আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
133 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (38 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্ আপু,এখানে ৫ নং এ যে দুআটি বলছে এটাতো সহীহ্ নাহ।

প্রশ্নঃ আয়না দেখার প্রচলিত দুআটি কি সঠিক?

উত্তরঃ আয়না দেখার প্রচলিত দুআটি সঠিক নয়। কেননা এ মর্মে একাধিক হাদিস পাওয়া গেলেও হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে কোনটি সহিহ নয়। এগুলোর মধ্যে কোনটি বানোয়াট আর কোনটি মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল।

সাধারণ মুসলিম সমাজে আয়না দেখার দুআ হিসেবে যে দুআটি সর্বাধিক প্রচলিত তা হল:

الْحَمْدُ لِلَّهِ ، اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي

উচ্চারণ: “আল হামদুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা, কামা হাসসানতা খালক্বী ফা হাসসিন খুলুক্বী”। (সকল প্রশংসা আল্লাহর, হে আল্লাহ, তুমি আমার দৈহিক গঠন যেমন সুন্দর করেছো তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।) কিন্তু দু:খের বিষয় হল, বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে এ সংক্রান্ত হাদিসটি মউযু বা বানোয়াট। তারা বলেছেন,

هذا الحديث رواه ابن السني في “عمل اليوم والليلة” (163) من طريق الْحُسَيْن بْن أَبِي السَّرِيِّ ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ ، عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ سَعْدٍ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : ” أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا نَظَرَ وَجْهَهُ فِي الْمِرْآةِ قَالَ: (الْحَمْدُ لِلَّهِ ، اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي) ” .

وهذا إسناد موضوع: ابن أبي السري كذاب ، كذبه أبو عروبة ، وكذبه أخوه محمد.

انظر : “تهذيب التهذيب” (2 /315) .

وعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ متروك ، تركه أحمد وغيره .

انظر: “الميزان” (2/548)

এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনুস সুন্নি তার ’আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লায়লাহ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা নং ১৬৩) কিন্তু এর সনদটি মউযু বা বানোয়াট। (কেননা এর বর্ণনা সূত্রে দুটি আপত্তি রয়েছে। যথা:)

◆ ১) এতে হুসাইন ইবনে আবিস সারি (الحسين بن أبي السري) নামক একজন বর্ণনাকারী আছে, সে মিথ্যুক। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আবু আরুবা আল হাররানি [জন্ম: ২২০ হি. এর পরে-মৃত্যু: ৩১৮ হি.] তাকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করেছেন। অনুরূপভাবে তার (উক্ত বর্ণনাকারীর) ভাই মুহাম্মদ ইবনুস আবিস সারীও তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। (তাহযিবুত তাহযিব ২/৩১৫)

◆ ২) এতে আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক নামক আরেকজন বর্ণনাকারী আছে। সে মাতরূক (পর‍িত্যাজ্য)। ইমাম আহমদ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ তাকে ‘পরিত্যাজ্য বলে ঘোষণা করেছেন। (আল মীযান ২/৩১৫)

এ ছাড়াও আয়না দেখার দুআ সংক্রান্ত আরও কিছু হাদিস পাওয়া যায় কিন্তু কোনটাই সহিহ নয়।

যেমন:

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَوَّى خَلْقِي فَعَدَلَهُ ، وصَوَّرَ صُورَةَ وَجْهِي فَحَسَّنَهَا، وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

الحمد لله ، أكمل خلقي ، وحسن صورتي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي

(উৎস: islamqa-সংক্ষেপায়িত)

– শাইখ আলাবনির দৃষ্টিতে উক্ত হাদিসটি যইফ বা দুর্বল। [আল কালিমুত তাইয়েব, পৃষ্ঠা নং ২২৩]

তবে সাধারণভাবে আল্লাহর নিকট সচ্চরিত্র প্রার্থনা করার জন্য অনুরূপ একটি দুআ সহিহ সনদে সাব্যস্ত হয়েছে। তা হল:

اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَأَحْسِنْ خُلُقِي

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা কামা হাসসানতা খালক্বী ফা আহসিন খুলুক্বী।

অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি আমার দৈহিক গঠন যেমন সুন্দর করেছো তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।” [মুসনাদ আহমদ। শাইখ আলবানী রহঃ মিশকাতুল মাসাবীহ কিতাবের তাহকিকে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিস নং ৫০৯৯]

❑ তাহলে আয়না দেখার সময় কি কোনও দুআ পড়া উচিৎ নয়?

এ মর্মে যেহেতু বিশেষ কোন দুআ সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় নি সেহেতু অন্যান্য কাজ করার আগে যেভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে শুরু) পাঠ করতে হয় এ ক্ষেত্রেও তাই যথেষ্ট। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬ ◐◯◑ ▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার,

আসসালামু আলাইকুম ।

একজনের কমেন্ট দেখলাম এইটা। এটা কি সঠিক? আমি তো অনেক শাইখের কাছে শুনেছি যে আয়না দেখার সময় এই দুআ পড়তে হয়, তবে কি করা উচিত আসলে?
closed

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
selected by
 
Best answer

 

بسم الله الرحمن الرحيم

চেহারা আল্লাহ তাআলার নেআমত, তাঁর বিশেষ দান। আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর চেহারা দিয়েছেন মানুষকে। মানুষের মাঝে সবচেয়ে সুন্দর চেহারা দিয়েছেন নারীকে। সাদা-কালো, ধূসর, বাদামী কত রঙের, কত বর্ণের মানুষ। কত মানুষের কত রূপ। কোটি কোটি মানুষের মাঝে একজনের চেহারা আরেকজনের সাথে মেলে না। এটা আল্লাহর কুদরত, তাঁর কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ

 আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (রূম ৩০ : ২২)

স্বভাবতই মানুষ আয়না দেখে। আয়না দেখা ও পরিপাটি থাকা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। প্রতিটি মানুষের উচিত চেহারা দেখে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে যেন ভুলে না যাই। এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম কি? তা শিখিয়েছেন নবী মুহাম্মদ সা.।

আয়না দেখার সময় কী দোয়া পড়তে হয়- এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আয়না দেখার সময় এই দোয়া পড়তেন-

اللهم أنت حسّنت خلقي فحسن خُلقي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা হাস্সানতা খালক্বি, ফাহাসসিন খুলুক্বি।

অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারায় সৌন্দর্য দিয়েছেন। অতএব আমার চরিত্রেও সৌন্দর্য দান করুন। (আহমদ, হাদিস : ২৪৩৯২; আবু ইয়ালা, হাদিস : ৫০৭৫)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলতেন-

اللهُمَّ أَحْسَنْتَ خَلْقِي ، فَأَحْسِنْ خُلُقِي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহসানতা খালক্বি, ফাআহসিন খুলুক্বি।

অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারা সুন্দর করেছেন। অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন। (সহিহুল জামে, হাদিস : ১৩০৭)

আলি ইবনে আবি তালিব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন তখন বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ ، اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালক্বি ফাহাসসিন খুলুক্বি।

অর্থ : আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা, হে আল্লাহ আপনি আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন, অতএব আমার আচরণও সুন্দর করে দিন। (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হাদিস : ১৬৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়না দেখতেন তখন তিনি বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي حَسَّنَ خَلْقِي وَخُلُقِي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি হাসসানা খালক্বি ওয়া খুলুক্বি; ওয়া যানা মিন্নি মা শানা মিন গাইরি।

অর্থ : আল্লাহর শোকরিয়া, যিনি আমার চেহারা ও আচরণে সৌন্দর্য দিয়েছেন এবং আমাকে অন্য কারো অসৌন্দর্য থেকে রক্ষা করে সুন্দর করেছেন। (আবু ইয়ালা, হাদিস : ২৬১১)

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন, তখন তিনি বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَوَّى خَلْقِي فَعَدَلَهُ ، وصَوَّرَ صُورَةَ وَجْهِي فَحَسَّنَهَا، وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি সাওয়া খালক্বি ফাআদালাহু, ওয়া সাওয়ারা সুওরাতা ওয়াজহি ফাহাসসানাহা, ওয়া জাআলানি মিনাল মুসলিমিন।

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে ন্যায়সঙ্গতার সঙ্গে পূর্ণতা দিয়েছেন। আমার মুখাবয়ব সুন্দরভাবে তৈরি করেছেন এবং আমাকে মুসলিম বানিয়েছেন।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) হাতে আয়না নিয়ে তাতে তাকিয়ে বলতেন,

 

الحمد لله ، أكمل خلقي ، وحسن صورتي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আকমালা খালক্বি, ওয়া হাস্সানা সুওরাতি, ওয়া যানা মিন্নি মা শানা দত গাইরি।

‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার অঙ্গ-সৌষ্ঠবের পূর্ণতা দিয়েছেন এব আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন। অন্যের অসুন্দরতা থেকে আমাকে রক্ষা করে সৌন্দর্য দিয়েছেন। (জাওয়ায়েদুজ জুহদ : ১১৭৪)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

আয়নায় মুখ দেখা বিষয়ক যেসব দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে হাদিস বিশারদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তারা হাদিসগুলো নির্ণয় করে বেশ কিছুকে দুর্বল হাদিস সাব্যস্ত করেছেন। তবে আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস অনুসরণে অসুবিধা নেই। সুতরাং আয়না দেখার প্রচলিত দোয়া যে, পড়া যাবে না বিষয়টি এমন নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...