আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
329 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (0 points)
১/ওযুতে সিরিয়াল মেনে চলা কি ফরজ বা ওয়াজিব? ওযুতে যদি কেও ক্রম না মানে,তাহলে কি ওযু হবে?

২/দুইজন মানুষ জামাতের সাথে নামাজ পড়ছে(ইমাম বামে,মুক্তাদি ডানে একটু পিছনে)।এমন সময় যদি অন্য কেও এসে নামাজে যোগ দিতে চায় তাহলে কোথায় কি ভাবে দাঁড়াবে?

আগের মুক্তাদি কে কি পিছনের কাতারে চলে এসে নতুন মুক্তাদির পাশে দাড়াতে হবে?যদি তাই হয় তাহলে সে কখন পিছনে আসবে?

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি। জাযাকুমুল্লাহ...

1 Answer

0 votes
by (687,520 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
সুরা মায়েদার ০৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّہَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡہُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَہِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَہٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۶﴾

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ حُمْرَانَ بْنِ أَبَانَ مَوْلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ: رَأَيْتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ تَوَضَّأَ فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ ثَلَاثًا فَغَسَلَهُمَا، ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا، وَغَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا، ثُمَّ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ، ثُمَّ غَسَلَ قَدَمَهُ الْيُمْنَى ثَلَاثًا، ثُمَّ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ مِثْلَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ " مَنْ تَوَضَّأَ مِثْلَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ: غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " . - صحيح 

উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-এর মু্ক্তদাস হুমরান ইবনু আবান সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-কে অযু করতে দেখেছি। তিনি প্রথমে উভয় হাতে তিনবার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেন। এরপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, বাম হাতও অনুরূপ করলেন। এরপর মাথা মাসাহ্ করলেন। এরপর তিনবার ডান পা ধুলেন, বাম পাও অনুরূপ করলেন। সর্বশেষে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি আমার এই অযুর ন্যায় অযু করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার এই অযুর মত অযু করে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করবে, যাতে তার মনে কোনরূপ পার্থিব চিন্তা আসবে না, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।

বুখারী (অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ তিনবার করে উযু করা, হাঃ ১৫৯), মুসলিম (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ উযুর পদ্ধতি ও পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করা)

অযুর নিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 
,
★শরীয়তের বিধান হলোঃ  
অযুতে যে চারটি কাজ ফরজ,তার মধ্যে তরতিব তথা সিরিয়াল ঠিক রাখা সুন্নাত।
ফরজ অথবা শর্ত নয়।
কেহ সিরিয়াল ঠিক না রাখলেও অযু হয়ে যাবে।
,
তবে সিরিয়াল ঠিক না রাখা খেলাফে সুন্নাত মাকরুহ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী ১/২৯১ মাকতাবায়ে যাকারিয়া।)
,
وأما سنتہ ․․․ والترتیب المذکور في لفظ آیة الوضوء سنّة (کبیري، ص: ۲۰)
সারমর্ম আয়াতে উল্লেখিত অযুর অঙ্গ ধোয়ার সময় সিরিয়াল ঠিক রাখা সুন্নাত।    

والترتیب المذکور فی لفظ آیة الوضوء سنة، ولیس بفرض خلافاً للثلاثة؛ لأن العطف فیہا بالواو وإجماع أہل اللغة أنہا لمطلق الجمع لا نعرض فیہا للترتیب إلخ (کبیری، ۲۷) 
সারমর্মঃ আয়াতে উল্লেখিত অযুর অঙ্গ ধোয়ার সময় সিরিয়াল ঠিক রাখা সুন্নাত।    
এটি ফরজ নয়।
তবে অন্যান্য তিন ইমাম এক্ষত্রে মতবিরোধ করেছেন,,,।  
.
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
ওযুতে সিরিয়াল মেনে চলা ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
এটি সুন্নাত।
সুতরাং কেহ যদি ওযুতে ক্রম না মানে,তাহলে ওযু হয়ে যাবে।


(০২)

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,

صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِرَأْسِي مِنْ وَرَائِي، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى

একরাতে আমি নবী ﷺ–এর সঙ্গে নামায আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পেছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। তারপর নামায আদায় করলেন….। (বুখারী ৬৯০)

★সুতরাং একজন মুক্তাদি হলে ইমামের ডান দিকে সামান্য পিছনে এসে দাড়াবে।
,
মাসয়ালা হলোঃ
যদি দু'জন লোক, অর্থাৎ একজন ইমাম ও অনুসারী জামাতে নামায পড়ছেন, তবে যদি এখন তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত হন, যদি স্থান প্রশস্ত হয়, তবে ইমামের এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং উভয় অনুসারীর পিছনে দাঁড়ানো উচিত। 
,
যদি ইমামের সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোন জায়গা না থাকে বা ইমাম নতুন আগত মুক্তাদিকে না জানে এবং সে এগিয়ে না যায়, তবে প্রথম মুক্তাদির নিজেই পিছনে যেতে হবে। 

যাতে এ দু'জন মিলে ইমামের পেছনে একটি লাইন তৈরি করতে পারে।
,
মুক্তদি যদি পিছনে না যায় তবে তৃতীয় ব্যক্তি তাকে পিছনে টেনে নিয়ে যাবে, সে তাহরিমাকে বেঁধে রেখেছে বা তার পূর্বে।
,
,
আজকাল মানুষ সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতন নন। মাসয়ালা সম্পর্কেও সচেতন নন, সুতরাং, যদি সুযোগ  থাকে এবং ইমাম অনুমান করে যে অন্য অনুগামী (২য় মুক্তাদী) এসেছেন, তবে ইমামের নিজেরই এগিয়ে যাওয়া উচিত।

হ্যাঁ  যদি স্থানটিতে কোনও জায়গা না থাকে তবে উভয় অনুসারীই ইমামের যথাসম্ভব পিছনে দাঁড়াতে হবে।
,

দারুল ইফতা: জামিয়া উলূম ইসলামিয়া আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বিন নুরি  টাউন এর ফতোয়া নং: 144010200401 দ্রষ্টব্য।
,
★তবে একেবারে পিছনে গিয়ে যে কাতার বাধার কথা বলা হচ্ছে,এটি যদি না করা হয়,বরং ঐ ১ম মুক্তাদির মতোই এই ২য় মুক্তাদি যদি তার সাথেই দাড়ায়,বা ২য় মুক্তাদি ইমামের পিছনের কাতার দাড়ায়,আর ১ম মুক্তাদি আপন অবস্থাতেই থাকে পিছনে না আসে,
তাতেও নামাজের সমস্যা হবেনা। 
সকলের নামাজ হয়ে যাবে।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...