আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
85 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)

আসসালামু আলাইকুম, আমার বড় ভাই মারা গেছেন দুই বছর হলো। তিনি সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন, মারা যাওয়ার পরে তিনি ৩৬ লাখ পেনশনের টাকা পান।২৬ লাখ পেনশন এর,চাকরি থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার কারণে ৮ লাখ টাকা তার সন্তানদের জন্য সরকার থেকে দেওয়া হয়। আমার ভাই যখন বেঁচে ছিলেন তার দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তার চিকিৎসা আত্মীয়ের কাছে থেকে ধার করে করা হয়েছিলো, টাকা পাওয়ার পরে ধার শোধ করা হয়েছে।এখন বর্তমানে কিছু টাকা কর্জে হাসানা ও কিছু টাকা একজনকে লোভ্যাংশ শেয়ারে দেওয়া আছে। সব বাদে এখন ২০ লাখ টাকা আছে সোনালী ব্যাংকে। এই টাকা আমার ভাবির আওতায় আছে।আমার ভাইয়ের ১ ছেলে ও ৫ মেয়ে।সবাই সাবালক, ছেলে এবং ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে, বিবাহ যোগ্য এখন আরও এক মেয়ে রয়েছে বাকি এক মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ও একজন ক্লাস এইটের শিক্ষার্থী।এখন আমার কয়েকটি প্রশ্ন হলো -

(১) এখন ব্যাংকে যে ২০ লাখ টাকা আছে সেটা কি এখনই ছেলে মেয়েদেরকে বন্টন করে দিতে হবে?নাকি সব মেয়েদের বিয়ে দেওয়া শেষ হলে তারপর বন্টন করতে হবে? যেহেতু এখনও অবিবাহিত ৩ জন মেয়ে আছে,তাদের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন পালন এর খরচ আছে।বলা জরুরী যে আমার ভাবির নিজেশ্ব কোনো ইনকাম নাই,ভাইয়ের যে বেতন দেওয়া হয় সেটা দিয়েই সংসার খরচ চালাতে হয়।

(২)এই টাকা বন্টন করলে কে কতো টাকা করে পাবে?বলে রাখা জরুরী যে,ব্যাবসা তে যে টাকা দেওয়া আছে সেটা ৩ লাখ,সেটা ছেলের ভাগ থেকে দেওয়া হলো বলে আমার ভাবি তাকে দিয়েছে সেটা এই ২০ লাখের বাইরে টাকা, সেটা ছাড়াই ২০ লাখ আছে।আর অবিবাহিত ২ মেয়ের জন্য ২ ভরি করে ৪ ভরি স্বর্ণের গহনা তৈরী করা আছে সেটাও এই ২০ লাখ ছাড়া।

(৩)এই পেনশন পাওয়া এক বছর ৩ মাস হলো, এখন কি এই টাকার উপরে যাকাত ফরজ হয়েছে? হলে কতো টাকা যাকাত দিতে হবে?যে টাকা কর্যে হাসানা ও ব্যাবসা তে দেওয়া আছে সে টাকারও কি যাকাত দিতে হবে?ঘরে যে গহনা বানানো আছে তারও কি যাকাত দিতে হবে?স্বর্ণ এবং রুপা এক সাথে থাকলে কি যাকাত ফরজ হয়?

(৪)সোনালী ব্যাংক থেকে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে ২০ হাজার ৩০০ টাকা দিয়েছে,তারা বলছে এইটা কোনো সুদের টাকা নয়,লাভের টাকা, ২০ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখার কারনে লাভ দিয়েছে।এখন এই টাকা কি সুদ হবে?প্রতিবছরই তারা আগামী তে এরকম একটা এমাউন্ট দিবে তাই বলেছে।টাকা ফিক্সড করে রাখার পরে ব্যাংক থেকে যদি সেই টাকার উপরে লাভের টাকা দেয় তবে কি সেটা সুদ হবে?

1 Answer

0 votes
by (676,960 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

সরকারি চাকুরিজীবী মারা যাওয়ার পর তাদের স্ত্রীকে যে পেনশনের টাকা সরকারের  পক্ষ থেকে দেওয়া হয়,এটা সরকারের পক্ষ থেকে তার স্ত্রীর প্রতি দয়া, অনুগ্রহ, ইহসান।

এটার সাথে মৃত ব্যাক্তির মিরাছের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এটা শুধুমাত্র স্ত্রীই পাবে।

স্ত্রীই কেবল মাত্র এটা পাওয়ার হকদার।     
(ইমদাদুল ফাতওয়া ৪/৩৪২ মাকতাবায়ে যাকারিয়া)
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ইসলামী স্কলারগন বলেছেনঃ
সরকারি চাকরিতে সরকারি নিয়ম অনুসারে চাকরিজীবী ব্যক্তিকে চাকরি শেষ হওয়ার পর প্রতি মাসে যে পেনশন দেওয়া হয় তা সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান স্বরূপ। উক্ত ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পদ নয়। কাজেই সেই সম্পদ পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ওয়ারিসরা পাবে না। বরং সরকারি আইন হিসেবে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর যাকে দেওয়ার কথা বলা থাকে সেই তা প্রাপ্ত হবে।
সাধারণত, স্ত্রী সে টাকা পেয়ে থাকে। কাজেই সরকারি আইন হিসেবে স্ত্রী সে টাকা পাবে। ওয়ারিসরা তাতে যুক্ত হবে না।
আল বাহরুর রায়েক ৯/৩৬৫; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ২/৪

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার ভাইয়ের পেনশনের টাকার মালিক আপনার ভাবি।

এই টাকা তার সন্তানদের সাংসারিক প্রয়োজনেও ব্যবহার করলে সেক্ষেত্রে তার সন্তানদের জন্যও এটা বৈধ হবে।
তবে সন্তানেরা অবশ্যই মায়ের সন্তুষ্টিক্রমেই ব্যবহার করবেন।

মা অনুমতি না দিলে সন্তানেরা তাহা ব্যবহার করতে পারবেননা।

এটির একচ্ছত্র হকদার চাকরিজীবীর স্ত্রী। 
তিনি চাইলে নিজেই সব ব্যবহার করতে পারবেন,চাইলে সন্তানদের পিছনেও খরচ করতে পারবেন।

এটির একচ্ছত্র অধিকার তার।
অন্য কাহারো নয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا ﴿۲۹﴾ 
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ এবং নিজেদেরকে হত্যা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
(সুরা নিসা ২৯)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
عَنْ أَبِىْ حُرَّةَ الرَّقَّاشِىِّ عَنْ عَمِّه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «أَلَا لَا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَالدَّارَقُطْنِىِّ فِى الْمُجْتَبٰى

আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়।
আহমাদ ২০৬৯৫, শু‘আবুল ঈমান ৫১০৫, ইরওয়া ১৪৫৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৬২।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
★প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
চাকরি থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার কারণে ৮ লাখ টাকা তার সন্তানদের জন্য সরকার থেকে দেওয়া হয়। 

উল্লেখিত ৮ লাখ টাকার মালিক তার সন্তানেরা হবে। এটাকা সম্পূর্ণ ভাবে তার সন্তানেরা পাবে।

এক্ষেত্রে এই ৮ লাখ টাকা থেকেও ধার শোধ করা হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে তাহা মাইনাস হবে।
বাকি টাকা সন্তানেরা পাবে।  

এই টাকা সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে। ছেলে দুই মেয়ে সমপরিমাণ টাকা পাবে।

যে ৩ মেয়ের বিবাহ হয়নি,তাদের বিবাহের জন্য তাদের সম্মতিতে টাকা রেখে দিতে পারবে।

অন্যদের টাকা দিয়ে দিতে হবে।
হ্যাঁ তারা নিতে না চাইলে তাহা ভিন্ন কথা।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
উপরোক্ত টাকা হতে পেনশনের টাকা ছেলে মেয়েদের মাঝে বন্টন করে দেয়ার তা উপর আবশ্যক নয়।

অবিবাহিত ৩ মেয়ের বিবাহ ইত্যাদির পর তিনি চাইলে তার শেষ বয়সে সকলের মাঝে টাকাটা বন্টন করে দিতে পারেন,চাইলে জীবদ্দশায় বন্টন নাও করতে পারেন।

বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তার ইখতিয়ারধীন।

বন্টন না করে দিলে তার কোনো গুনাহ হবেনা।

(০২)
উপরোক্ত টাকা হতে পেনশনের টাকা যেহেতু বন্টন করে দেয়া জরুরী নয়।
কাকে কত দিবেন,এটি সম্পূর্ণ তার ইচ্ছা।

তবে মুস্তাহাব নিয়ম হলো ছেলে মেয়ে সকলকে সমান ভাবে অংশ দেয়া।
কম বেশি না দেয়া।

তারপরও কাহারো আর্থিক সমস্যার দরুন দরুন বেশি বা কাহারো স্বচ্ছলতা থাকার দরুম কম দিলে তাকে দোষারোপ করা যাবেনা।

এটি তার টাকা,তাই তিনি নিজ ইচ্ছা মোতাবেক দিলেও তাতে কাহারো কথা বলার সুযোগ নেই।

(০৩)
এই টাকার যাকাত দিতে হবে।
শতকরা আড়াই পার্সেন্ট যাকাত দিতে হবে।

যে টাকা কর্যে হাসানা ও ব্যাবসা তে দেওয়া আছে সে টাকারও যাকাত দিতে হবে।
ঘরে যে গহনা বানানো আছে তারও যাকাত দিতে হবে। (স্বর্ণ এবং রুপা এক সাথে থাকলে  কম থাকলেও অনেকক্ষেত্রে যাকাত ফরজ হয়।)

(০৪)
হ্যাঁ, এই অতিরিক্ত ৩০০ টাকা সুদের অন্তর্ভুক্ত। 

টাকা ফিক্সড করে রাখার পরে ব্যাংক থেকে যদি সেই টাকার উপরে লাভের টাকা দেয়, তবে সেটা সুদ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (2 points)
আমার প্রশ্নের উত্তর গুলো দেখতে পারছি না
by (676,960 points)
জী,জবাব দেয়া হয়েছে,আলহামদুলিল্লাহ। 
by
আলহামদুলিল্লাহ, যাঝাকাল্লাহু,।শায়েখ বুঝতে একটু সমস্যা হওয়ার জন্য আবার প্রশ্ন করলাম,আশা করি ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
উত্তরে বলেছেন এই টাকার মালিক একমাত্র আমার ভাবি,এখন প্রশ্ন হলো, মাসিক ১৫ হাজার করে যে বেতন পাচ্ছেন সেটার এখতিয়ার শুধু তার নাকি পুরো যে মোটা অংকের টাকা পেয়েছেন যেমন ২০ লাখ যে আছে সেটাও তার?সন্তান রা এই ২০ লাখ টাকার ওয়ারিস নয়?কারণ এইটা তো বাবার অর্জিত সম্পদ,তার পরিশ্রম এর ফল।হ্যা বেতন যেটা দিচ্ছেন সেটা সরকারি এহসান মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর প্রতি এইটা বুঝতে পারছি। 
আরেকটি কথা,এই টাকা কি সম্পদের মতো বন্টন পদ্ধতি নয়,?যে ছেলে দুই ভাগ পাবে আর মেয়ে এক ভাগ?নাকি টাকার ক্ষেত্রে সমান করে দেওয়া মুস্তাহাব।? দয়া করে জানাবেন প্লিজ। এগুলো প্রশ্ন সবই আমার ভাবির পক্ষ থেকে আমি করছি।
by (676,960 points)
জবাবটি পুনরায় পড়ার অনুরোধ রইলো।

প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
চাকরি থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার কারণে ৮ লাখ টাকা তার সন্তানদের জন্য সরকার থেকে দেওয়া হয়। 

উল্লেখিত ৮ লাখ টাকার মালিক তার সন্তানেরা হবে। এটাকা সম্পূর্ণ ভাবে তার সন্তানেরা পাবে।

এক্ষেত্রে এই ৮ লাখ টাকা থেকেও ধার শোধ করা হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে তাহা মাইনাস হবে।
বাকি টাকা সন্তানেরা পাবে।  

এই টাকা সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে। ছেলে দুই মেয়ে সমপরিমাণ টাকা পাবে।

যে ৩ মেয়ের বিবাহ হয়নি,তাদের বিবাহের জন্য তাদের সম্মতিতে টাকা রেখে দিতে পারবে।

অন্যদের টাকা দিয়ে দিতে হবে।
হ্যাঁ তারা নিতে না চাইলে তাহা ভিন্ন কথা।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...