আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
100 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (55 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমার পরিচিত একজন বয়স্ক মহিলা আছেন। উনি অত্যন্ত দ্বীনদার। পাচ ওয়াক্ত সালাত ছাড়াও বছরের পর বছর ধরে উনার তাহাজ্জুদ মিস যায়না। পর্দাও করেন মোটামুটি ভালই। হজ্ব ও করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।  কিন্তু উনি উনার ছেলের বউদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। তাদেরকে কথা দিয়ে কষ্ট দেন।
আমার প্রশ্ন হল,  আমরা জানি আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদেরই তাহাজ্জুদে উঠার তৌফিক দেন, উনার তো তাহাজ্জুদ মিস যায় না, কিন্তু আল্লাহর প্রিয় বান্দা হলে ( যার প্রমান তাহাজ্জুদে রেগুলার নামাজ পড়া দ্বারা প্রমান করা যায়) উনার ব্যবহার এরকম যালিমের মত কেন?  আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ব্যবহার কি এমন হয়?  আবার তিনি তো তাহাজ্জুদেও রেগুলার নামাজ পড়ছেন।

1 Answer

0 votes
by (63,200 points)
edited by

 

 

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

জবাব,

প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের সময়ে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটতম প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের ফরিয়াদ শোনেন।

 পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন: ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদে)। (সুরা-১৭ বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৯)।

হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয় ইবাদতের জন্য রাতে ওঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হোন। (সুরা-৭৩ মুয্যাম্মিল, আয়াত: ১-৮)।

‘হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দেবেন না এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন। (সুরা-৭৪ মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ১-৭)।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ الأَغَرِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ، فَيَقُولُ : مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ "

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাদের মহা মহীয়ান রবব প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? আছে কেউ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো? আছে কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। (বুখারী (অধ্যায় : তাহাজ্জুদ, অনুঃ রাতের শেষ ভাগে ও সলাতে দুআ করা, হাঃ ১১৪৫), মুসলিম (অধ্যায় : মুসাফিরের সলাত, অনুঃ রাতের শেষাংশে দুআ যিকিরে উৎসাহ দান)

এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।

ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত। সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো। এখনো মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে এই নিয়ম চালু আছে।

حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِاللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، ثُمَّ يُصَلِّي إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ بِالصُّبْحِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ

 ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাকআত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর ফজর সলাতের আযান শুনতে পেলে সংক্ষেপে দু রাকআত (সুন্নাত) আদায় করতেন।

বুখারী (অধ্যায় : তাহাজ্জুদ, অনুঃ ফাজরের দু রাকআতে কি পড়বে, হাঃ ১১৬৪), আহমাদ (৬/১৭৭) ‘উরওয়াহ হতে ‘আয়িশাহ সূত্রে।

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَنَصْرُ بْنُ عَاصِمٍ، - وَهَذَا لَفْظُهُ - قَالاَ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، - وَقَالَ نَصْرٌ : عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، وَالأَوْزَاعِيِّ، - عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلاَةِ الْعِشَاءِ إِلَى أَنْ يَنْصَدِعَ الْفَجْرُ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُسَلِّمُ مِنْ كُلِّ ثِنْتَيْنِ وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ، وَيَمْكُثُ فِي سُجُودِهِ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ، فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُ بِالأُولَى مِنْ صَلاَةِ الْفَجْرِ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ، ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ حَتَّى يَأْتِيَهُ الْمُؤَذِّنُ .

আব্দুর রহমান ইবন ইবরাহীম (রহঃ) .......... আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইশার নামাযের পর হতে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত মধ্যেবর্তী সময়ে এগার রাকাত নামায আদায় করতেন এবং প্রতি দুই রাকাতে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেন। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দুই রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত মিলিয়ে বিতির পূর্ণ করতেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত দীর্ঘ সময় সিজদাতে অবস্থান করতেন এবং প্রতি দুই রাকাতে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেন। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দুই রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত মিলিয়ে বিতির পূর্ণ করতেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত দীর্ঘ সময় সিজদাতে অবস্থান করতেন যে, তাঁর মাথা উঠাবার পূর্বে তোমরা যে কেউ পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করতে পারতে। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখুন ফজরের আযান শেষ করতেন, তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হয়ে হাল্কাভাবে দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। পরে মুয়াজ্জিন পুনরায় আসা পর্যন্ত ডান পাশের উপর ভর করে শুয়ে থাকতেন - ( আবু দাউদ ১৩৩৬, দাউদ বুখারী, মুসলিম,নাসাঈ, ইবন মাজা)।

সুতরাং উপরোক্ত হাদীস গুলোর আলোকে বুঝা গেলো যে ফজরের ওয়াক্ত আসলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।

যেহেতু তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তাই তাহাজ্জুদের নামাজের ওয়াক্তে যেই দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা আছে,ফজরের ওয়াক্ত আসার সাথে সাথে সেই দোয়ার সময়ও শেষ হয়ে যায়।

তাই ফজরের ওয়াক্ত আসলে আর দোয়া কবুল হওয়ার সেই সুযোগ,(যেটা হাদিস দ্বারা প্রমানীত,)  পাওয়া যাবেনা। 

তবে হ্যাঁ,যদি তাহাজ্জুদের ওয়াক্তেই আল্লাহর কাছে দোয়া শুরু করে,এমতাবস্থায় ফজরের ওয়াক্ত চলে আসে,আর সে আগের মতো গুরুত্বের সহিতই দোয়া চালিয়ে যায়, তাহলে আশা করা যায় যে মহান আল্লাহ তায়ালা সেই দোয়াও কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ ।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নে উল্লেখিত উক্ত নারী তার তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য নেক আমলের সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ। তবে পুত্রবধূদের সাথে অন্যায় আচরণের জন্য তাকে তার প্রাপ্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। এসম্পর্কে আরো জানুন: https://ifatwa.info/7222/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (55 points)
Uttor aro bistarito kore edit kore hujur prodan korechen.

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...