আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
76 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম
১/কোনো ব্যক্তি যদি খারাপ কাজের উদ্দেশ্য রওনা দেয় এবং জাওয়ার পথে যদি এমন ভাবে মৃত্যু বরন করে জেভাবে মৃত্যু হলে তাদেরকে শহীদদের অন্তর্ভুক্ত বা শহিদ বলা হয় তাহলে কি সেই ব্যক্তিও শহিদ হবে?

যেমন চোর যদি চুরি করতে জাওয়ার পথেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরন করে

কোনো মেয়ে যদি জিনা করতে জাওয়ার সময় রাস্তাতেই দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করে

২/আবার কোনো মেয়ে যদি বেগানা পুরুষের সাথে ঘুড়তে গিয়ে তার সাথে থাকা অবস্থাতেই দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করে তাহলে কি সে মেয়ে শহিদ হিসেবে গন্য হবে?

1 Answer

0 votes
by (676,760 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

জিহাদের ময়দানে আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের আঘাতে মারা গেলে তাকে শহিদ বলা হয়।

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ রত অবস্থায় কেহ মারা গেলে সেই প্রকৃত শহীদ।

তবে ইহা ছাড়াও আরো কিছু অবস্থা রয়েছে,যেই অবস্থায় মারা গেলে তারাও শহীদ। 
তবে এটা হুকমান শহিদ,তথা এরাও শহীদের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে,কিন্তু শহীদের দুনিয়াবি আহকাম (গোসল,কাফন ইত্যাদি  না করানোর বিধান) তাদের উপর জারী হবেনা।
রাসুল সাঃ বলেছেন যে মহামারীতে মারা গেলে সে শহীদ।

★শহিদ ২ প্রকার।
এক, হাকিকি তথা প্রকৃত শহীদ।
দুই, হুকমি শহীদ।
(বিস্তারিত উপরে উল্লেখ রয়েছে)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ-   

عن سعيد بن زيد عن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال : « من قتل دون ماله فهو شهيد ومن قتل دون أهله أو دون دمه أو دون دينه فهو شهيد

হযরত সাঈদ বিন যায়েদ থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি নিজ সম্পত্তি রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ পরিবার রক্ষায় নিহত হয় সেও শহীদ। অথবা প্রাণ রক্ষায় কিংবা দ্বীন রক্ষায় নিহত হয় সেও শহীদ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৭৭৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৫২)

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় যারা শহীদ হন তাদের বলা হয় শহীদ। এটা হল সত্যিকার শহীদ। রাসূল সাঃ কতিপয় ব্যক্তিকে হুকুমের দিক থেকে শহীদ বলেছেন। প্রকৃত শহীদ নয় বরং শহীদের কাছাকাছি মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। যেমন হাদীসে রয়েছে-

أن جابر بن عتيك أخبره :أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الشهداء سبعةسوى القتل في سبيل الله المطعون شهيد والغرق شهيد وصاحب ذات الجنب شهيد والمبطون شهيد والحرق شهيد والذي يموت تحت الهدم شهيد والمرأة تموت بجمع شهيد

হযরত জাবের বিন আতীক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে। 
১-মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
 ২-পানিতে নিমজ্জিত শহীদ। 
৩-শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ। 
৪-পেটের রোগ মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
 ৫-আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ।
 ৬-যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ। 
৭-সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। {মুয়াত্তা মালিক, হাদিস নং-৫৫৪, ৮০২, আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস নং-১৭৮০, সহীহ কুনুজু সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ, হাদিস নং-২৩}

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পেটের রোগে মারা গেলে শহীদ, প্লেগে মারা শহীদ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৩৩)

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় "(২৯/১৭৪) এ বর্ণিত রয়েছে,
" ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﻟﻠﻈﻠﻢ ﺃﺛﺮﺍً ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻘﺘﻮﻝ ﺑﺄﻧﻪ ﺷﻬﻴﺪ ، ﻭﻳُﻘﺼﺪ ﺑﻪ ﻏﻴﺮ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻟﻤﻌﺮﻛﺔ ﻣﻊ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ، ﻭﻣِﻦ ﺻﻮَﺭ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﻇﻠﻤﺎً : ﻗﺘﻴﻞ ﺍﻟﻠﺼﻮﺹ ، ﻭﺍﻟﺒﻐﺎﺓ ، ﻭﻗﻄَّﺎﻉ ﺍﻟﻄﺮﻕ ، ﺃﻭ ﻣَﻦ ﻗُﺘﻞ ﻣﺪﺍﻓﻌﺎً ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ، ﺃﻭ ﻣﺎﻟﻪ ، ﺃﻭ ﺩﻣﻪ ، ﺃﻭ ﺩِﻳﻨﻪ ، ﺃﻭ ﺃﻫﻠﻪ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ، ﺃﻭ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺬﻣﺔ ، ﺃﻭ ﻣَﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﻣﻈﻠﻤﺔ ، ﺃﻭ ﻣﺎﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻦ ﻭﻗﺪ ﺣﺒﺲ ﻇﻠﻤﺎً .
ﻭﺍﺧﺘﻠﻔﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﻋﺘﺒﺎﺭﻩ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻵﺧﺮﺓ ، ﺃﻭ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻓﻘﻂ ؟ .
ﻓﺬﻫﺐ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﻣَﻦ ﻗُﺘﻞ ﻇﻠﻤﺎً : ﻳُﻌﺘﺒﺮ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻓﻘﻂ ، ﻟﻪ ﺣﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻟﻤﻌﺮﻛﺔ ﻣﻊ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻓﻲ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ ، ﻭﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺣﻜﻤﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﻓﻴُﻐﺴَّﻞ ، ﻭﻳﺼﻠَّﻰ ﻋﻠﻴﻪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
জুমহুর ফুকাহায়ে কিরাম মনে করেন,জুলুম-নির্যাতনে নিহত ব্যক্তির ব্যপারে শহীদের হুকুম আরোপ করা হবে।তবে এ শহীদ সে শহীদ নয়, যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হবে।
কোন প্রকারের জুলুম-নির্যাতনে নিহত হলে তাকে মাধ্যমে শহীদ কাকে বলা যাবে?এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,চুরের হাতে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
ডাকাতের হাতে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
খেলাফত বিদ্রোহীর হাতে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
আত্মরক্ষার্তে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
নিজ মাল, দ্বীন, পরিবারবর্গ  বা মুসলমানদের অথবা (যিম্মিদের) আশ্রয়প্রার্থীদের  রক্ষার্তে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জেলে মারা গেলে সেও শহীদ।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

ইমাম নববী রাহ বলেন,
قَالَ الْعُلَمَاءُ الْمُرَادُ بِشَهَادَةِ هَؤُلَاءِ كُلِّهِمْ غَيْرِ الْمَقْتُولِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَنَّهُمْ يَكُونُ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ ثَوَابُ الشُّهَدَاءِ وَأَمَّا فِي الدُّنْيَا فَيُغَسَّلُونَ وَيُصَلَّى عَلَيْهِمْ وَقَدْ سَبَقَ فِي كِتَابِ الْإِيمَانِ بَيَانُ هَذَا وَأَنَّ الشُّهَدَاءَ ثَلَاثَةُ أَقْسَامٍ شَهِيدٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَهُوَ الْمَقْتُولُ فِي حَرْبِ الْكُفَّارِ وَشَهِيدٌ فِي الْآخِرَةِ دُونَ أَحْكَامِ الدُّنْيَا وَهُمْ هَؤُلَاءِ الْمَذْكُورُونَ هُنَا وَشَهِيدٌ فِي الدُّنْيَا دُونَ الْآخِرَةِ وَهُوَ مَنْ غَلَّ فِي الْغَنِيمَةِ أَوْ قُتِلَ مُدْبِرًا قَوْلُهُ
আল্লাহ রাস্তায় জিহাদ করে শাহাদত বরণ কারী ব্যতীত হাদীসে বর্ণিত অন্য সবের শাহাদত বরণের অর্থ হলো যে,তারা আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবে।কিন্তু দুনিয়াতে তাদের উপর শহীদের মর্যাদা প্রয়োগ হবে না বরং নিয়মতান্ত্রিক তাদেরকে গোসল দিয়ে জানাযা পড়ে তারপর তাদেরকে দাফন করা হবে।
শহীদ মূলত তিন প্রকার।যথাঃ-
(১)দুনিয়া-আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবে।ঐ ব্যক্তি যে কাফেরের সাথে যুদ্ধ করে করে যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেছে।
(২)আখেরাত হিসেবে শহীদ।তথা আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবে।কিন্তু দুনিয়া হিসেবে শহীদ হকে না তথা তাকে শহীদ বলে ডাকা যাবে না।বরং তাকে গোসল দিয়ে তার জানাযা পড়ে তাকে দাপন করা হবে।এরাই হল তারা যাদের আলোচনা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে যে,যারা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে বা আগুনে জ্বলে কিংবা পানিতে ডুবে মারা যাবে।
(৩)দুনিয়া হিসেবে শহীদ।অর্থাৎ যাদের ব্যাপারে শহীদের মর্যাদা পেশ করা হবে কিন্তু আখেরাতে তারা শহীদের মর্যাদা পাবে না।এরা হল,তারা যারা জিহাদ পরবর্তী গণিমতের মালকে আত্মস্বাৎ করেছে।বা জিহাদের ময়দার থেকে পলায়নপর অবস্থায় যার মৃত্যু হয়েছে। (আল-মিনহাজ্ব শরহে মিশকাত-১৩/৬৩)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

قال شيخ الإسلام : " وَأَمَّا إذَا كَانَ عَاصِيًا بِسَفَرِهِ ، كَقَطْعِ الطَّرِيقِ وَغَيْرِ ذَلِكَ ، فَهَلْ يَجُوزُ لَهُ التَّرَخُّصُ بِرُخَصِ السَّفَرِ كَالْفِطْرِ وَالْقَصْرِ؟ فِيهِ نِزَاعٌ.
فَمَذْهَبُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَد: أَنَّهُ لَا يَجُوزُ لَهُ الْقَصْرُ وَالْفِطْرُ ، وَمَذْهَبُ أَبِي حَنِيفَةَ يَجُوزُ لَهُ ذَلِكَ". انتهى من "مجموع الفتاوى" (18/ 254) .
সারমর্মঃ-
কেহ যদি গুনাহের সফর করে,যেমন ডাকাতি ইত্যাদি, সেক্ষেত্রে সফর অবস্থায় সে কসর করতে পার কিনা? রোযা ভেঙ্গে দিতে পারবে কিনা? সেই ব্যপারে ইখতিলাফ রয়েছে। 
ইমাম মালেক,শাফেয়ী, আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ এর মতে তার জন্য কসর ও রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজ নেই। তবে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মতে তার জন্য কসর ও রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজ আছে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(১.২)
প্রশ্নে উল্লেখিত উভয় ব্যাক্তি (হুকমী) শহীদ হিসেব গন্য হবে কিনা,সেই ব্যপারে মতবিরোধ রয়েছে। 
কেউ কেউ বলেছন যে সে শহীদ হবেনা।
কেউ কেউ বলেছেন যে সে হুকমান শহীদ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...