আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
64 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (41 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তায।আমার এক আত্নীয় অসুস্থ।ওনার জন্য সামান্য কিছু টাকা আলাদা করে আমার আম্মুর কাছে দিয়েছিলাম ওনার জন্য খরচ করতে।ওনারা আর রিসেন্টলি দেখতে যায়নি ওনাকে।গেলে টাকা টা দিয়ে দিত।সেই আত্নীয় যথেষ্ট সামর্থ্যবান।ওনার আর্থিক সাহায্যের দরকারও নেই আপাতত।এমতাবস্থায় আমি কি সেই টাকা আমার আম্মুর কাছ থেকে ফেরত নিতে পারি?দান তো দিয়ে ফেরত নেয়া উচিত না।এজন্য জানতে চাওয়া। আমি কি সে টাকা ফেরত নিয়ে অন্যত্র খরচ করতে পারি? এতে কি গুনাহ হবে?আমার উপর থেকে রহমত বরকত নষ্ট হয়ে যাবে?এক্ষেত্রে আমার করনীয় কি?ওনাকে দেয়ার জন্য রেখেছি ওনার জন্যই থাকবে?ওনার পরিবার কে দিয়ে দিলে যেভাবে ইচ্ছে খরচ করবে এমন।আমি কি সওয়াব পাব?

২)আমার প্রচন্ড চোখ মাথা ব্যাথা।ঠান্ডার সমস্যা। আমি নিজে কুরআন শেখার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ। সাথে পরিচিত দেরও জানাতে চেষ্টা করি।শেখার জন্য বলি টিচারর কাছে।বিভিন্ন কারনে আমার সাথে যোগাযোগ হয় অন্যদের।আমি প্রায়ই নামাজে মন দিতে পারি না।কোনকিছু তেই ভাল লাগে না।অলসতা কাজ করে খুব।শরীরও চলে না দুর্বল লাগে। বদনজরর কারনেই কি এমন?দুআ পড়তেও ইচ্ছা করে না আমার।করনীয় জানাবেন।

৩)রিজিকের পেরেশানি দূর করার উপায় জানাবেন?
৪)কি করলে মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়া যায়?
৫)কি করলে বদনজর লাগবে না?

৬)স্কিনে খুবই সমস্যা। চিকিৎসা করানো ব্যয়বহুল।সম্ভব না।কোন দুআ আছে কি?যাতে স্কিন টা ভাল হবে ব্রন দাগ ইত্যাদি গুলো চলে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (677,960 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
কাউকে কিছু দেওয়ার পর দাতা স্বাভাবিকভাবে সেটি ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখেন না। যারা কাউকে কিছু দেওয়ার পর তা আবার ফিরিয়ে নেয়, হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) তাদের ব্যাপারে কঠিন ভাষা ব্যবহার করেছেন। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا ابْنُ طَاوُسٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْعَائِدُ فِيْ هِبَتِهِ كَالْكَلْبِ يَقِيءُ ثُمَّ يَعُوْدُ فِيْ قَيْئِهِ.

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দান করে তা ফেরত গ্রহণকারী ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে এরপর তার বমি খায়। (বুখারী ২৫৮৯.২৬২১, ২৬২২, ৬৯৭৫, মুসলিম ২৪/২ হাঃ ১৬২২, আহমাদ ২৬৪৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪১৮,নাসায়ী ৩৬৯৯, তিরমিযী ১২৯৮, আহমাদ ১৮৭২, সহীহ আল জামি‘ ৫৪২৬।)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرْجِعُ أَحَدٌ فِي هِبَتِهِ إِلَّا الْوَالِدُ مِنْ وَلَده» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه

’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পিতা তার স্বীয় পুত্রের হিবা (দান করা) ব্যতীত কেউই নিজ হিবার জিনিস ফিরিয়ে নিতে পারে না।
(নাসায়ী ৩৬৮৯, ইবনু মাজাহ ২৩৭৮, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৮৬,মিশকাত ৩০২০।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার আম্মু আপনার পক্ষ থেকে উকিল,তাকে আপনি টাকা প্রদানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যেহেতু এক্ষেত্রে আপনার আম্মু সেই টাকা আপনার সেই অসুস্থ আত্মীয়কে এখনো দেয়নি,সুতরাং এক্ষেত্রে সেই টাকা আপনার আম্মু থেকে ফিরিয়ে নেয়াতে কোনো গুনাহ নেই।

এটি এখনো আপনার টাকা হিসেবেই আছে।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার উপর থেকে রহমত বরকত নষ্ট হয়ে যাবেনা।

★তবে যেহেতু আপনি দান করার নিয়ত করেছিলেন,সুতরাং আপনি সামর্থবান হলে ও আপনার সেই টাকার প্রয়োজনীয়য়া না থাকলে আপনার প্রতি পরামর্শ থাকবে, সেই টাকা ঐ আত্মীয়কে না দিলেও অন্য কোনো ফকির মিসকিনকে দিয়ে দেয়া।
এটি আপনার উপর আবশ্যক নয়,পরামর্শ মাত্র।

(০২)
চোখ ব্যাথা, মাথা ব্যাথা,ঠান্ডার সমস্যা ইত্যাদি কারনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলবেন।

নামাজে মনোযোগী হওয়ার পদ্ধতি জানুনঃ- 

(০৩)
অল্পে তুষ্ট থাকতে হবে,আল্লাহ তায়ালা যা দিয়েছেন,তার উপরেই ধৈর্য ধারন করতে হবে,তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
অকৃতজ্ঞ হওয়া যাবেনা,অধৈর্য হওয়া যাবেনা।

প্রতিদিন বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করতে হবে।

ইনশাআল্লাহ রিযিকের পেরেশানি দূর হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন।যে ব্যক্তি ইস্তেগফার কে নিজের উপর আবশ্যক করে নেয়, আল্লাহ তাআলা আপন দয়া ও অনুগ্রহে তাকে সকল সংকটময় অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন। তার সকল চিন্তা পেরেশানী দূর করে দিবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।(আবু দাউদ : ১৫১৮, ইবনে মাজাহ : ৩৮১৯, মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৪০, বাইহাকী:৩/৩৫১)

(০৪)
মুস্তাজাবুত দাওয়াহ হওয়ার জন্য করনীয়ঃ

ক,
যবান দ্বারা একেবারেই কোনো গুনাহ (মিথ্যা,গীবত,চোগলখোরি, পরনিন্দা,অন্যের দোষ চর্চা,গালি গালাজ,ইত্যাদি কোনো গুনাহ) না করা।

খ,
বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা। 

গ,
হালাল ভক্ষন করা।
.
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: تليت هذه الآية عند رسول الله: {يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلالًا طَيِّبًا}، فقام سعد بن أبي وقاص، فقال: يا رسول الله ادع الله أن يجعلني مستجاب الدعوة فقال له النبي: "يا سعد أطب مطعمك تكن مستجاب الدعوة، والذي نفس محمد بيده إن العبد ليقذف اللقمة الحرام في جوفه ما يتقبل منه عمل أربعين يومًا وأيما عبد نبت لحمه من سحت فالنار أولى به".

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ আয়াত “হে মানবসমাজ, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর।” [সূরা বাকারা-১৬৮] আয়াতটি তিলাওয়াত করা হল।
তখন সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমার জন্য দুআ করুন যেন আল্লাহ আমাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়া [দুআ করলে সাথে সাথে কবুল হয় এমন] বানিয়ে দেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সাদ! তুমি তোমার খাবারকে পবিত্র রাখো, [হালাল ভক্ষণ কর] তুমি মুস্তাজাবুত দাওয়া হয়ে যাবে।
 
যে সত্তার হাতে মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রাণ তাঁর কসম! নিশ্চয় কোনো বান্দার পেটে যদি হারাম এক লোকমরা খাবারও প্রবেশ করে, তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার আমল কবুল হয় না। আর ব্যক্তির যে মাংসপিন্ড হারাম সম্পদ বা সুদের টাকায় বৃদ্ধি হয়েছে, তার জন্য জাহান্নামই উত্তম।
[আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৪৯৫, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-২৬৬০]
.
ঘ,
ইখলাছের সহিত একনিষ্ঠ ভাবে দোয়া করা।
فعن النعمان بن بشير رضي الله عنه قال: وقد قال الله تعالى مبينًا وجوب إخلاص العبادة له: {وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ}[البينة: 5]
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা  একনিষ্ঠ ভাবে ইবাদত করতে বলেছেন।
অর্থঃ
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামায কায়িম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।

ঙ,
গুনাহ এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া করা যাবেনা।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يَزَالُ يستجاب للعبد ما لم يدع بإثم أو قطيعة رحم».
,
চ,
দোয়ার সময় কলব হাজির রাখতে হবে,আল্লাহর দিকে মুতাওজ্জুহ হয়ে দোয়া করতে হবে,কবুল হবেই বিশ্বাস রেখে দোয়া করতে হবে।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم: {ادْعُوا الله وأنتم موقنون بالإجابة، واعلموا أن الله لا يستجيب دعاءً من قلب غافل لاه}. 
,
ছ,
নেক আমল করার মাধ্যমে এবং গুনাহ থেকে বেচে থাকার মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করতে হবে।

قال تعالى: {إِنَّ اللَّهَ لا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلا مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ}[الرعد: 11.
আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। 
,
জ,
দোয়া কবুল হওয়ার ব্যপারে কোনো তারাহুড়া করা যাবেনা।

 النبي صلى الله عليه وسلم: «يُسْتَجَابُ لأَحَدِكُمْ ما لم يَعْجَل، يقول دَعَوْتُ فلم يستجب لي»


(০৫)
নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবেনঃ-

أعوذ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ

উচ্চারণ : আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।

অর্থ : আমি আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে থাকতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)

(০৬)
এক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যায়বহুল হওয়ায় হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ বা অন্য কোনো ধরনের চিকিৎসা গ্রহন করতে পারেন।
আশাকরি খরচ কম হবে।

কুরআন হাদীসে এব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া পাইনি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...