আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
91 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আলহামদু লিল্লাহ।
আমি জেনারেল লাইনে মাস্টার্স পাশ করেছি।জেনারেল জব করি না। করার ইচ্ছেও নেই।কওমী মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে পড়ছি। আবার কুরআন পড়াই। প্রায় ৫০০০-৮০০০/- হাদিয়া পাই।স্বামীর দীনচর্চা কিছুটা কম।আমার পড়া/পড়ানোর  ব্যাপারে স্বামীর সমর্থন আছে।তবে শ্বশুর চায় যেন আমি জেনারেল জব করি,বেশি বেতন পাই,ছেলের পাশাপাশি আমিও তাদেরকে খরচ দিই،যদিও তারা সচ্ছলই বলা যায়।শ্বশুর মাঝেমধ্যে এ ব্যাপারে বলে।তিনি যেদিন বলে সেদিন স্বামীও বলে বেশি বেতনের জব করতে,কম বেতনের জব ছেড়ে দিতে।এরপর আর কিছু বলে না।স্বামীর সাথে আমি ৩০০০ টাকা জমাই,এই উসিলায় যাতে উনি সন্তুষ্ট থাকেন, ভবিষ্যতে আবার বিগড়ে না যান।বাকি টাকা থেকে আমার নিজের কওমী পড়ার খরচ চালাই।সংসারের কোনো খরচই দিতে হয় না।স্বামী কখনোই আমাকে জিজ্ঞেস করেন না যে,কত হাদিয়া পাই,কোথায় খরচ করি ইত্যাদি।তবে উনি হয়তো ভাবেন যে,আমি আমার বাবার বাসায় দিই না কোনো টাকা,শুধু পড়াশুনাতেই খরচ করি।এ পর্যন্ত বেশি দেয়াও হয় নি।বাবার বাসায় প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস কিনে দিলে কিছু বলেন না।আবার খুব বেশি সন্তুষ্টিও দেখান না।একটু চুপচাপ থাকেন।

এখন আমার প্রশ্ন হলো,যদি নিয়মিত বা অনিয়মিত কিছু টাকা(২০০০)আমার বাবাকে দিতে চাই তাহলে স্বামীকে জানানো কতটা জরুরী?জানানো ওয়াজিব কিনা?আমি ফতোয়াতে দেখেছি স্ত্রীর সম্পদ স্বামীর অনুমতি ছাড়া খরচ করতে পারবে।কিন্তু প্রশ্ন হলো জানানোর ব্যাপারে।

কারণ,
আমার মনে হচ্ছে বাবাকে মাসিক টাকা দেয়ার কথা জানালে স্বামী হয়তো রাজি হবেন না অথবা প্রথমে খুশি মনে রাজি হলেও,২ মাস,৩ মাস বা ৬ মাস পরই এটা নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখাবেন।সমস্যা হতে পারে।এটার কারণ আমি জানি না।আমার স্বামীও বলতে পারবে না তার অসন্তুষ্টির কারণ কী।প্রায় সব স্বামীরা কেন যেন স্ত্রীর বাবার বাসায় খরচ পছন্দ করে না।অথচ এতে কোনো সমস্যা দেখতে পাই না আমি।

আবার মনে হচ্ছে,না জানালে কোনোদিন যদি জানতে পারেন,তাহলে না জানানোর জন্য অসন্তুষ্ট হয়ে রাগারাগি করতে পারেন অথবা কিছু অসন্তুষ্ট হলেও বেশি রাগারাগি করবেন না যেহেতু হাদিয়ার ব্যাপারে উনি খোঁজ খবর রাখেন নি বা আগ্রহ দেখান নি।

আমি চাই আমার সংসারে অশান্তি না হোক।তাই এত শঙ্কিত।আবার আমার ভাই একটাই,তাও কর্মক্ষম নয়। তার জন্ম থেকেই বুদ্ধিমত্তা অনেক কম।শারিরীক দুর্বলতাও রয়েছে।বিয়ে করেছে।একটা ছেলেও হয়েছে। আমার মাকে সহ বাবার পুত্র,পুত্রবধূ, নাতি-এদের খরচও বাবাকেই চালাতে হচ্ছে।আমার অল্প টাকা বাবার খুব বেশি উপকার করবে না।অন্তত ১০০০০ করে দিতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু আমার সাধ্যের মধ্যে আমি চেষ্টা করতে চাচ্ছি দীনি উপায়ে।
এক্ষেত্রে আমার কোনটা করা উচিত?

1 Answer

+1 vote
by (676,800 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

https://ifatwa.info/6603/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
পরিবারের জন্য খরচ করা,মা বাবার ভরনপোণের জন্য খরচ করা উত্তম কাজ।
মা বাবা নিজেদের ভরনপোষণের ক্ষেত্রে অসমর্থ হলে সন্তানদের জন্য তাদের ভরনপোষণের খরচ দেওয়া শুধু শরীয়তেই নয়  এটা মানবতার দিক লক্ষ্য করেও জরুরি।

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে।’ (মুসলিম : হাদিস ৯৯৪) 

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি : হাদিস ৪০০৬)

মা-বাবা  ভরণ-পোষণের অধিকারী হওয়ার জন্য শর্ত হলো দুটি।
★এক. তাঁরা এমন দরিদ্র হতে হবে যে তাঁরা নিজের মালিকানার সম্পদে চলতে অক্ষম। এখন কথা হলো, যদি তাঁরা উপার্জনের শক্তি রাখে, তাহলেও তাঁদের সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে হবে কি না? এ ক্ষেত্রে বিধান হলো, তাঁদের উপার্জনের শক্তি থাকলেও যদি তাঁদের কাছে চলার মতো নগদ টাকাকড়ি না থাকে, তাঁদের সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে হবে। তাদের সন্তানরা এ কথা বলতে পারবে না যে আপনি তো উপার্জনে সক্ষম, আপনি নিজে উপার্জন করে চলুন। তবে যদি তাঁরা ধনী হন, তথা তাঁদের মালিকানায় নগদ এমন সম্পত্তি থাকে, যা দ্বারা তাঁরা শান্তিতে কালাতিপাত করতে পারেন, তাহলে সন্তানদের ওপর তাঁদের ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়।

★দুই. সন্তান-সন্ততি সামর্থ্যবান ও উপার্জনে সক্ষম হতে হবে। তাদের সামর্থ্যবান হওয়ার পরিমাণ হলো, তাদের মালিকানার সম্পত্তি বা উপার্জনকৃত আয়ের দ্বারা নিজের ও নিজের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির স্বাভাবিক ভরণ-পোষণের পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের উপার্জনকৃত আয়ের মধ্য থেকে যদি তার নিজের ও স্ত্রী বা সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্পদ না থাকে, তাহলে মা-বাবা ও ঊর্ধ্বতন আত্মীয়ের ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণের খরচ চালিয়ে যাবে। (তাবঈনুল হাকায়েক : ৩/৬৪, রদ্দুল মুহতার : ২/৬৭৮)

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খরচের ব্যাপারে তুমি আগে নিজের প্রয়োজনীয় খরচের দায়িত্বশীল, তারপর তোমার স্ত্রীর, তারপর সামর্থ্য হলে তোমার নিকটাত্মীয়ের খরচ তোমার ওপর বর্তাবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৯৯৭)

সন্তান তার উপার্জনকৃত আয় থেকে নিজের, স্ত্রীর ও সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের পর অতিরিক্ত সম্পদ না থাকলে যদিও মা-বাবাকে ভিন্নভাবে ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু অভাবগ্রস্ত ও উপার্জনে অক্ষম মা-বাবাকে ছেলে নিজের দারিদ্র্য সত্ত্বেও নিজের সংসারের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে এবং কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণ চালিয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৪৬৫)

সমর্থ থাকা সত্ত্বেও সন্তানরা অভাবগ্রস্ত মা-বাবার খরচ না দিলে গুনাহগার হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানরা স্বেচ্ছায় না দিলে অভাবগ্রস্ত মাতা-পিতা ছেলে-মেয়ের সম্পদ থেকে প্রয়োজন পরিমাণ তাদের অনুমতি ছাড়াও নিতে পারবেন। তবে মা-বাবা বিত্তবান হলে অনুমতি ছাড়া ছেলে-মেয়ের সম্পদ থেকে নেওয়া বৈধ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫৬৪)

মা-বাবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব উপরোক্ত দুই শর্তে সব ছেলে-মেয়ের ওপর ওয়াজিব। এ দায়িত্ব সব সাবালক সামর্থ্যবান ছেলে-মেয়ের ওপর সমভাবে বর্তাবে। এ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, তাই কোনো মেয়ে যদি সামর্থ্যবান ও বিত্তবান হয়, তাহলে ছেলেদের মতো সমভাবে তার ওপরও মা-বাবার খরচের দায়িত্ব বর্তাবে। কেননা মা-বাবার জীবিত অবস্থায় সন্তানের জন্য খরচ ও উপহারে মেয়েরাও তাদের ভাইদের মতো সমঅধিকারী, তাই মা-বাবার খরচ বহনে তারাও সামর্থ্যের শর্তে তাদের ভাইদের সমদায়িত্বশীল হবে। ছেলে-মেয়ে না থাকলে তারপর সিরিয়াল আসবে নাতি-নাতনিদের। অতএব, তাদের ওপর সমভাবে এ দায়িত্ব বর্তাবে। (ফাতহুল কাদির : ৪/৪১৭)
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনার বাবা মা যেহেতু নিজের মালিকানার সম্পদে চলতে অক্ষম নয়। সুতরাং বাবা মাকে টাকা পাঠানো আবশ্যক নয়।
তদুপরি যদি পাঠান,সেক্ষেত্রে শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা নেই।
এটি বাবা মার প্রতি ইহসান তথা দয়া,অনুগ্রহ হবে।

আপনার টাকা আপনার বাবা মাকে পাঠাতে স্বামী সহ কাহারই অনুমতি লাগবেনা।
এ টাকার একচ্ছত্র মালিকানা আপনার রয়েছে।
আপনি বৈধ যেকোন খাতে তাহা ব্যয় করতে পারেন।

সুতরাং বাবা মাকে টাকা পাঠাতে পারবেন।

হ্যাঁ,বিষয়টি জেনে নেয়ার পর যদি সংসারে স্বামীর পক্ষ থেকে অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে,আর বাবা মাকে টাকা পাঠালে বিষয়টি স্বামীর জেনে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেক্ষেত্রে টাকা পাঠানোর বিষয়ে স্বামীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ থাকবে। 

তবে স্বামীকে না জানিয়ে বাবা মাকে টাকা পাঠালেও শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...