشَقُّ شِدْقُهُ فَكَذَّابٌ يُحَدِّثُ بِالْكَذْبَةِ فَتُحْمَلُ عَنْهُ حَتَّى تَبْلُغَ الآفَاقَ فَيُصْنَعُ بِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَالَّذِي رَأَيْتَهُ يُشْدَخُ رَأْسُهُ فَرَجُلٌ عَلَّمَهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَنَامَ عَنْهُ بِاللَّيْلِ وَلَمْ يَعْمَلْ فِيهِ بِالنَّهَارِ يُفْعَلُ بِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَالَّذِي رَأَيْتَهُ فِي الثَّقْبِ فَهُمْ الزُّنَاةُ وَالَّذِي رَأَيْتَهُ فِي النَّهَرِ آكِلُوا الرِّبَا وَالشَّيْخُ فِي أَصْلِ الشَّجَرَةِ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَم وَالصِّبْيَانُ حَوْلَهُ فَأَوْلاَدُ النَّاسِ وَالَّذِي يُوقِدُ النَّارَ مَالِكٌ خَازِنُ النَّارِ وَالدَّارُ الأُولَى الَّتِي دَخَلْتَ دَارُ عَامَّةِ الْمُؤْمِنِينَ وَأَمَّا هَذِهِ الدَّارُ فَدَارُ الشُّهَدَاءِ وَأَنَا جِبْرِيلُ وَهَذَا مِيكَائِيلُ فَارْفَعْ رَأْسَكَ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا فَوْقِي مِثْلُ السَّحَابِ قَالاَ ذَاكَ مَنْزِلُكَ قُلْتُ دَعَانِي أَدْخُلْ مَنْزِلِي قَالاَ إِنَّهُ بَقِيَ لَكَ عُمُرٌ لَمْ تَسْتَكْمِلْهُ فَلَوْ اسْتَكْمَلْتَ أَتَيْتَ مَنْزِلَكَ

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজর) সালাত শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ গত রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? (বর্ণনাকারী) বলেন, কেউ স্বপ্ন, দেখে থাকলে তিনি তা বিবৃত করতেন। তিনি তখন আল্লাহ্র মর্যী মুতাবিক তাবীর বলতেন। একদা আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ? আমরা বললাম, জী না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গত রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার দু’হাত ধরে আমাকে পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চললো। হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া হাতে দাঁড়িয়ে। [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] আমাদের এক সাথী মু‘সা (রহ.) বর্ণনা করেছেন যে, দাঁড়ানো ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আঁকড়া বিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পিছনের দিক পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। অতঃপর অপর চোয়ালটিও আগের মত বিদীর্ণ করল। ততক্ষণে প্রথম চোয়ালটা জোড়া লেগে যাচ্ছিল। আঁকড়াধারী ব্যক্তি পুনরায় সেরূপ করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কী হচ্ছে? সাথীদ্বয় বললেন, (পরে বলা হবে এখন) চলুন।

আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির পাশে এসে উপস্থিত হলাম, তার মাথার নিকট পাথর হাতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পাথর দিয়ে তার মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছিল। নিক্ষিপ্ত পাথর দূরে গড়িয়ে যাওয়ার ফলে তা তুলে নিয়ে শায়িত ব্যক্তির নিকট ফিরে আসার পূর্বেই বিচূর্ণ মাথা আগের মত জোড়া লেগে যাচ্ছিল। সে পুনরায় মাথার উপরে পাথর নিক্ষেপ করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকটি কে? তাঁরা বললেন, চলুন। আমরা অগ্রসর হয়ে তন্দুরের ন্যায় এক গর্তের নিকট উপস্থিত হলাম। গর্তের উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ ও নীচের অংশ প্রশস্ত এবং এর তলদেশ হতে আগুন জ্বলছিল। আগুন গর্তের মুখের নিকটবর্তী হলে সেখানের লোকগুলোও উপরে চলে আসে যেন তারা গর্ত হতে বের হয়ে যাবে। আগুন ক্ষীণ হয়ে গেলে তারাও (তলদেশে) ফিরে যায়। গর্তের মধ্যে বহুসংখ্যক উলঙ্গ নারী-পুরুষ ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তাঁরা বললেন, চলুন। আমরা চলতে চলতে একটি রক্ত প্রবাহিত নদীর কাছে হাযির হলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তি দাঁড়ানো ছিল। নদীর তীরে অপর এক ব্যক্তি যার সামনে ছিল পাথর। নদীর মাঝখানের লোকটি নদী হতে বের হয়ে আসার জন্য অগ্রসর হলেই তীরে দাঁড়ানো লোকটি সে ব্যক্তির মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করছিল, এতে সে পূর্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছিল। এমনভাবে যতবার সে তীরে উঠে আসতে চেষ্টা করে ততবার সে ব্যক্তি তার মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করে পূর্বস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। আমি জানতে চাইলাম, এ ঘটনার কারণ কী? তাঁরা বললেন, চলতে থাকুন।

আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় এক বৃদ্ধ ও বেশ কিছু বালক-বালিকা ছিল। হঠাৎ দেখি যে, গাছটির সন্নিকটে জনৈক ব্যক্তি আগুন জ্বালাচ্ছে। সাথীদ্বয় আমাকে নিয়ে গাছে আরোহণ করে এমন একটি বাড়িতে প্রবেশ করলেন যার চেয়ে সুদৃশ্য বাড়ি ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। বাড়িতে বহু সংখ্যক বৃদ্ধ, যুবক, নারী এবং বালক-বালিকা ছিল। অতঃপর তাঁরা আমাকে সেখান হতে বের করে নিয়ে গাছে আরো উপরে আরোহণ করে অপর একটি বাড়িতে প্রবেশ করালেন। এটা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুদৃশ্য ও মনোরম। বাড়িটিতে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। আমি বললাম, আজ রাতে আপনারা আমাকে (বহুদূর পর্যন্ত) ভ্রমণ করালেন। এবার বলুন, যা দেখলাম তার তাৎপর্য কী? তাঁরা বললেন, না, আপনি যে ব্যক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী; মিথ্যা কথা বলে বেড়াতো, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর দূরান্তে পৌঁছে যেতো। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত তার সঙ্গে এ ব্যবহার করা হবে। আপনি যার মাথা চূর্ণ করতে দেখলেন, সে এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ্ কুরআনের শিক্ষা দান করেছিলেন, কিন্তু রাতের বেলায় সে কুরআন হতে বিরত হয়ে নিদ্রা যেতো এবং দিনের বেলায় কুরআন অনুযায়ী ‘আমল করতো না। তার সাথে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত এরূপই করা হবে। গর্তের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখলেন, তারা ব্যভিচারী। (রক্ত প্রবাহিত) নদীতে আপনি যাকে দেখলেন, সে সুদখোর। গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন তিনি ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান। যিনি আগুন জ্বালাচ্ছিলেন তিনি হলেন, জাহান্নামের খাযিন-মালিক নামক ফেরেশ্তা। প্রথম যে বাড়িতে আপনি প্রবেশ করলেন তা সাধারণ মু’মিনদের বাসস্থান। আর এ বাড়িটি হলো শহীদগণের আবাস। আমি (হলাম) জিব্রাঈল আর ইনি হলেন মীকাঈল। (এরপর জিব্রাঈল আমাকে বললেন) আপনার মাথা উপরে উঠান। আমি উঠিয়ে মেঘমালার মত কিছু দেখলাম। তাঁরা বললেন, এটাই হলো আপনার আবাসস্থল। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দিন আমি আমার আবাসস্থলে প্রবেশ করি। তাঁরা বললেন, এখনো আপনার আয়ু কিছু সময়ের জন্য রয়ে গেছে, যা এখনো পূর্ণ হয়নি। অবশিষ্ট সময় পূর্ণ হলে অবশ্যই আপনি স্বীয় আবাসে চলে আসবেন। (বুখারী ১৩৮৬.৮৪৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩০৩)

হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রা:) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম (সা:) বলেছেন:
আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’জন লোক আমার কাছে আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চলছে। যেতে যেতে আমরা
রক্তে পরিপূর্ণ এক নহরের পাড়ে দাঁড়ালাম। এ সময় আমরা দু’জন লোককে দেখতে পেলাম,
একজন এ নহরের মাঝে দাঁড়ানো, আরেকজন নহরের পাড়ে দাঁড়ানো। কিনারে দাঁড়ানো লোকটির সম্মুখে অনেকগুলো পাথর। নহরের ভিতরে দাঁড়ানোর লোকটি কিনারার দিকে আসতে ইচ্ছা করলে, পাড়ের লোকটি তার মুখে স্বজোরে পাথর নিক্ষেপ করে যে, লোকটি পুনরায় পূর্বেকার জায়গায় পৌঁছে যায়। সে যতবারই পাড়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে
পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
রাসূলে আকরাম (সা:) জিজ্ঞাসা করলেন: এ লোকটি কে?
যার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। উত্তরে বলা হল: এ হচ্ছে সুদখোর ব্যক্তি…[বুখারী]

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন:
শবে মেরাজ রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ করানোর সময় আমি আমার মাথার উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম,
যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল (আ:) ! এরা কারা? তিনি উত্তরে বললেনঃ এরা সুদখোরের দল…[ইবনে মাজাহ ও আহমদ]

(০৪)
এ দোয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ نُعَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْمُجْمِرِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ يَحْيَى بْنِ خَلاَّدٍ الزُّرَقِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعٍ الزُّرَقِيِّ، قَالَ كُنَّا يَوْمًا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ " سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ". قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ " مَنِ الْمُتَكَلِّمُ ". قَالَ أَنَا. قَالَ " رَأَيْتُ بِضْعَةً وَثَلاَثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُونَهَا، أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَوَّلُ ".

রিফা‘আহ ইবনু রাফি’ যুরাকী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বললেন, তখন পিছন হতে এক সহাবা رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ  বললেন। সালাত শেষ করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে এরূপ বলেছিল? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম ত্রিশ জনের অধিক মালাইকাহ এর সওয়াব কে পূর্বে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। 
(বুখারী ৭৯৯.আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬৩,নাসায়ী ১০৬২, আবূ দাঊদ ৭৭০, তিরমিযী ৪০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯১০,মিশকাত ৮৭৮। )

★এই দোয়া রুকু থেকে উঠে রব্বানা লাকাল হামদ বলার পরে পড়তে হয়।
তবে এটি পাঠ করা আবশ্যকীয় নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...