আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
821 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (9 points)
আসসালামু 'আলাইকুম,

আমি ফ্রি মিক্সড একটি ভার্সিটিতে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি, বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে।
আমার ভাই নেই, আমরা দুইবোন। করোনা কালীন সময়ে আমি পরিপূর্ণ ভাবে দ্বীনের পথে আসি আলহামদুলিল্লাহ এবং এর মধ্যে ২ বছর কলেজে পরীক্ষা স্থগিত ছিল ।
আমি সহশিক্ষা চাচ্ছিলাম না । তবে পরিবারের অত্যন্ত জোর জবরদস্তিতে বাধ্য হয়ে একটা পরীক্ষা দিয়েছি ।
আমার প্রশ্ন হলো
১. ছেলেদের সাথে একই বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেয়া কি জায়েজ ? আমার সামনে পিছনে এবং পাশে সবাই ছেলে, ক্লাসে এমন অবস্থা নেই যে মেয়েদের মাঝখানে বসে পরীক্ষা দেয়া যাবে।
২. আমি ছেলেদের সাথে কথা না বললেও পরীক্ষা চলাকালীন কয়েকজন আমার কাছ থেকে উত্তর দেখে লিখতে চায়, আমি না করলেও শুনছে না । এতে তাদের সাথে কিছুটা হলেও আই কন্টাক্ট এবং কথা বলা হয়ে যাচ্ছে । এতে কি আমার গুনাহ হবে?
৩. ক্লাস রুমে অনিচ্ছাকৃত কোনো ছেলের সাথে ধাক্কা লাগলে কি আমার গুনাহ হবে?
৪. আমার বাসায় সবাই বলে আমি যদি পড়াশোনা ছেড়ে দেই তাহলে ভালো জায়গায় বিয়ে হবে না, ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়লে চাকরী পাবো না । আমি যদি এখন তাদের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেই তাহলে কি আমার গুনাহ হবে ?
৫. পরীক্ষা এমন একটা সময়ে পড়েছে যে যোহর এবং আসর ২ ওয়াক্তের সলাতে সমস্যা হচ্ছে । এখন আমার পরীক্ষা দেয়াটা কি বৈধতার পর্যায়ে পড়বে?
৬. আমাকে একজন বলেছেন দ্বীনের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস ছাড় দেয়া যায়, যেমন আমি যদি নিয়ত করি বায়োকেমিস্ট্রি পড়ে আমি পরবর্তীতে উম্মাহর খিদমতে কাজে লাগাব তো সেই ক্ষেত্রে আমি ছেলেদের সাথে বসে পরীক্ষা দিলে সমস্যা নেই। এটা কি সঠিক?
এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
আমাকে একটু সাহায্য করবেন কারণ এই বিষয়টা নিয়ে উপদেশ দেয়ার মতো আমার পরিচিত কেউ নেই।

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;
,
সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

(০১)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,  
সহ শিক্ষা মূলক প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়ার ক্ষেত্রে শর্ত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ছিলোঃ
সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে একই বেঞ্চে বসার দরুন যদি মাঝে নিরাপদ দুরত্ব বজায় থাকে তাহলে এভাবে বসে পরীক্ষা দেওয়া যাবে।

যদি নিরাপদ দুরত্ব বজায় না থাকে,তাহলে এভাবে বসা জায়েজ হবেনা।
মহান আল্লাহর কাছে খালেস দিলে তওবা করে নিতে হবে। ইস্তেগফার পাঠ চালিয়ে যেতে হবে।

(০২)
হ্যাঁ এতে আপনার গুনাহ হবে।
এখানে গুনাহ হওয়ার দুটি কারন বিদ্যমান।  
এক, এটি অপ্রয়োজনীয় কথা।   
দুই, এক্ষেত্রে পরীক্ষার হলে অন্যকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যাহা নাজায়েজ।  

(০৩)
নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও যদি এটি অনিচ্ছায় হয়ে যায়,তাহলে আপনার গুনাহ হবেনা।

(০৪)
এ জাতীয় অজুহাতের শরীয়তে কোনো ধর্তব্য নেই।
আপনি যদি ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে নিজের পর্দার ক্ষেত্রে সমস্যা মনে করেন,বা গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশংকাবোধ করেন,অথবা এই মুহুর্তে নিজের জন্য বিবাহকে জরুরি মনে করেন,তাহলে আপনি উক্ত কথা গুলি বলতে পারেন।
এই সমস্ত ওযর বশত  পড়াশোনা ছেড়ে দিলে কোনো গুনাহ হবেনা।

(০৫)
যদি পরীক্ষার কারনে উক্ত নামাজ গুলি প্রায় কাজা হয়ে যায়, তাহলে পরীক্ষা বৈধতার আওতায় পড়বেনা।
তবে এভাবে পরীক্ষা দিলে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।

(০৬)
উল্লেখিত লজিক সঠিক নয়।
নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব  না হলে এভাবে বসা জায়েজ হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...