আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
146 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
অাসসালামু অালাইকুম
অামদের পরিবার নিয়মিত ইবাদত পালন করি.. এক ওয়াক্ত সালাত অাদায় করে পরে ৪ ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দেয়া এরকম টা নয়।

অামাদের ৫ জন সদস্যের পরিবারে বাবা একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি ছিলেন.. বিগত ১০/১২ বছর তিনি তেমন কিছু করেন নাই যে সংসার চলবে...
সেই সময় থেকে অামার বড় অাপু সংসারের হাল ধরেন।
টিউশনি,ধারদেনা করে সংসার চালাতো গিয়ে তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার
ঋণগ্রস্ত।
তবে অাল্লাহ এর দয়ায় এভাবেই চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু সংসারে পুরুষ মানুষ বলতে অামি অার বাবা.. বাবা কিছু করে না।
অার অামিও হালাল চাকরির সন্ধানে তেমনি কিছু না পাওয়া অাপু অামাকে অন্য কিছু করাতে  দেয় নি। অাপু হাজার টা জায়গায় চাকরির অাবেদন করে যাচ্ছিল অার একটা কোম্পানিতে দুধ,চাপাতি এরকম পণ, সেল সার্ভিস পদে চাকরি করে সংসার চালাত.. খুবই নিদারুণ টানাটানি অার সাংসারিক ঝগড়াঝাটির মধ্যে সে সংসার চালায়।। সম্প্রতি অাল্লাহর ইচ্ছায় গতবছর অাবেদন করা ব্র্যাকের মাইক্রোফ্যাইন্যান্স প্রোগ্রামের অাওতায় প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর বা অর্গানাইজার  (PO) পদে চাকরি পায়.. তার দায়িত্ব মাইক্রোফাইন্যন্স প্রোগ্রামের অাওতায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম এরেঞ্জ  করা ও সেই সকল প্রোগ্রামের তথ লিপিবদ্ধ সহ বিভিন্ন তথ্যের হিসাব রাখা. সরাসরি সুদ লেনদেন কিংবা ঋণ দেয়া ও তার হিসাব রাখা এরকম কিছু না।  PO পদের স্রেফ এটাই কাজ।
 শুরুতে খুশিই ছিলাম.. কারণ শত দুঃখের মাঝেও অাল্লাহ পরিবারের একজনকে চাকরি মিলিয়ে দিয়েছেন..
প্রশ্ন উঠে তখনি যখন জানতে পারি ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যন্স মূলত যারা ভূমিহীন, অভিবাসী শ্রমিক,প্রান্তিক কৃষক তাদের মতো যারা অাছে তাদেরকে অার্থিক সেবাদান কর্মসূচি।
তবে অাপার পদ প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর বা অর্গানাইনাইজার। বিষয়টির কিছু ছবি সংযুক্ত করে দিচ্ছি।

এখন কথা হচ্ছে এই Po পদের চাকরি করা সরাসরি হারাম??
আমাদের পরিবারের কারো এমন অবস্থা নেই যে অন্য কিছু করে সংসার চালাবে.. তাছাড়া এতো এতো ঋণের দায় মাথার উপর সেটা অাল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
অামাদের ভাইবোনরা সবাই এখনো লেখাপড়া শেষ করি নি।  অার এমতাবস্থায় হালাল চাকরি খুজে সংসার চালানোও কারো জন্য সম্ভব নয়.. তারপরেও সবাই খোজ করছি হালাল রিজিক.. অাম্মাও দিনরাত অাল্লাহর কাছে দোয়া করছেন। সংসার টিকিয়ে রাখতে সবাই দিশেহারা!! এমতাবস্থায় যতদিন না অাল্লাহ ভালো হালাল কিছুর ব্যবস্থা করে না দিচ্ছেন ততদিন কি অাপু চাকরিটা করতে পারবে অার বেতন নেয়া যাবে। সেই বেতনে সাময়িক কয়েক বছর জীবন চালালে কি সারা জীবনের অামল ধ্বংস হয়ে যাবে??  অামরা কি জাহান্নামী হবো???

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

সুদ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,

اَلَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا یَقُوْمُ الَّذِیْ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْۤا اِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا  فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ  وَ اَمْرُهٗۤ اِلَی اللهِ  وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবেযাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যেতারা বলেক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। যার নিকট তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছেতবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই। আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫

 

یَمْحَقُ اللهُ الرِّبٰوا وَ یُرْبِی الصَّدَقٰتِ  وَ اللهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیْمٍ.

আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৬

 

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ  وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ  لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ.

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাওযদি তোমরা মুমিন হও।যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। -সূরা বাকারা  (২) : ২৭৮-২৭৯

 

সুদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন -

واحل الله البيع و حرم الربوا.

" আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন৷" (সূরা বাকারা, আয়াত:২৭৫)

 

সুদ কতখানি জঘন্য তা হাদীস শরীফে এসেছে-

عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "الربا سبعون حوبا،أيسرها أن ينكح الرجل أمه."

حكم الحديث: صحيح

"হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- "সুদের ৭০ টি স্তর রয়েছে৷ সবচেয়ে নিম্নটি হল নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা৷" (ইবনে মাজাহ: অধ্যায়: ব্যবসা-সুদ:২২৭৪)

 

 

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤكِلَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَكَاتِبَهُ.

যে সুদ খায়যে সুদ খাওয়ায়যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সকলের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -মুসনাদে আহমাদহাদীস ৬৬০সুনানে আবু দাউদহাদীস ৩৩৩৩জামে তিরমিযীহাদীস ১২০৬

 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

. যদি উক্ত প্রতিষ্ঠানে Po পদে চাকরীর হালাল কাজের তুলনায় সুদী, ধোঁকা, প্রতারণা  হিসাব লিখার কাজ নিতান্তই কম থাকে,তাহলে ফুকাহায়ে কেরাম, এমন কাজের রুখসত দিয়ে থাকেন অর্থাৎ এমন প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষক ও ইত্যাদি হিসাবে  চাকরী করা জায়েজ আছে যদি সরাসরি সুদী কারবার ও সুদী কারবারেরই হিসাবের সাথে জড়িত না হওয়া লাগে।

 

২. যদি আপনার বোনের চাকরী সরাসরি সুদ লেনদেন কিংবা ঋণ দেয়া ও তার হিসাব রাখা এরকম কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তার চাকরী জায়েজ হবে এবং তার ইনকামও হালাল হবে। তবে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে চাকরী করবে।

 

৩. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বোনের চাকরীটা না ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র আরো ভালো চাকরী খোঁজতে থাকবে। ততদিন আপনারা তার বেতনেই সংসার চালালে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আপনারা গরীব। তা ছাড়া অন্য কোনো হালাল ইনকামও আপনাদের নেই এবং আপনাদের ইবাদতও কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। তবে যদি আল্লাহ তায়ালা আপনাদের কখনো এমন সামর্থ্য দান করেন ( দুআ করি আল্লাহ তায়ালা যেনো তা দেন) যে, যতটাকা বেতন আপনার বোন ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে (তা হিসাব করে রাখবেন) তা গরীবদেরকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
জাযাকাল্লাহু খাইরান... অন্তরের অন্তরস্থল থেকে অাপনাকে ধন্যবাদ জানাই উস্তাদ। অাল্লাহ পাক অাপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...