আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
57 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (22 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ভাই

আমার বাড়ি অর্থনৈতিক অবস্থা গরিব। আমার বাবা- মার ১ মেয়ে ২ ছেলে । আমি বড়ো ছেলে। আমার উপর আমার বড়ো বোন আছে । আমার বাড়িতে উৎপাদনশীল বলতে কিছুই নাই। সম্পদ বলতে ২৮ শতক জমি আছে। সেখানে আমি ১০-১২ লাখ টাকা দিয়ে বাবার তৈরি করা ঘর ছিলো তার সাথে মিলিয়ে আমি বাড়ি করেছি। আমার বিয়ের পূর্বে আমার মায়ের ৬৭ হাজার টাকা ঋণ ছিলো সেটা আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে দিয়ে শোধ করেছে আমার শ্বশুর। আমার বাবা মা ২ ভাইয়ের বেতন পেয়ে টাকা পাঠায় সেটা দিয়ে তারা পরিচালিত হয় । আমার বাবা ব্রেন স্ট্রোকের রোগী।তার পিছনে অনেক খরচ হয় । আমি মাসে একটা ফিক্স টাকা দি। কিন্তু আমার ছোট ভাই আমার মতো টাকা দেয় না। আর আমার বোন তো মোটেয় দেয়না বললে চলে। আমার বোন বিবাহিত । আমার কথা আমি যে এতো বেশি বেশি করছি । যখন সম্পত্তি বন্টনের সময় আসবে সবাইতো যার যার টা সে সে নেবে । এক্ষেত্রে সম্পদের বন্টন নিয়ম কি হবে।

আমি সব সময় দেবো বেশি বেশি আর নেয়ার সময় সমান নিবো এটাতো আমার কাছে অন্যায় হবে?

আমি বাড়ির কাজে দিয়েছি ১০-১২ লাখ

আমার শ্বশুর দিলো ৬৭ হাজার

আমার প্রত্যেক মাসে বেশি বেশি টাকা দেয়া লাগে ।

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/46515/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির সাথে ক্রমান্বয়ে চারটি হক রয়েছে।

১. অপচয় ও কার্পণ্য ছাড়া তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা।

২. অবশিষ্ট সম্পদ থেকে তা ঋণ পরিশোধ করা। (যদি ঋণ থাকে)

৩. ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সমুদয় সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা অসিয়ত পূরণ করা। (যদি শরীয়ত সম্মত অসিয়ত করে থাকে।)

৪. তারপর অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে ফারায়েজ মোতাবেক বন্টন করা হবে।

 

হযরত আবু উমামা রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ

ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺪْ ﺃَﻋْﻄَﻰ ﻛُﻞَّ ﺫِﻱ ﺣَﻖٍّ ﺣَﻘَّﻪُ ، ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺻِﻴَّﺔَ ﻟِﻮَﺍﺭِﺙٍ

নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক হক্বদারকে তার প্রাপ্য হক্ব (নির্ধারণ)করে দিয়েছেন।সুতরাং ওয়ারিছদের জন্য আর কোনো ওসিয়্যাত নেই।

 

অর্থাৎ-মূত্যুর পরে কাউকে কিছু দানের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ওসিয়ত হয়ে যায়,আর নিজ ওয়ারিছদের মধ্য থেকে কারো জন্য ওসিয়ত করা জায়েয নয়।তবে ওয়ারিছ ব্যতীত অন্য কারো জন্য এক তৃতীয়াংশ মালে ওসিয়ত করা জায়েয আছে। (সুনানে আবু-দাউদ-২৮৭০সুনানে তিরমিযি-২১২০সুনানে নাসাঈ-৪৬৪১ইবনে মাজাহ-২৭১৩)

 

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি থেকে বর্ণিত,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، قَطَعَ اللَّه ُمِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ যে ব্যক্তি তার ওয়ারিছদেরকে মিরাছ প্রদান থেকে পলায়ন করবে(তথা-ওয়ারিছদেরকে মিরাছ থেকে বঞ্চিত করবে) আল্লাহ তা'আলা ক্বিয়ামতের দিন তাকে জান্নাতের মিরাছ থেকে বঞ্চিত করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭০৩)

 

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻋَﻦِ اﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ - ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ - ﻋَﻦِ اﻟﻨَّﺒِﻲِّ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻗَﺎﻝَ: «ﻻَ ﻭَﺻِﻴَّﺔَ ﻟِﻮَاﺭِﺙٍ، ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﻳَﺸَﺎءَ اﻟْﻮَﺭَﺛَﺔُ»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ ওয়ারিছদের জন্য কোনো ওসিয়ত নেই,তবে যদি অন্যান্য সমস্ত ওয়ারিছরা রাজি থাকে তাহলে জায়েয আছে। (মিশকাত-৩০৭৪)

ছেলে-মেয়েদের ওপর মাতা-পিতার অধিকার ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। এই পৃথিবীতে সন্তান তথা ছেলে-মেয়েদের অস্তিত্ব লাভের কারণই হচ্ছে মাতা-পিতা। সুতরাং সন্তানের উপর তাদের অধিকার যে কত বড়, কত ব্যাপক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

ভূমিষ্ট লাভের পর সন্তানকে তারাই লালন-পালন করেন। সন্তানের আরামের জন্য ক্লান্তি বহন করেছেন, তাদের নিদ্রার জন্য নিজেরা জাগ্রত থেকেছেন। তোমার মা তোমাকে তার উদরে ধারণ করেছেন। যেখানে দীর্ঘ নয় মাসাধিক সময় তারই খাদ্য ও স্বাস্থের উপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করেছ। এ দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার বাণীতে বলেন,

﴿حَمَلَتۡهُ أُمُّهُ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ ﴾ [لقمان: ١٤]

তাকে তার মা দুর্বল থেকে দুর্বলতর অবস্থার মধ্য দিয়ে পেটে ধারণ করেছেন।’ [সূরা লুকমান: ১৪]

 

অতঃপর সে মা-ই আরো দু’বছর পর্যন্ত অসীম কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে তাকে দুধ পান করিয়েছেন, তার সেবা যত্ন করেছেন।

 

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন :

﴿وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]

আর মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের কোন একজন অথবা উভয়ই যখন তোমাদের কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের কোন একজন অথবা উভয়ই যখন তোমাদের কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাদের বেলা উফ (উহ) এই শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং রূঢ় ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের দূরে সরিয়ে দিও না। বরং তাদের উভয়ের সাথেই ভদ্রভাবে কথাবার্তা বলো। তাদের জন্য তোমার আনুগত্য ও দয়ার হস্ত প্রসারিত করে দাও এবং আমার নিকট এই বলে প্রার্থনা কর: হে রব ! তাদের অনুরূপ দয়া করো যেমনটি তারা করেছেন আমার সাথে আমার শৈশবে।’ [সূরা আল-ইসরা: ২৩-২৪]

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিতা-মাতা যেহেতু উপার্জন করতে অক্ষম হয়ে গিয়েছে তাই আপনাদের উপর (দুই ভাইয়ের উপর, বোনের উপর নয়) দায়িত্ব ও ফরজ বিধান হলো তাদের টাকা পয়সা দেওয়া ও তাদের খেদমত করা। যেই সন্তান যতো বেশী টাকা দিবেন ততো বেশী সওয়াব পাবেন। তাই আপনি পিতা-মাতার বেশী খেদমত করার সুযোগ পাচ্ছেন এটা বড় সৌভাগ্যের বিষয় মনে করবেন। তবে এই খেদমত করার কারণে যে, আপনি অপর ভাইয়ের থেকে সম্পদ বেশী পাবেন বিষয়টা এমন নয়। তবে এর কারণে আপনি অনেক অনেক সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।

 

২. আপনি যেই ১০-১২ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ী বানিয়েছেন বা ৬৭ হাজার টাকা দিয়ে মার ঋণ পরিশোধ করেছেন এটা যদি পিতা-মাতাকে একেবারে দিয়ে দেন তাহলে এটাও স্বাভাবিক মিরাসের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে। তবে এর কারণে আপনি অনেক অনেক সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।

তবে যদি আপনি পিতা-মাতাকে বলে ঐ বাড়ীটা যা আপনি নিজস্ব টাকা দিয়ে তৈরী করেছেন তা আপনার মালিকানায় রাখতে পারেন তাহলে ভিন্ন কথা। তবে এই ক্ষেত্রেও বাড়ীর জমিটার মধ্যে অন্যদের অংশ থাকবে। যেহেতু জমিটা আপনার বাবার। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...