আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
109 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (7 points)
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেসব কোচিং সেন্টার রয়েছে (যেমন রেটিনা, উদ্ভাস) সেসব কোচিং সেন্টারে যারা ভালো ফলাফল করে আলাদা করে তাদের ছবি তুলে এবং পোস্টারে ছাপায়। আমার প্রশ্ন, যদিও আমি এখনো পরীক্ষা দেইনি, তবুও আমি যদি ভালো ফলাফল করি তাহলে তাদের অনুরোধে ছবি তোলা কি জায়েজ হবে? ব্যবসায়িক স্বার্থে তারা যদি বাসায় এসে ছবি তুলতে চায় সেক্ষেত্রে করণীয় কি?

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাব

https://www.ifatwa.info/2253 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

যেসব হাদীসে ফটোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে নিম্নে সেইসব হাদীস তুলে ধরা হল।

 

হাদীস নং এক. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর(রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِنَّ الَّذِينَيَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، يُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ "

রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন,যারা ফটো বানায়, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে,যা তোমরা বানিয়েছ তাতে জীবন দাও।[সহীহ বুখারী-৫৯৫১]

 

হাদীস নং দুই. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

عن عَبْدَ اللَّهِ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ»

রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন,যারা ফটো বানাবে,কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।[সহীহ বুখারী-৫৯৫০]

 

হাদীস নং তিন. হযরত আবু যুর'আ (রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ أَبِيهُرَيْرَةَ فِي دَارِ مَرْوَانَ فَرَأَى فِيهَا تَصَاوِيرَ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: «وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِي؟ فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً، أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا شَعِيرَةً»

একবার আমি হযরত আবু-হুরায়রা (রা.)এর সঙ্গে (খলিফা)মারওয়ানের ঘরে প্রবেশ করলাম।হযরত আবু-হুরায়রা (রা.)মারওয়ানের ঘরে বেশকিছু ফটো দেখতে পেয়ে বললেন,আমি রাসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেন,আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন,ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম কে,যে আমার সৃষ্টিতুল্য সৃষ্ট? সুতরাং তার উচিৎ সে যেন অনু সৃষ্টি করে দেখায় এবং শস্যদানা সৃষ্টি করে দেখায় এবং যব সৃষ্টি করে দেখায়। [সহীহ মুসলিম-২১১১]

 

হাদীস নং চার. হযরত আবু তালহা (রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন

عَنْ أَبِي طَلْحَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَاتَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ»

আমি রাসূলে কারীম কে বলতে শুনেছি: 'ওই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না,যে ঘরে কুকুর এবং ফটো রয়েছে।'[ সহীহ মুসলিম-২১০৬]

 

হাদীস নং পাচঁ. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ تَمَاثِيلُ أَوْ تَصَاوِيرُ»

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, 'ফেরেশতারা ওই ঘরে প্রবেশ করে না,যাতে ফটো বা প্রতিমা স্থাপিত রয়েছে'[সহীহ মুসলিম-২১১২]

 

হাদীস নং ছয়. ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

عنﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ( ﻣﻦ ﺻَﻮَّﺭ ﺻﻮﺭﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻛُﻠِّﻒ ﺃﻥ ﻳَﻨْﻔُﺦ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺮُّﻭﺡ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻨﺎﻓﺦ

আমি রাসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন,যে ব্যক্তি পৃথিবীতে কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে,কিয়ামত দিবসে উক্ত অঙ্কিত প্রাণীর ভিতর রূহ প্রদানের দায়িত্ব তাকে দেয়া হবে। কিন্তু কস্মিনকালেও তা তার জন্য সম্ভবপর হবে না।{সহীহ বুখারী-৫৬১৮}

 

হাদীস নং সাত. হযরত জুহাইফা (রা.)বর্ণনা করেন,

عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنْ أَبِيهِ: أَنَّهُ اشْتَرَى غُلاَمًا حَجَّامًا، فَقَالَ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ، وَثَمَنِ الكَلْبِ، وَكَسْبِ البَغِيِّ، وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ، وَالوَاشِمَةَ وَالمُسْتَوْشِمَةَ وَالمُصَوِّرَ»

রাসূলে কারীম রক্তের মূল্য নেয়া এবং কুকুরের মূল্য নেয়া এবং অপকর্মকারিণীর উপার্জন থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি সুদ নেয়া এবং সুদ দেয়া এবং ফটো নির্মাতাদের ওপর লানত বর্ষণ করেছেন। [সহীহ বুখারী-৫৯৬২]

 

হাদীস নং আট. হযরত আ'য়েশা (রা.) বর্ণনা করেন,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي البَيْتِ قِرَامٌ فِيهِ صُوَرٌ، فَتَلَوَّنَ وَجْهُهُ ثُمَّ تَنَاوَلَ السِّتْرَ فَهَتَكَهُ، وَقَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَشَدِّالنَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ الَّذِينَ يُصَوِّرُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ»

'রাসূলে কারীম সবে সফর সেরে এসেছেন।ইতিপূর্বে আমি বাতির উপরে ফটোযুক্ত হালকা পর্দা সেট করে নিয়ে ছিলাম।রাসূল এটি দেখার পর তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং ইরশাদ করলেন: রোজ কিয়ামতে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ওইসব ব্যক্তির হবে,যারা আল্লাহর সৃষ্টি কার্যক্রমে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে। এরপর হযরত আয়েশা (রা.)বলেন,আমি ওই পর্দাটি কেটে এক বা দুইটি বালিশ বানিয়ে নেই।' [সহীহ বুখারী-৬১০৯]

 

হাদীস নং নয়. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)বলেন,

عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: " وَعَدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِبْرِيلُ، فَرَاثَ عَلَيْهِ، حَتَّى اشْتَدَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَقِيَهُ، فَشَكَا إِلَيْهِ مَا وَجَدَ، فَقَالَ لَهُ: إِنَّا لاَنَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ وَلاَ كَلْبٌ "

'একদা হযরত জিব্রাঈল(আ.)রাসূলে কারীম এর সঙ্গে (নির্দিষ্ট সময়ে সাক্ষাতের) অঙ্গীকার করে গেলেন।কিন্তু যথাসময়ে আগমনে হযরত জিব্রাঈল বিলম্ব হল।বিষয়টি রাসূলুল্লাহ এর কাছে বেশ পীড়াদায়ক মনে হল।(বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর)তিনি ঘর থেকে বের হলেন।বের হয়েই তিনি হযরত জিব্রাঈল (আ.)এর সাক্ষাত পেলেন।অপেক্ষার কারণে রাসূলুল্লাহ এর যে কষ্ট হয় হযরত জিব্রাঈল (আ.)এর নিটক তিনি সেই অভিযোগ করলেন। হযরত জিব্রাঈল(আ.) বললেন,আমি এমন ঘরে প্রবেশ করি না, যেখানে ফটো বা কুকুর থাকে' [সহীহ বুখারী-৫৯৬০]

 

হাদীস নং দশ. হযরত জাবের (রা.)থেকে বর্ণিত

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصُّورَةِ فِي البَيْتِ، وَنَهَىعَنْ أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ.

'রাসূলুল্লাহ ঘরে ফটো রাখতে এবং ছবি বানাতে নিষেধ করেছেন।' [সুনানে তিরমিযি-১৭৪৯]

 

হাদীস নং এগার.  আবুল হাইয়্যাজ আসাদী(রাহ.)বলেন,

عَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ «أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّاسَوَّيْتَهُ»

আমাকে হযরত আলী(রা.)বলেন,আমি কি তোমাকে এমন কাজের প্রতি উৎসাহিত করব না,যা করার জন্য আমাকে রাসূল উৎসাহিত করেছেন? আর তা হল,ফটো না মিটিয়ে তা হাত ছাড়া করবে না,এবং উঁচু কবরকে সমতল না করে ছাড়বে না। [সহীহ মুসলিম-৯৬৯]

আরো বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/2253


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাধারণত তারা  ছবিগুলো নিয়ে পোস্টারে ছাপায় এবং বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে বা টানিয়ে দিয়ে থাকে যা শরীয়তে নিষেধ। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাদেরকে আপনার ছবি তুলতে দেওয়া বা আপনার ছবি তাদেরকে দেওয়া এটা জায়েজ হবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (7 points)
জাযাকাল্লাহ খাইরান উস্তায। অনেক সুন্দর আর বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন।
তারা যদি ভর্তি ফর্মের সাথে ছবি জমা দিতে বলে সেটা দেওয়া কি জায়েজ হবে?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...