আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+2 votes
83 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না এবং তাদের কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে রাস্তার পাশে চলতে বাধ্য করো। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৭৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৯৮)


সহিহ মুসলিমে উপরোক্ত হাদিসটি আছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো এমন কেন করব? তাদের কি স্বাধীনভাবে চলার অধিকার নেই?

1 Answer

+1 vote
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

আল্লাহর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব থাকা এবং আল্লাহর দুশমনদের সাথে শত্রুতা থাকা একজন মুমিনের ঈমানের পরিচয় এবং এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না সে ঈমানদার হতে পারে না। ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা তার মধ্যে থাকতে হবে, অন্যথায় ঈমানদার হওয়া যাবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কিছু বাণী উল্লেখ করার মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিষ্কার হবে;

তন্মধ্যে কয়েকটি আয়াত নিম্নে উপস্থাপন করলাম:

১। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন:

لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً

অর্থাৎ,মুমিনরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফির তথা অবিশ্বাসীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। আর যে এটা করবে সে আল্লাহ্ তায়ালার দায়িত্ব থেকে মুক্ত;আর আল্লাহ্ তায়ালাও তার থেকে মুক্ত।তবে, যদি তারা আত্মরক্ষার্থে এমনটি করে থাকে তবে তার কথা ভিন্ন।(সুরা আলে ইমরানঃ ২৮)

২। আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (৫৭)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! আহলে কিতাব [ইহুদী ও খৃষ্টানগণ] ও কাফিরদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দ্বীনকে ঠাট্টাবিদ্রূপ ও খেলনার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো তাহলে আল্লাহ্ তায়ালাকে ভয় কর।(মায়েদাহঃ৫৭)

৩। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (51)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যকার যে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জালেমদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা মায়েদাহঃ ৫১)

এক ইহুদী কিশোর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩৫৬, ৫৬৫৭)

হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন ।

হযরত উমর (রা) , হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন! যখন আল্লাহ্ তা'লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না । অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে । আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি ।

তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে ? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে । হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে । আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম । (আল ইসাবা,৪/৩৪৭ এবং সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৬, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ))

হযরত উবাদা ইবনে সাবীত (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলেন:

বহু ইহুদীর সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে কিন্তু আমি তা ভেঙ্গে দিলাম। আল্লাহ ও রাসূলের বন্ধুত্বই আমার জন্য যথেষ্ট। তখন ওই মুনাফিক বলল: আগা পিছা চিন্তা করা আমার অভ্যাস। আমার দ্বারা এটা হতে পারে না। বলা যায় না কখন কি হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আবদুল্লাহ তুমি উবাদা হতে খুবই নিম্ন স্তরে নেমে গেছ। ( ইবনে কাসির ৫:৫১ আয়াতের শানে নুযুল)

অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে আমরা বুঝলাম এমন অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব বা মেলামেশা করা যাবে যে ইসলামকে কটাক্ষ করে না , উপহাস করে না , কটুক্তি করে না, মুসলিমকে দ্বীন হতে দূরে সরিয়ে নিতে চায় না

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস গুলোর সমন্বয় খুব সাবলীল ভাবে হযরত হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী রহ লিখেছেন:

کفار کے ساتھ تین قسم کے معاملے ہوتے ہیں: موالات یعنی دوستی۔ مدارات: یعنی ظاہری خوش خلقی۔ مواساۃ: یعنی احسان و نفع رسانی۔

موالات تو کسی حال میں جائز نہیں۔

اور مدرات تین حالتوں میں درست ہے:

ایک دفعِ ضرر کے واسطے،

دوسرے اس کافر کی مصلحتِ دینی یعنی توقعِ ہدایت کے واسطے،

تیسرے اکرامِ ضیف کے لیے، اور اپنی مصلحت و منفعتِ مال و جان کے لیے درست نہیں۔

اور مواسات کا حکم یہ ہے کہ اہلِ حرب کے ساتھ ناجائز ہے اور غیر اہلِ حرب کے ساتھ جائز۔ (بیان القرآن)

অর্থ: কাফিরদের সাথে সম্পর্ক ৩ ধরণের হতে পারে; যথা:

১. মুওয়ালাত তথা বন্ধুত্ব;

২. মুদারাত তথা বাহ্যিক সদাচারণ;

৩. মুওয়াসাত তথা উপকার-সহযোগিতা।

১ম প্রকার বা মুওয়ালাত-বন্ধুত্ব কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়;

আর ২য় প্রকার বা মুদারাত-বাহ্যিক সদাচারণ নিম্নোক্ত তিন অবস্থায় বৈধ; যথা:

ক) কাফিরের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য;

খ) কাফিরের হিদায়াতের আশায়;

গ) কাফিরের আতিথেয়তায়।

তবে নিজ স্বার্থ বা জান-মালের সুবিধার্থে বৈধ নয়।

আর ৩য় প্রকার বা মুওয়াসাত তথা উপকার-সহযোগিতা আহলে হারবদের জন্য অবৈধ;

তবে আহলে হারব না হলে বৈধ। ( বয়ানুল কুরআন)। (সংগৃহিত)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত হাদীসটি সাধারণ/ জিম্মী ইয়াহুদী বা খৃষ্টানদের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়নি। বরং যারা হারবী অর্থাৎ মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বা মুসলমানদের ক্ষতি সাধণের সর্বদা অপচেষ্টা চালিয়ে যায় হাদীসটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...