আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
372 views
in সালাত(Prayer) by (6 points)
closed by
a) আস্তে আস্তে কেরাত পড়ার সময়েও কেরাত নিজে শোনা মত পড়তে হয়। এইটা উচ্চসীমা কত? মানে আমি এইসময় কত জোরে পড়তে পারবো?
b) জামাতে পরে এসে যোগ দিলে আগে বাদ যাওয়া ইমামের প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাত এর কিরাত কি মাসবূকের জোরে পড়তে হবে? ফজর মাগরিব বা এশাতে। অনেক বিদেশিকে জোরে পড়তে দেখি। এইটা কি অন্য মাযহাব এ জোরে আর হানাফিতে আস্তে এমন?

c) রুকু না করে সিজদাহ্ তে চলে গেলে পুরো নামায ভেঙ্গে যাবে? নাকি শুধু ঐ রাকাত নামাযের মধ্যেই কাযা করলেই চলবে?

d) মাসবূক ইমামের শেষ বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে। এরপর চুপ থাকবে। কিন্তু কেউ যদি দরুদ,দুয়া মাসুরা পড়ে ফেলে তাহলে কি তার পরে সাহু সিজদাহ দেওয়া লাগবে?
e) সাহু সিজদাহ কি নামাযের অনেক পরে আদায় করা যাবে কিনা? একটা হাদিস আছে এমন যে নবিজি সাঃ নামায থেকে উঠে গিয়ে খাম্বার সাথে হেলান দিয়ে বসলেন। তারপর এক সাহাবী রাঃ যেয়ে ভুলে ধরলে তিনি এসে শুধু সিজদাহ্ দিয়ে সালাম ফিরান। এই ক্ষেত্রে তো তিনি নামায এর কিছু পরে এবং কেবলা থেকে মুখ ফিরিয়েই আবার এসে শুধু সিজদাহ্ ও সালাম ফেরান। তবে এই হাদিস অনুযায়ী কি আমি অনেক পরে মনে পড়লে শুধু সিজদাহ্ ও সালাম ফিরিয়ে নামায ঠিক করে ফেলবো? যদি তা না হয় তবে এই হাদিস কেন মানা যাবে না?
closed

1 Answer

+1 vote
by (671,200 points)
selected by
 
Best answer
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নিম্নস্বরের পরিমাণ হল, নিজ কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করা। 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছে   

 أنہماختلفوا في حد وجود القراء ة علی ثلاثة أقوال: فشرط الہندواني والفضیلي لوجودہا: خروج صوت یصل إلی إذنہ وبہ قال الشافعي واختار شیخ الإسلام وقاضي خاں وصاحب المحیط والحلواني قول الہندواني کذا في معراج الدرایة، ونقل في المجتبی عن الہندواني أنہ لا یجزیہ مالم تسمع أذناہ (سامي: ۲/۲۵۲، کتاب الصلاة باب صفة الصلاة، ط: زکریا دیوبند)

সারমর্মঃ  নামাজেই এতটুকু আওয়াজ বের করা, যাতে আওয়াজ নিজ কান পর্যন্ত পৌছতে পারে।

আস্তে কেরাতের নিম্নসীমা উচ্চসীমা সংক্রান্ত  বিস্তারিত জানুনঃ 

(০২)

ইমামের পিছনে যে ব্যক্তি এক বা ততোধিক রাকাত নামায পড়ে ফেলার পর শরীক হয় উক্ত ব্যক্তিকে ইসলামী ফিক্বহের পরিভাষায় মাসবুক বলে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

وَعَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ اَنَّه غَزَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ غَزْوَةَ تَبُوْكَ قَالَ الْمُغِيْرَةُ فَتَبَرَّزَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قِبَلَ الْغَائِطِ فَحَمَلْتُ مَعَه اِدَوَاةً قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَمَّا رَجَعَ اَخَذْتُ اُهْرِيْقُ عَلى يَدَيْهِ مِنَ الاِدَاوَةِ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَه وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ مِّنْ صُوْفٍ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ فَاَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ وَاَلْقَى الْجُبَّةَ عَلى مَنْكِبَيْهِ فَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ مَسَحَ بِنَاصِيَتِه وَعَلَى الْعِمَامَةِ ثُمَّ اَهْوَيْتُ لَانْزِعَ خُفَّيْهِ فَقَالَ دَعْهُمَا فَاِنِّىْ اَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا ثُمَّ رَكِبَ وَرَكَبْتُ فَانْتَهَيْنَا اِلَى الْقَوْمِ وَقَدْ قَامُوْا اِلَى الصَّلَاةِ وَيُصَلِّىْ بِهِمْ عَبْدُ الرَّحْمنِ بْنِ عَوْفٍ وَّقَدْ رَكَعَ بِهِمْ رَكْعَةً فَلَمَّا اَحَسَّ بالنَّبِىِّ ﷺ ذَهَبَ يَتَاَخَّرُ فَاَوْمَا إِلَيْهِ فََاَدْرَكَ النَّبِىُّ ﷺ اِحْدَىِ الرَّكْعَتَيْنِ مَعَه فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ النَّبِىُّ ﷺ وَقُمْتُ مَعَه فَرَكَعْنَا الرَّكْعَةَ الَّتِىْ سَبَقَتْنَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ 

মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবূক যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। মুগীরাহ্ বলেন, একদিন ফজরের (ফজরের) সলাতের আগে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানার উদ্দেশে বের হলেন। আর আমি তাঁর পেছনে একটি পানির পাত্র বহন করে গেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেরিয়ে আসার পর আমি তাঁর দুই হাতের কব্জির উপর পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দুই হাত ও চেহারা ধুলেন। তখন তাঁর গায়ে একটি পশমের জুববাহ্ ছিল। তিনি তাঁর (জুববার আস্তিন গুটিয়ে) হাত দু’টি খুলতে চাইলেন। কিন্তু জুববার আস্তিন খুব চিকন ছিল। তাই জুববার ভেতর দিক দিয়েই তাঁর হাত দু’টি বের করে নিজের দুই কাঁধের উপর রেখে দিলেন এবং হাত দু’টি (কনুই পর্যন্ত) ধুলেন। অতঃপর মাথার সামনের দিক (কপাল) ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করলেন। তারপর আমি তাঁর মোজাগুলো খুলতে চাইলাম। তিনি বললেন, এগুলো এভাবে থাকতে দাও, আমি এগুলো পবিত্রাবস্থায় (অর্থাৎ- ওযু করে) পরেছি। তিনি এগুলোর উপর মাসাহ করলেন। অতঃপর তিনি সওয়ারীর উপর আরোহণ করলেন, আমিও আরোহণ করলাম এবং আমরা একটা দলের কাছে পৌঁছে গেলাম। তখন তারা সলাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, আর ‘আবদুর রহমান ইবন ‘আওফ (রাঃ) তাদের সলাতের ইমামাত করছিলেন এবং তাদের নিয়ে এক রাক্‘আত নামাজ আদায়ও করে ফেলেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন বুঝতে পেরে তিনি পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার স্থানে (স্থির থাকতে) ইশারা করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে দুই রাক্‘আতের মধ্যে এক রাক্‘আত নামাজ) পেলেন। তিনি সালাম ফিরালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমিও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। আর এক রাক্‘আত ছুটে যাওয়া নামাজ) আমরা আদায় করলাম।
(মুসলিম ২৭৪, নাসায়ী ১০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১৪৩, ইবনু মাজাহ্ ১২৩৬।)

★মাসবুক আস্তে কিরাআতের নামাজে আস্তে কিরাআত পড়বে।

জোড়ে কিরাআতের নামাজে তার ইখতিয়ার রয়েছে, সে চাইলে কিরাআত জোড়েও পড়তে পারে,চাইলে আস্তেও পড়তে পারে।
উভয়টিই জায়েজ আছে।   
জোড়ে পড়াই উত্তম।

তবে এক্ষেত্রে জোড়ে কিরাআতের সর্বনিম্ন আওয়াজ এ পড়বে।
এক্ষেত্রে সে মুনফারিদের ন্যায়।

আরো জানুনঃ 
,
(০৩)
নামাজের ভিতর যখনই উক্ত রুকুর কথা মনে পড়বে,তখনই উক্ত রুকু আদায় করবে,তারপর যেই রাকাতের যেই রুকুনে সে ছিলো,সেটাই আদায় করবে।
শেষে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে। 
পুরো রাকাতও পড়ার দরকার নেই।

مراقي الفلاح بإمداد الفتاح شرح نور الإيضاح ونجاة الأرواح (ص: 126):
"(و) يفترض (العود إلى السجود) الثاني؛ لأن السجود الثاني كالأول فرض بإجماع الأمة". 

সারমর্মঃ সেজদার দিকে ফিরে আসা ফরজ,কারন উক্ত সেজদাও ফরজ।
  
(০৪)
শরীয়তের বিধান হলো মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ধীরে ধীরে পড়বে। এতটা ধীরে যে, ইমাম সাহেব তাশাহুদ শেষ করে, দরূদ ও দুআয়ে মাসুরাও শেষ করে ফেলতে পারে। তারপর ইমাম সালাম ফিরানোর পর মুনফারিদ তথা একাকি নামায পড়া ব্যক্তির মত বাকি নামায পূর্ণ করবে।

(ফাতওয়ায়ে শামী-২/২২০-২২১.
ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৯১.আল বাহরুর রায়েক-১/৮৭৫.ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৫৫৯,আহসানুল ফাতওয়া-৩/৩৮১)

আরো জানুনঃ 
,
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।     

(০৫)
এক্ষেত্রে নামাজ ভঙ্গকারী কোনো কাজ যদি তার থেকে প্রকাশ না পায়, (যেমন কাহারো সাথে কথা বলা,ইত্যাদি)  এবং মসজিদ থেকে যদি বের না হয়,তাহলে সে সেজদায়ে সাহু দিতে পারবে।
,
সুনানে ইবনে মাজা তে আছেঃ

عن عائشۃ رضي اللّٰہ عنہا قالت: قال رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم: من أصابہ قيء أو رعاف
أو قلس أو مذي، فلنصرف فلیتوضأ، ثم لیبن علی صلاتہ وہو في ذٰلک لایتکلم۔ (سنن ابن ماجۃ ۱؍۸۵ رقم: ۱۲۲۱)

যার নামাজের মধ্যে বমি ইত্যাদি আসে,তাহলে সে সেখান থেকে চলে যাবে। অজু করবে,এই অবস্থায় সে কোনো ভাবেই কথা বলবেনা। তারপর তার বাকি নামাজ আদায় করে নিবে।

قال الحصکفي: ولو نسي السہو أو سجدة صلبیة أوو تلاویة، یلزمہ ذلک ما دام في المسجد۔ قال ابن عابدین: قولہ: (مادام في المسجد) أي: وان تحول عن القبلة استحساناً؛ لأن المسجد کلہ في حکم مکان واحد۔ ۔ ۔ ۔ ۔ ۔ ۔ ۔ ۔ ۔ (الدر المختار مع رد المحتار: ۲/۹۱، باب سجود السہو، ط: دار الفکر، بیروت، کذا في سکب الأنہر مع ملتقی الأبحر۱/۲۲۶، کتاب الصلاة، باب سجود السہو، ط: فقیہ الامت)
সারমর্মঃ যতক্ষন পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে,যদিও কেবলার দিক থেকে সরে যায়,তাহলে উক্ত সেজদায়ে সাহু আদায় করতে পারবে।      


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...