আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
59 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,

আমি একটা বিষয়ে জানতে চাই সেটা হলো :
মানসিক রোগ: অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই

অবসেশন:
অবসেশন শব্দের অর্থ হল একই চিন্তা, কোনও ছবি বা ইচ্ছা মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাওয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি বুঝতে পারেন যে, তাঁর এই ভাবনা অমূলক, অর্থহীন, প্রয়োজনাতিরিক্ত। তবুও তিনি সেই চিন্তা বা ইচ্ছাকে আটকাতে পারেন না বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। স্বাভাবিক ভাবেই দেখা দেয় অস্বস্তি।
অবসেশন বা এধরণের চিন্তার বিষয় যেকোন কিছু হতে পারে। ভালো-মন্দ, সুন্দর- অসুন্দর বা নতুন কিছু সব ধরনের চিন্তাই মনে আসতে পারে। তবে রোগের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ওসিডি-এর ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় গুলো সাধারণত হয় ময়লা, ধর্ম, যৌনতা, বিভিন্ন রকমের রোগ, রাগ ইত্যাদি নিয়ে।

আমার প্রশ্ন হলো:
প্রশ্ন ১:

অনেক ধরনের OCD বা শুচিবায়ু রোগ আছে। তালাকের বিষয় নিয়েও কি মানুষ ওসিডি বা ওয়াসওয়াসাতে আক্রান্ত হইতে পারে???

প্রশ্ন ২: ধুলা ময়লা নিয়ে ওসিডি,যৌনতা নিয়ে ওসিডি, আরো অনেক বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা ধরনের ওসিডির বা শুচিবায়ু আছে।
তালাকের বিষয় নিয়ে যে অর্থহীন, প্রয়োজনাতিরিক্ত,অনিয়ন্ত্রিত দুশ্চিন্তা বা ওয়াসওয়াসা সেটাও কি একধরনের ওসিডি বা শুচিবায়ু রোগ ???

1 Answer

0 votes
by (712,400 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢ : َ ( ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﺠَﺎﻭَﺯَ ﻟِﻲ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻣَﺎ ﻭَﺳْﻮَﺳَﺖْ ﺑِﻪِ ﺻُﺪُﻭﺭُﻫَﺎ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻞْ ﺃَﻭْ ﺗَﻜَﻠَّﻢ
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা আমার খাতিরে আমার উম্মতের অন্তরে চলে আসা ওয়াসওয়াসা(শয়তানি প্ররোচনা) বিষয়ে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ/শাস্তি প্রদাণ করবেন না।যতক্ষণ না সে কথা বা কাজের মাধ্যমে সেটাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে। (সহীহ বোখারী-২৩৬১,সহীহ মুসলিম-১২৭)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻝَ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟْﻴَﻨْﺘَﻪِ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺴﻠﻢ : ( ﺁﻣﻨﺖ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,শয়তান তোমাদের কারো নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, এটা কে বানিয়েছে?ওটা কে বানিয়েছে?শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, খোদা-কে বানিয়েছে? যখন এমন অবস্থায় কেউ পতিত হবে,সে যেন আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।এবং সাথে সাথে সে যেন উক্ত বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকে।এক বর্ণনায় এসেছে সে যেন আ'মানতু বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি পড়ে নেয়।(সহীহ বোখারী-৩১০২,সহীহ মুসলিম-১৩৪)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ( ﺟَﺎﺀَ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺴَﺄَﻟُﻮﻩُ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺠِﺪُ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻳَﺘَﻌَﺎﻇَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢَ ﺑِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺪْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻩُ ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻧَﻌَﻢْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺻَﺮِﻳﺢُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ )
কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের অন্তরে অনেক সময় মন্দ চিন্তাভাবনা চলে আসে।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,এটা কি সম্ভব?তারা বলল, জ্বী হ্যা।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, মাঝেমধ্যে এমন সন্দেহ মনে উঁকি দেয়াই হল, কামিল ঈমানের পরিচায়ক।(সহীহ মুসলিম-১৩২)

ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ : ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...
অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়,যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ হয়ে যায়।সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়।
আর কাফিরের নিকট শয়তান যেকোনো থেকে যেহেতু আসতে পারে,তাই কাফিরকে প্ররোচনা দেয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না।কেননা সে যেকোনো সময় তার ইচ্ছামত কাফিরকে ব্যবহার করতে পারে।সুতরাং হাদীসের অর্থ হলো এই যে,ঈন্তরে ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে এটাই কাযী ঈয়ায রাহ এর পছন্দনীয় ব্যাখ্যা।
(আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি যেগুলো আলোচনা করলেন, এগুলোই ওয়াসওয়াসা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (712,400 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...